।। প্রথম কলকাতা ।।
মধ্যপ্রাচ্যের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাচ্ছে সুয়েজ খাল? এই শিপিং রুটের অতলে ঘাপটি মেরে বসে আছে কোন ভয়ঙ্কর সত্যি? একচুলও নড়ছে না জাহাজ, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রাণভোমরায় যুদ্ধের আঁচ। হামাস ইসরাইল সংঘাতের অভিশাপে তেল জমে বরফ, ছুঁতে পারবেননা কোনও জিনিস। জলের নীচে শোয়ানো অর্থনীতির মেরুদণ্ডে এতো বড় ধাক্কা? বাড়ছে টেনশন, মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট বাণিজ্য রুটেই লুকিয়ে আসল রহস্য। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত শিপিং রুটগুলোর মধ্যে সুয়েজ খাল, লোহিত সাগর, পার্সিয়ান গাল্ফ আর হরমুজ প্রণালীর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। আর ঠিক এই কারণেই ৭ই অক্টোবর শুরু হওয়া হামাস ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই অর্থনীতিবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। সুয়েজ অঞ্চল কিন্তু বিরাট রিস্কে আছে।
বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ১৫%, অপরিশোধিত জ্বালানির ৪৫%, পরিশোধিত জ্বালানির ৯%, এলএনজির ৮% শতাংশের বাণিজ্য হয় সুয়েজ খাল দিয়ে। গাজা থেকে শত শত মাইল দূরে হলেও হামাস ইসরায়েল সংঘাতে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে সুয়েজ খালে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলগামী জাহাজ লক্ষ্য করে। প্যালেস্টাইনের সমর্থনে এই পদক্ষেপ নিয়েছে ইয়েমেনের হুথি। আর তাই ১৫ ডিসেম্বরের পর পাঁচটি বড় কন্টেইনার শিপিং কোম্পানি লোহিত সাগরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে নেভাল কার্যক্রম জোরালো করেছে। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে তারা হুথির বিরুদ্ধে বিশেষ অপারেশন চালাতে পারে।
জাহাজে হামলার হুমকি, পণ্যবাহী জাহাজ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া আর ড্রোন অ্যাটাকের পর জাহাজ বিকল এবং ক্রুদের হতাহতের আশঙ্কায় চাপে পড়েছে শিপিং কোম্পানিগুলো। ১৫ ডিসেম্বর মারস্ক ও হ্যাপাগ-লয়েড তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর সার্ভিস বন্ধ করে সিএমএ সিজিএম ও এমসসি। বলা হয়েছে, লোহিত সাগর নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত তারা কার্যক্রম বন্ধ রাখবে। কিছু জাহাজকে কেপ অব গুড হোপ দিয়ে পরিচালনা করা হবে। জানিয়ে রাখি, সার্ভিস বন্ধ করা এই চারটি শিপিং কোম্পানি বিশ্বের কন্টেইনার বাণিজ্যের ৫৩% কন্ট্রোল করে। ফলে ছোট ছোট শিপিং কোম্পানিগুলো যেমন ড্রাই বাল্ক ও অয়েল ট্যাঙ্কারস ও তাদের অনুসরণ করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এই সুয়েজ খালের মাধ্যমেই লোহিত সাগর দিয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে জাহাজ চলাচল করে। এই সুয়েজ খাল দূরত্ব কমিয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে। অথচ সেই সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে তাৎপর্যপূর্ণ দুটি সমস্যা সামনে আসছে।
এক, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব। দুই, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি। মিশরের আয়ের অন্যতম উৎস সুয়েজ খাল থেকে রাজস্ব আয়। আগে থেকেই দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই পথে মাত্র পাঁচ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন করে, কিন্তু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বৈশ্বিক অর্থনীতি। কারণ এই পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে আফ্রিকার পথ দিয়ে দীর্ঘ পথ ঘুরে শিপিং কার্যক্রম চালাতে হবে। এত বেড়ে যাবে সময় ও খরচ দুটোই। মনে করিয়ে দিই ২০২১ সালে সুয়েজ খালে একটি জাহাজ ছয়দিন ধরে আটকে ছিল। এতেই ব্যাহত হয় বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা। সেক্ষেত্রে এবার কি ঘটবে? মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় এফেক্ট ফেলবে। এক্ষেত্রে জ্বালানি আর শিপিং রুট গুলো আছে চরম ঝুঁকিতে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে দেশগুলো মন্দার মুখে পড়ে গেছে তাদের অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ! ওপেক প্লাস দেশগুলোর কম তেল উত্তোলনের কারণে চাপে আছে জ্বালানির বাজার।এমনিতেই হামাসের হামলার পরই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দর বেড়ে যায়, এখনো সেটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আসেনি।
তার মধ্যে বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি তেল বাণিজ্যের রুটগুলো মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত হওয়ায় যুদ্ধের পরিসর বাড়তে থাকলে ব্যহত হবে জ্বালানি সরবরাহ। শুধু জ্বালানি নয়, এই সরবরাহ চ্যানেলগুলো ব্যাহত হলে অস্থির হবে অন্যান্য পণ্যের বাজারও। দাম বাড়বে জিনিসের। জ্বালানির দাম বাড়লে বিপদে পড়বে আমদানি কারক দেশগুলো, সমস্যায় পড়বে সাধারণ মানুষ। আর যখন এই অঞ্চলের অস্থিরতা বিশ্বে জ্বালানির বাজার আর বাণিজ্য অবকাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ঠিক তখনই হুথি বিদ্রোহীরা বিভিন্নভাবে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে তাদেরকে দমন করা শক্ত হবে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে শেষ করে দিতে চায়। গাজায় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ সচল না করা পর্যন্ত ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলা চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা। কিন্তু সম্প্রতি নির্বিচারে অর্থাৎ লোহিত সাগরের যেকোনো জাহাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে হুথি। এতে হুমকিতে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম