।। প্রথম কলকাতা ।।
ছোটবেলায় বই-খাতা কেনার সামর্থ্য ছিল না অন্যের থেকে চেয়ে নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অভাবের যন্ত্রণা বোঝেন খুব ভালো করেই। তাই দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য নিজের সব উজার করে দেন বাংলার এই ছেলে। আপনি প্রতিদিন ভাবেন আপনার মতো কষ্টে আর কেউ নেই? তাহলে এই ছেলেমেয়ের মুখগুলো ভালো করে দেখবেন যাদের হাসিতেই বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পেয়েছেন দীপনারায়ণ রাস্তার শিক্ষক নামে তাঁকে চিনছে গোটা বিশ্ব। বাংলার মুখ আলো করতে প্যারিসে যাচ্ছেন। বিদেশের মাটিতে বাংলাকে কীভাবে তুলে ধরবেন? দীপনারায়ণ নায়ককে জানুন ভালো করে। এই মানুষটির কাজ দেখলে আপনিও বলবেন এ যেন সাক্ষাৎ ভগবান। এভাবেও ভাবা যায়!
ছোটবেলা থেকে পাঁচ ভাই-বোনের সংসারে অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী দীপনারায়ণের। বাবা দিনমজুরি করতেন। পড়ার বই-খাতা কেনার সামর্থ্য না থাকায় অন্যের থেকে চেয়ে নিতেন। এমবিএতে ভর্তি হয়েও টাকার অভাবে পড়া ছেড়ে দেন। ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনা হয়নি বেশিদূর। তাই টাকার অভাবে অভাবী ঘরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা যাতে না আটকে থাকে তার ব্যবস্থা করলেন দীপনারায়ণ। কিন্তু সবার আগে তো নিজের টাকার প্রয়োজন। দীপনারায়ণ বুঝতে পারেন যে ভাবে হোক একটি চাকরি জোটাতে হবে তাঁকে। ২০১০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি পান। আসানসোলের এই ছেলে ছাত্র-ছাত্রীদের সিংহভাগই আদীবাসী। তারা যা-ও বা স্কুলে আসে পড়াশোনায় একেবারে মন নেই। আসলে পেটে খাবার না থাকলে কী আর পড়াশোনায় মন বসে। হাল না ছেড়ে ছুটির দিনে স্কুলের বাইরে পড়ানো শুরু করেন দীপনারায়ণ। ছুটে বেড়ালেন গ্রামের পর গ্রাম।
দীপনারায়ের আসল লড়াই শুরু হল করোনার সময়ে।বিভিন্ন স্কুলে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছিল। জামুরিয়ার ওই প্রত্যন্ত এলাকায় তার ব্যবস্থা কীভাবে করবনে! তাবলে পড়াশোনা থেমে থাকেনি। ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ড হয়ে ওঠে মাটির বাড়ির দেওয়াল। রাস্তায় বসেই দূরত্ব বিধি মেনে পড়ুয়াদের পড়াতে থাকেন দীপনারায়ণ। বেঞ্চে নয়, রাস্তায় বসেই চলত পড়াশোনা। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় পড়াশোনা চলত। সন্ধ্যা নামলে ভরসা ছিল মোমবাতির আলো। সেভাবেই ক্লাস নিতেন দীপনারায়ণবাবু। পড়াতে গিয়ে বোঝেন পড়ুয়াদের বাড়িতেও শিক্ষার আলো পৌঁছনো দরকার। ক্লাস নিতে শুরু করেন পড়ুয়াদের বাড়ির সদস্যদেরও। নাম হয় রাস্তার স্কুল। যেখানেই দেওয়াল আছে, সেখানেই রাস্তা আছে। দীপনারায়ণের মুখে শোনা এই স্লোগান ছড়িয়ে পড়তে থাকে গ্রামে গ্রামে।
২০২০ সালের মেতে রাস্তার স্কুল খোলার সময় পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ। এরপর আগ্রহ বাড়তে দরিদ্র আদিবাসী পড়ুয়াদের। ২০২১ সালের শেষের দিকে পড়ুয়ার সংখ্যা ঠেকেছিল ১,০০০-র কাছে। এতো কষ্ট করার ফল দীপনারায়ণ পেলেন। পৃথিবীর ১৩০টি দেশের মধ্যে ইউনেস্কোর সেরা শিক্ষকের তালিকায় ফাইনাল রাউন্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন মোট ১০ জন। তারমধ্যে রয়েছেন আসানসোলের ছেলে দীপনারায়ণ নায়ক। ভারতীয়দের আশা বিশ্বের ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিদের ছাপিয়ে বিশ্বের সেরা শিক্ষকের পুরস্কার পাবেন দীপনারায়ণই। এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার মূল্য। ৫ তারিখ ফ্রান্সে পৌঁছবেন দীপনারায়ণ। দীপনারায়ণ ঠিক করেছিলেন স্কুলটাকেই তিনি তুলে নিয়ে যাবেন বাড়িতে বাড়িতে। যাঁরা কখনও স্কুলের গণ্ডির ধারে-কাছে যাননি, তাঁরাও চলে এলেন দেওয়ালের ব্ল্যাকবোর্ডে ক্লাস করতে। পুরস্কার জিতবেন কিনা জানা নেই। কিন্তু দীপনারায়ণের মতো এই স্বীকৃতিই বা কজন পায়। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তরও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম