।। প্রথম কলকাতা ।।
United states: প্রচন্ড গরমে গলে গেল আব্রাহাম লিঙ্কনের মোমের মূর্তি। জলবায়ু যে সত্যিই বদলাচ্ছে তা এবার মানছে আমেরিকাও। ছয় ফুট লম্বা মোমের এই বিখ্যাত মূর্তির অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছেনা। গরমের চোটে পালটে গেছে মূর্তির আদল। গলে গলে পড়ছে মূর্তির বিভিন্ন অংশ। ভয়ঙ্কর হিটওয়েভ গোটা আমেরিকা জুড়ে। তীব্র গরমে কাবু আমেরিকার বহু দেশ।
আপনি যদি ভাবছেন, তীব্র গরমে কেবল বাংলাই হাঁসফাঁস করছে, তাহলে একেবারেই ভুল। আমাদের দেশ তো বটেই, সাথে গোটা বিশ্বই এই হিট ওয়েভের সামনা করছে। শীত প্রধান দেশগুলিতেও অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ওয়াশিংটন ডিসির অবস্থা এমন যে, ইতিমধ্যেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের বিখ্যাত মোমের মূর্তিটি গলতে শুরু করেছে। হ্যাঁ, গরমের চোটে ৬ ফুটের মোমের মূর্তি হু হু করে গলছে। লিঙ্কনের মূর্তির ওই অবস্থা হওয়ায় স্তম্ভিত সকলেই।
এই মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন শিল্পী স্যান্ডি উইলিয়ামস। শিল্পীর ‘দ্য ওয়াক্স মনুমেন্ট সিরিজ’র একটি অংশ এই মূর্তি। মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল উত্তর-পশ্চিম ওয়াশিংটনের গ্যারিসন এলিমেন্টারি স্কুলের মাঠে। এককালে এই এলাকা সেদেশের গৃহযুদ্ধের রিফিউজি ক্যাম্প এলাগুলির মধ্যে ছিল অন্যতম। যাতে গ্রীষ্মকালেও এই মূর্তির কোনও ক্ষতি না হয়, সেই কারণেই গাছের নিচে স্থাপন করা হয়েছিল এটি। কিন্তু ২০২৪ এর গরম কোনও বাধাই মানলো না। একটানা গরম বজায় থাকার কারণে জাস্ট গলে গেল একটা আস্ত মোমের মূর্তি।
মূর্তিটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মাথার দিকটা। মূর্তির পায়ের দিকটাও নাকি অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষ করে মূর্তির ডান দিকের পায়ের অংশটা তো প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি যে চেয়ারটিতে বসে আছেন সেটিও হু হু করে গলতে শুরু করেছে। এমন মহান এক নেতার মূর্তির এই হাল দেখে মন খারাপ সকলেরই। দেশের প্রতি তাঁর অবদান তো নেহাত কম নয়।
মার্কিন মুলুকের ১৬ তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। তাঁর নেতৃত্বেই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল বহু মানুষ। তাঁর নেতৃত্বেই উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আধুনিকীকরণে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে আব্রাহাম লিঙ্কনের। অথচ মজার বিষয় হল, এই মহান মানুষটির কিন্তু কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই ছিল না। বন্ধুদের পুরনো বই নিয়েই চলত তার পড়াশোনা। কখনও কখনও মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে যেতেন কেবল মাত্র একটা বই আনার জন্য। তাহলেই ভাবুন তাঁর শেখার চেষ্টা কতটা ছিল।
সেই মানুষটির মূর্তি দেখে উদ্ভুত হত ওয়াশিংটনের গ্যারিসন এলিমেন্টারি স্কুলের ছোট ছোট পড়ুয়ারাও। তবে খুব সম্ভবত মূর্তিটিকে আর ঐ স্কুলের মাঠে রাখা হবেনা। ইকোনমিক টাইমসের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এই মূর্তিটিকে নাকি আর রিপেয়ার করতে চাইছেনা সংস্থাটি। বরং গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই মূর্তিটিকে স্কুলের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।
আব্রাহাম লিঙ্কনের শৈশবটাও যে খুব একটা সুখকর ছিল তা তো নয়। আইন নিয়ে পড়ার আগ্রহ থাকলেও কোথাও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। অনেক চেষ্টার পর ইলিনয় বারে আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। রাজনীতিতে আসেন ১৮৪৬ সালে। ইলিনয়ের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। তবে মাঝে রাজনীতি থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু আব্রাহাম লিঙ্কনকে তো রাজনীতিতে ফিরে আসতেই হত। নাহলে ইতিহাস কিভাবে তৈরি করতেন তিনি? ১৮৫৪ সালে ডেমোক্রেটিক দল যখন প্রেইরি ল্যান্ডে দাসপ্রথা চালু করে, তখন আর দূরে থাকতে পারলেন না।
ছোট থেকে অন্যায় অত্যাচারটা বড় সামনে থেকে দেখেছিলেন। তাই দাসপ্রথার তীব্র বিরোধ গড়ে তোলেন তিনি। এরপর ১৮৫৬ সালেই তিনি নাম লেখান রিপাবলিকান দলে। ১৮৬০ সালে বেশকিছু প্রভাবশালী নেতৃত্ত্বদের টেক্কা দিয়ে দেশটির ১৬ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন আব্রাহাম লিঙ্কন। এরপর ১৮৬৩ সালে গড়েন ইতিহাস। এককথায় দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। এটিই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে নেওয়া সবথেকে বড় পদক্ষেপ। সেইদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন তিনি।
আর এই মহান মানুষটির স্মৃতির উদ্দেশ্যেই এই মোমের মূর্তি তৈরি করেছিল Cultural DC নামক এক সংস্থা। তবে এখন গরমের চোটে সেটাও নষ্ট প্রায়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যে ওয়াশিংটন ডিসিতে এখন তাপমাত্রা কত? তাহলে উত্তর হল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি। এবার মনে হতেই পারে যে, মাত্র ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই কীভাবে একটা মূর্তি গলে যেতে পারে? যেখানে নির্মাণকারী সংস্থা Cultural DC-র দাবি ছিল, এই মূর্তি ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি তাপমাত্রা সহ্য করে নিতে পারে। উত্তরটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বলা হচ্ছে, টানা হিটওয়েভ এবং বাতাসের আর্দ্রতা কারণেই ঘটেছে এই ঘটনা। এছাড়া মোম দিয়ে মূর্তিটি বানানোর সিদ্ধান্ত আদৌ সঠিক ছিল কি না,সেটা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তবে একটা উত্তর বেশ পরিষ্কার যে, পৃথিবীর জলবায়ুর অবস্থা কিন্তু খুব একটা ভালো নয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম