।।প্রথম কলকাতা।।
কেন পুজোর আগেই ভোগ খেয়েছিলেন সাধক বামাক্ষাপা? তারাপীঠ মহাশ্মশানের নিস্তব্ধতা এখনও রয়েছে।দেড় হাজার বছরেরও বেশি পুরনো মায়ের মন্দির? মহাপীঠের “তারা রাত্রি” কি জানেন? হিন্দু পুরাণে রয়েছে, শিবের রুদ্র তাণ্ডবের ফলে সতীর দেহের নানা অংশ বহু স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার থেকে ভারত জুড়ে বিভিন্ন সতীপীঠের জন্ম হয়েছে। তারাপীঠকেও ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম বলে মনে করা হয়। বাংলার অন্যতম সাধনপীঠ তারাপীঠ। মা তারা এখানকার আরাধ্যা দেবী। আর তারাপীঠের সঙ্গে যাঁর নাম আষ্টেপৃষ্টে জড়িত, তিনি বামাক্ষ্যাপা । জাগ্রত দেবীর মন্দিরের পিছনে রয়েছে হাজার বছর আগের অজানা কাহিনী।
সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পূর্ব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ। হিন্দু তান্ত্রিক বামাখ্যাপা মা তারার ভক্ত ছিলেন। মা তারাকে তিনি ‘বড় মা’ বলে ডাকতেন। ১২৭৪ বঙ্গাব্দে কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ মহাশ্মশানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বামাখ্যাপা। এদিন তিনি মায়ের আবির্ভাব পান। আরও শোনা যায় মা তারা ভয়ংকর বেশে বামাখ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন । পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন ।
বর্তমান মন্দিরের ইতিহাস প্রায় দুশো বছর হলেও তারাপীঠের ইতিহাস কিন্তু হাজার দেড়হাজার বছরেরও বেশি। কথিত আছে, জয়দত্ত সদাগরের বাণিজ্যে থেকে বিপুল ধনসম্পত্তি লাভ করে বাড়ি ফিরছিলেন। চলার পথে অসুস্থতায় মৃত্যু হয় তাঁর ছেলের।দেবী তারার অলৌকিক কৃপায় নাকি ব্যবসায়ীর সন্তান নতুন জীবন পায়। এরপর শ্বেতশিমুল গাছের নীচ থেকে
শিলাবিগ্রহ আবিষ্কার করেন জয়দত্ত।তাড়াতাড়ি মন্দির নির্মাণ করে সেই শিলামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মহুলা গ্রামের এক ব্রাহ্মণকে নিত্যপূজার দায়িত্ব দেন।
বামাক্ষ্যাপা নাকি তারাপীঠের মন্দিরের নিয়মকানুন কিছু মানতেন না। মন্দিরের অন্যান্য পান্ডারা তাঁকে খুব একটা পছন্দও করতেন না। শোনা যায়, একসময় সাধক বামাক্ষ্যাপাকে এই মন্দির থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছিল। ভোগ নিবেদনের আগে,সেটির স্বাদ কেমন বা সেটি নিবেদনের যোগ্য কিনা তা জানতে সাধক বামা নিজেই ।সেই ভোগ চেখে দেখেন তাতেই রাগে ক্ষেপে যান মন্দিরের অনান্য পণ্ডিতরা।তাঁরা বামাকে মারধর করে শ্মশানে ফেলে দিয়ে আসেন।সেই রাতেই দেবী নাটোরের মহারানিকে স্বপ্নাদেশ দেন বামাকে যেন মন্দিরে ফিরিয়ে এনে পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।কেউ কেউ বলেন, দেবীর সবচেয়ে প্রিয় দুই সন্তানের মধ্যে একজন হলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব আরেকজন বামাক্ষ্যাপা।
তারাপীঠে মন্দিরে সারা বছরই ভক্তদের ঢল নামে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। মহাপীঠ বলে পরিচিত এই মন্দির। কালীপুজোর বিশেষ দিনে মা তারাকে আমিষ পদ নিবেদন করা হয়ে থাকে।তবে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য শোল মাছ পোড়া। রাতে মন্দির চত্বরেই হয় মহাযজ্ঞ ও নিশিপুজোর আয়োজন। শুধুমাত্র মন্দিরের সেবায়েতরা এই মহাযজ্ঞে অংশ নেন।কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠ শ্মশানে চলে তন্ত্রমন্ত্রের বিশেষ যোগ্য। বৌদ্ধ ও হিন্দু তন্ত্রে এই দিনের এক বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। তন্ত্র মতে, এই রাতকে বলা হয় তারা রাত্রি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম