।। প্রথম কলকাতা ।।
Ebrahim Raisi: ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু নিয়ে প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। রাইসির সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল? দুর্ঘটনা নাকি নেপথ্যে ছিল শত্রু দেশের বড় কোন ছক? যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অস্ত্রেই আজ ইরানের করুণ হাল, কাঁদছে সবাই। আদৌ কি রাইসির মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা যায়? এত শত্রুতার পরেও কেন ইরানকে ব্যবহার করতে হচ্ছে মার্কিনী উড়ো যান? রাশিয়ার হাত বাঁধা, বন্ধুরাষ্ট্র হয়েও ইরানের জন্য কিছুই করতে পারল না। ইরানের মানুষ হারাল তাদের প্রেসিডেন্টকে। পুরনো হেলিকপ্টারে চাপাটাই বড় ভুল ছিল রাইসির।
রিপোর্টে ফাঁস আসল কারণ, ষড়যন্ত্র থাকলে পাল্টে যাবে বিশ্বের মানচিত্র!
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর থেকেই, তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান জল্পনা। কেউ বলছে, এটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা। আবার কেউবা বলছে, রীতিমত প্ল্যান করে ইব্রাহিম রায় রাইসিকে টার্গেট করা হয়েছিল। নেপথ্যে থাকতে পারে, ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোন ষড়যন্ত্র। আবার কেউ কেউ রাইসির মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে ইরানের অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভকে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে থাকাকালীন এই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে, সেহেতু তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণেই নাকি রাইসির এমন করুণ পরিণতি। জল্পনা বলুন আর সংশয়, এগুলো ঠিক কতটা সত্যি? ইব্রাহিম রাইসি কীভাবে মারা গিয়েছেন, সামনে চলে এলো সেই তথ্যটা। যদিও এখনো তদন্ত থেমে নেই। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ সামনে এনেছে একটা রিপোর্ট। যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কারণ। দুর্ঘটনার পর ওই স্থলে পৌঁছেছিল ইরানের বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে গঠিত একটা সিনিয়র তদন্ত কমিটি। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, রাইসির হেলিকপ্টারটি নাকি পূর্ব নির্ধারিত গতিপথেই ছিল। ফ্লাইট রুট থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয়নি। দুর্ঘটনার প্রায় দেড় মিনিট আগে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের পাইলট বাকি দুই হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন। যদিও বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষে এমন কোন বুলেট বা এমন কোন সংকেতিক চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সেটি গুলি করে নামানো হয়েছিল।
হেলিকপ্টারের পাইলট দূর্ঘটনার আগে পর্যন্ত, অন্য দুই হেলিকপ্টারের সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পাহাড় আর পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনা থেকে এমন কোন এমন কিছু পাওয়া যায়নি, যা থেকে বোঝা যায় যে এখানে কোন ষড়যন্ত্র ছিল। তবে হ্যাঁ, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওই কমিটি আরও সময় নিয়েছে। মানে, এখনএই রিপোর্ট যা দাবি করছে, তা কিন্তু চূড়ান্ত নয়। রাইসির মৃত্যুর কারণ নিয়ে জোরকদমে চলছে তদন্ত। আইএসএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাইসি এবং অন্যান্যদের মৃত্যুর পর পরই ইরানের চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি দুর্ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তৈরি করেন একটা উচ্চ মানের কমিটি, যা তিন দিনের মধ্যে রিপোর্টটি তৈরি করেছে। এই দুর্ঘটনার পিছনে যে ষড়যন্ত্র নেই, ইরান তা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে জানায়নি। কিন্তু একবার যদি এখানে ষড়যন্ত্রের লেশমাত্র পাওয়া যায়, তাহলে বড়সড় যুদ্ধ বাঁধতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। কারণ রাইসির মৃত্যুর পর থেকেই, ইরান সহ অন্যান্য দেশে অবস্থিত তাদের প্রক্সি গ্রুপ কিংবা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর সঙ্গে কোন ষড়যন্ত্র জড়িত থাকলে তারা বিশ্বের মানচিত্র বদলে দেবে। অভিযোগের আঙুল তুলছে ইসরায়েলের দিকে। যদিও ইসরায়েল প্রথম থেকেই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই দুর্ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা অস্ত্রের কোপ রাইসির উপর! রিস্ক জোনে ইরান
রাইসির মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে বারংবার চলে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। এই নিয়ে গোটা আন্তর্জাতিক মহলে কম সমালোচনা চলছে না। প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ঘুর পথে ঘটে গেছে এত বড় দুর্ঘটনা। অন্যতম কারণ, মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা অস্ত্র। যে অস্ত্রের দ্বারা যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে নিজের অধীনে কাবু করে রাখতে চায়, দমিয়ে রাখতে চায়। একইভাবে চেয়েছিল ইরানের ক্ষেত্রেও। তাহলে কি, সেই নিষেধাজ্ঞা অস্ত্রের মারাত্মক কোপ টা গিয়ে পড়ল ইব্রাহিম রাইসির উপর? আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইরানকে দশ শতাংশের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত কিংবা পরিকল্পিত যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মিত কোন বিমান বা বিমানের সরঞ্জাম কিনতে বাধা দেয়। একইভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। অথচ বৈশ্বিক বিমান উৎপাদনের সিংহভাগই অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে। যার জেরে ইরান খুব সহজে পশ্চিমা বিমান ক্রয় করতে পারেনা। শুধু তাই নয়, পুরনো বহর বজায় রাখার জন্য যে প্রয়োজনীয় খুচরো যন্ত্রাংশের প্রয়োজন, সেগুলিও কিনতে পারেনা। বিষয়টা এখানেই সীমাবদ্ধ নেই, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকার কারণে, বিমান মেরামত কিংবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে উপযুক্ত প্রযুক্তির প্রয়োজন, তা পেতেও বেশ সমস্যায় পড়তে হয় ইরানকে। রাশিয়া সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বেশ ভালো।
কিন্তু বহু রাশিয়ান বিমানকে নির্ভর করতে হয় মার্কিন যন্ত্রাংশের উপর। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স এবং সেন্সরের ক্ষেত্রে মার্কিন যন্ত্রাংশ দরকার। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়, রাশিয়া নিজেই বিমান এবং খুচরো যন্ত্রাংশ কিনতে নানান বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে ইরান ব্যবহার করে প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি পুরনো বিমান গুলো। স্বাভাবিকভাবেই, এখানে ছিল একটা বড় রিস্ক জোন। কারণ বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একটি বিমানের বয়স এবং ওই বিমানটি এই নির্দিষ্ট বয়স অতিক্রম করার পর তার নিরাপত্তা আর নির্ভরযোগ্যতার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কোন উড়োযানের বয়স যখন কুড়ি বছরের বেশি হয়ে যায়, তখন তার সঙ্গে দুর্ঘটনার হারের বৃদ্ধির একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ইউএস ভিত্তিক এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্ক অনুযায়ী, ১৯৭৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ইরানে ঘটেছে প্রায় ১০৯ টি বিমান দুর্ঘটনা। সেক্ষেত্রে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেন, ওই একই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৪২ টি। আর তাই ইরানের বহু মিত্র দেশের কূটনৈতিক মহল, ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় দোষারোপ করছে যুক্তরাষ্ট্রকে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণেই কিন্তু নতুন বিমান আমদানি না করতে পারায়, বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইরানের বিমান চলাচল খাত। ১৯৮০, ১৯৯০ এবং ২০০০ দশকের গোড়ার দিকে, মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল ইরানের পুরনো বিমানগুলো। তাই ইরানি বিপ্লবের আগে কেনা সেই তৃতীয় আর চতুর্থ প্রজন্মের বিমান দিয়েই পরিচালনা করতে হয় তাদের বিমান বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার রাইসির জন্য কতটা নিরাপদ ছিল?
রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টারটি ছিল বেল ২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওই হেলিকপ্টার নাকি তেহেরান কিনেছিল সেই ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের আগে। হিসাব করলে, হেলিকপ্টারটা অনেকটা পুরনো। ইরানে এমন দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও ইরান এই মডেলের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। আর তাই হয়তো ইরানের অন্দরে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার নিয়ে উঠেছে প্রশ্নের ঝড়। রাইসি জি মডেলের হেলিকপ্টারে গিয়েছিলেন, ১৯৬৮ সালে সামরিক কাজের ব্যবহারের জন্য ওই মডেলের হেলিকপ্টারটি প্রথমে আকাশে ওড়ে। এটা তৈরি শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থে। তারপরে কুড়ি বছর পর কারখানাটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কানাডায়। ১৯৮৮ থেকে এই মডেলের হেলিকপ্টার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আসলে এর নিরাপত্তা নিয়ে বহু দিন আগে থেকেই ছিল উদ্বেগ।
কারণ ২০২১ সালে কানাডা জানিয়ে দেয়, বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টার তারা ব্যবহার করবে না। তদন্ত করে সামনে আসে, এই হেলিকপ্টার উড্ডয়নের সময় নানান যান্ত্রিক ত্রুটি। তারপরেই এমন সিদ্ধান্ত নেয় কানাডা। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শাহের পতন ঘটার পর থেকে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, উড়োজাহাজ এগুলো ব্যবহার করে আসছে। যার মধ্যে এখনো অনেকগুলো রয়ে গিয়েছে ইরানের বহরে। কিন্তু মূল সমস্যাটা কি বলুন তো, ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের উপর এসেছে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা। আর এই সেই নিষেধাজ্ঞার কারণেই ইরান অত সহজে এই সমস্ত উড়োযান মেরামতের যন্ত্রাংশ কিনতে পারেনি। রাইসির বহনকারী ওই বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি ছিল প্রায় ৪৫ বছরের পুরনো। ইরানের সামরিক বাহিনীতে এই ধরনের হেলিকপ্টার রয়েছে প্রায় দশটি। যদিও এক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেই দিয়েছেন, ইরানের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে ওয়াশিংটনের কোন যোগ নেই। এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী ইরান সরকার। কারণ তারা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ৪৫ বছরের পুরনো হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
আর ঠিক এই পয়েন্টেই ইরানের অন্দরে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ক্ষোভ। ইরানের মানুষের একাংশের মতে, কেন ইরান সরকার পুরনো মার্কিন হেলিকপ্টার বাদ দিয়ে রাশিয়ার হেলিকপ্টার ব্যবহার করল না। কোথাও গিয়ে, ইরান সরকার পিঠ বাঁচাতে নিষেধাজ্ঞার দোহাই দিচ্ছে না তো? কারণ বেল ২১২ এর মতো পুরনো হেলিকপ্টারে করে তাদের প্রেসিডেন্টকে সফর করতে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম