।। প্রথম কলকাতা ।।
Stingray Fish: সমুদ্রের তলদেশে তো আপনি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর কথা শুনেছেন। কেউ হয় খুব শান্ত প্রকৃতির, আবার কেউ আক্রমণাত্মক। পুরো সমুদ্র জুড়ে চালায় রাজত্ব। এই যে মাছটিকে দেখছেন শাপলা পাতার মতো দেখতে, একে বলা হয় শাপলা পাতা মাছ আবার কেউবা বলেন শংকর মাছ। আপনি কি নামে চেনেন? বা আপনার এলাকায় এই মাছকে কি বলে? সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। হিংস্রতা, ক্ষিপ্রতা বলুন কিংবা শিকার কৌশলে, বহু ডাঙার প্রানীকেও এরা টেক্কা দিতে পারে। সরাসরি এদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে ছোট শাপলা পাতা মাছ। এরা ভীষণ অলস। এতটাই অলস যে মাঝে মাঝে সাঁতার পর্যন্ত কাটতে চায় না।
ইংরেজি নাম স্টিংরে। বেঁচে থাকতে পারে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ বছর। এক একটার ওজন কয়েক মন পর্যন্ত হতে পারে। সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ৭৯০ পাউন্ড পর্যন্ত। রীতিমত দৈত্যাকার মাছ। সাগরের বুকে এত বড় মাছ খুব বেশি নেই। দেখতে কিন্তু আশ্চর্য। চোখ রয়েছে শরীরের সামনের দিকে। আর মুখ, নাকের ছিদ্র আর ফুলকা রয়েছে পেটের নিচে। চোখ এদের তীক্ষ্ণ। রয়েছে এক ধরনের বৈদ্যুতিক সেন্সর, যার ফলে শিকার কাছে এলেই খুব দ্রুত শিকারকে ঘায়েল করতে পারে। দাঁতও বেশ ধারালো, ছোট ছোট প্রাণীর খোলস, ঝিনুক ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া এদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়। চাবুকের মতো রয়েছে লেজ। যা সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। এই লেজই তাদের সুরক্ষা দেয়, কিন্তু বিষাক্ত। শাপলাপাতা মাছ লেজ দিয়ে কোন মানুষকে আঘাত করলে, বড় ক্ষত তৈরি হতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির শাপলা পাতা মাছ রয়েছে। ভারত বাংলাদেশে তো প্রায়ই চোখে পড়ে। বাংলাদেশে প্রায় ৫৬ প্রজাতির শাপলা পাতা মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ডিম নয়, এদের পেট থেকেই সরাসরি বেরিয়ে আসছে বাচ্চা মাছ। দেখে স্তন্যপায়ী প্রাণী মনে হলেও, মা শাপলা পাতা মাছ তার শরীরের মধ্যেই ডিম পাড়ে এবং সেখানে বাচ্চা বড় করে। যতদিন না বাইরের পরিবেশের সঙ্গে বাচ্চা মাছগুলো মানিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত হয়, ততদিন পর্যন্ত মায়ের পেট এদের নিরাপদ আশ্রয়। এদের বসবাস নাতিশীতোষ্ণ সমুদ্রের অগভীর জলে। সেখানেই তলদেশ ঘেঁষে ঘুরে বেড়ায়। দেখতে বিশাল আকার হলেও ভীষণ অলস। সমুদ্রের বালুর ক্ষুদ্র কণা গায়ে জমলেও চুপ করে থাকে। জোয়ারের সময় জোয়ারের সঙ্গে ভেসে বেড়ায়। বুঝতেই পারছেন এরা ঠিক কতটা কুঁড়ে।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/715743497414917/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
বাজারে শাপলা পাতা মাছের চামড়া অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর চামড়া দিয়ে তৈরি হয় জুতো ব্যাগ সহ বহু জিনিস। মাছটা যেমন খেতে সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। বর্তমানে এই মাছ প্রায় বিলুপ্তের পথে। শাপলা পাতা মাছ সাগরের গভীরে ঘুরে বেড়ালেও, বংশবিস্তারের সময় তীরের কাছাকাছি চলে আসে। তারপর আটকে পড়ে জেলেদের লোভের জালে। অথচ সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার এই মাছকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশে তো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, এই মাছ ধরা এবং বিক্রি নিষিদ্ধ।