।। প্রথম কলকাতা ।।
Dollar Crisis in Bangladesh: ডলার সংকটে জেরবার বাংলাদেশ! সব খাতেই গভীর ক্ষত। তাহলে কি যুদ্ধের ধাক্কা দেশটা সামলাতে পারল না? আমদানিতে বড় পদক্ষেপ নেওয়ায় এ যাত্রায় বেঁচে গেল। মূল্যস্ফীতির জ্বালায় অস্থির গোটা দক্ষিণ এশিয়া। কিন্তু ভারত নিজেকে ঠিক সামলে নিয়েছে। ধরে রেখেছে রিজার্ভের পরিমাণ। এই সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক কোথায়? অন্যান্য দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না?
ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ওলটপালট করে দিয়েছে ভূ-রাজনৈতিক ছক। আগুন জ্বালিয়েছে গোটা বিশ্ববাজারে। মুখ থুবড়ে পড়েছে, এশীয় দেশের শিল্প উৎপাদন। প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে ডলার সংকটের সাথে। বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে আছে এই সংকট। বাংলাদেশকে লড়তে হচ্ছে চরম মূল্যস্ফীতি আর বিদ্যুত ঘাটতির সঙ্গে। আগের তুলনায় এখন কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম অনেকটা কম। দেশটার মাসিক আমদানি প্রায় ৮৫০ কোটি ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যে। কিন্তু কিছুতেই কমছে না ডলারের দাম। তবে ভাববেন না, এ লড়াই বাংলাদেশের একার নয়। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মূল্যস্ফীতির শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটা এই হার ৩৮ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলেছে। গত এপ্রিলে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৩৪ শতাংশ, কিন্তু মে মাসে তা হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৯৪ শতাংশ। বাংলাদেশের লক্ষ্য এই হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা। একই ভাবে নেপালের মুদ্রাস্ফীতির হার ৭.৭৬ শতাংশ। কিন্তু টার্গেট রেখেছে ৭ শতাংশে। মালদ্বীপের টার্গেট ৪ শতাংশ আর ভুটানের টার্গেট ৩.১৫ শতাংশ। সমান ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ভারতও। বর্তমানে ভারতের মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৬ শতাংশ। ভারতের টার্গেট, মূল্যস্ফীতিকে কোনো ভাবেই ৬ শতাংশের বেশি হতে দেওয়া যাবে না।
ভারত সহ ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সব থেকে বেশি। আপাতত জমানো রিজার্ভ দিয়ে ভারত প্রায় ১০.৪১ মাসের আমদানি ব্যায় অনায়াসে মেটাতে পারবে। ভুটানের কাছে আছে ৯. ৯ মাসের আমদানি ব্যয়ের রিজার্ভ। নেপালের কাছে ৮.৯ মাসের আর বাংলাদেশের কাছে মাত্র ৫ মাসের আমদানি রিজার্ভ। এর থেকেও অবস্থা খারাপ শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের। শ্রীলঙ্কার কাছে ১.৮২ মাসের আর পাকিস্তানের কাছে ০.৭২ মাসের আমদানি রিজার্ভ রয়েছে।
ডলার সংকটের জেরে বাংলাদেশের আমদানি থেকে শুরু করে রপ্তানি, সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব। ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী ভিতগুলো। আমদানি কমায় পণ্যের উৎপাদন আর বিক্রির পরিমাণ কমেছে। টান পড়ছে সরকারের রাজস্ব কোষাগারে। ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশ সরকার বাধ্য হচ্ছে ঋণ নিতে। চলতি অর্থবছর ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ, যার বড় অংশ নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বর্তমানে দেশটার স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার কোটি ডলার। এই টাকা শোধ করতে হচ্ছে চড়া সুদে, যার ব্যাপক চাপ পড়ছে রিজার্ভের উপর। স্বাভাবিকভাবেই আমদানি আর অন্যান্য খরচ মেটানোর পর আর কি হাতে ডলার থাকা সম্ভব? সমস্যার সূত্রপাত, করোনার আগে থেকেই। করোনার সময় প্রবাসীদের আয় ছাড়া মোটামুটি সব খাতেই সংকট দেখা দেয়। এর পরেই শুরু হয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এমত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করায়, পণ্যের দাম বাড়ছে দেশের খুচরো বাজারে। তবে বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছে দেশটা। বাংলাদেশের অবস্থা কখনোই শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তানের মত হবে না। সেটুকু জোর এখনো আছে। যুগান্তরের রিপোর্ট বলছে, আগাম সর্তকতা নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় আমদানি নিয়ন্ত্রণে। তাই এখনও পর্যন্ত সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেনি।