।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Saudi Arabia: এবার মধ্যপ্রাচ্যের দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে চলেছে পশ্চিমা বিশ্ব। দলাদলিটা তাহলে শুরু হয়েই গেল। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, তো একদিকে চীন। ওয়াশিংটন যখন মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশকে হাতে রাখতে চাইছে, তখনই সেই মধ্যপ্রাচ্যে আবার একদল দেশ হাত মেলাচ্ছে চীনের সঙ্গে। চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্র? মধ্যপ্রাচ্যে কার রাজত্ব চলবে? এটাই এখন একটা ভাইটাল প্রশ্ন। হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে কেন? এর থেকে বড় ফায়দা পেয়ে যাবে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যে থেকেও অন্যান্য দেশের থেকে আলাদা সৌদি, কারণটা কী? সৌদি যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একবার হাত মেলায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো চাপে পড়তে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। আর ঠিক এটাই কি চাইছিলেন জো বাইডেন?
ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের পর ইসরায়েল হামাসের সংঘাতে জড়িয়ে, বারংবার নানান বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে অবস্থান নিয়ে উঠেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাব হারাতে পারে দেশটা। সেই ভয়েই হয়ত যুক্তরাষ্ট্র এবার খেলছে একটু ঘুর পথে। হাতে রাখতে চাইছে সৌদি আরবকে। আবার ওদিকে মাস্টার গেম খেলছে চীন। চীন আর যুক্তরাষ্ট্র দুই শক্তিধর রাষ্ট্র ইসরায়েল ইরান আর হামাসের মধ্যে হওয়ার সংঘাতে কোনো ফায়দা লুটতে চাইছে না তো?
সৌদি আরবকে কাছে টানছে যুক্তরাষ্ট্র, নেপথ্যে বড় স্বার্থ
এত প্রশ্ন উঠতই না, যদি না হঠাৎ করে বেইজিং আর ওয়াশিংটন তাদের কূটনৈতিক চালে এত বড়সড় পরিবর্তন আনত। যে সৌদি আরবের উপর যুক্তরাষ্ট্র প্রাণঘাতী অস্ত্রের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, সেই যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। ইয়েমেনে বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যায় নাকি সৌদি আরব ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র। সেই উদ্বেগ থেকে বাইডেন সৌদিতে মারাত্মক সব অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেন। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদির উপর বেশ ক্ষেপে ছিল মার্কিন প্রশাসন। যদিও বহু আগে থেকেই যুগের পর যুগ মার্কিন সরকার সৌদির কাছে মারাত্মক সব অস্ত্র বেচে এসেছে। কিন্তু মাঝখানে নানান কারণে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকে তিক্ততা। যার জেরে সৌদি আরবের উপর শক্ত অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু হঠাৎ করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান আরো শক্ত করতে সৌদি আরবের উপর নরম হচ্ছে দেশটা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কথায়, যুক্তরাষ্ট্র আর সৌদি আরব নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে চায়। তাই পৌঁছে গিয়েছে একগুচ্ছ চুক্তির কাছাকাছি। সেই তালিকায় রয়েছে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি প্রভৃতি। দেখুন, এই সম্পর্ক স্বাভাবিকের দিকে যাওয়া মানে সৌদি উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিতে পারে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। শুধু তাই নয়, কূটনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, হয়তো বা নেপথ্যে আর একটা বিষয় নিয়ে চলছে দরকষাকষি। সেটা হল, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্থাপন। যেখানে বড় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে বাইডেন প্রশাসন। যদি তেল আবিব আর রিয়াদ একসাথে হাত মেলায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে দেখা দিতে পারে দ্বিধা বিভক্ত রাজনীতি। এমনি থেকেই গাজায় হামলার কারণে ইসরায়েল বেশ কোণঠাসা, এমত পরিস্থিতিতে যদি একবার প্রকাশ্যে সৌদি আরবের সাপোর্ট পেয়ে যায়, তাহলে কয়েকগুণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে ইসরায়েলের। আরো মারাত্মক হতে পারে গাজা যুদ্ধ।
বড় চাল চীনের, মধ্যপ্রাচ্যে ভেস্তে যাবে বাইডেনের প্ল্যান
একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র আর সৌদি আরব এক হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে, অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যকে হাতে রাখতে বড় চালটা চেলে দিয়েছে বেইজিং। চীন সফরে গিয়েছে মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন আর তিউনিসিয়ার নেতারা। যোগ দিয়েছেন চায়না আরব স্টেটস কো অপারেশন ফোরামের ১০ম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে। আরব নেতাদের তালিকায় রয়েছেনা মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইন এর বাদশাহ হামাদ আর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। চীনে হঠাৎ করে আরব দেশের এই নেতাদের সফর কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ চলমান হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তা নিরসনে মধ্যস্থকারীর ভূমিকা পালন করতে চাইছে চীন। আর ঠিক সেই প্রেক্ষাপটে বেজিংয়ের সঙ্গে আরব নেতাদের এই সম্মিলন। চীন প্রথম থেকেই হামাস আর ইসরায়েলের সংঘাতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনকারী । আবার ঐতিহাসিকভাবে কিছুটা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ওদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে বেশ তিক্ততা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। গত নভেম্বরে ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত বাঁধলে চীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, সৌদি আরব আর জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছিল।
কোন পক্ষে সৌদি আরব? ইসরায়েল নাকি ফিলিস্তিন?
মধ্যপ্রাচ্যের যতগুলো প্রভাবশালী দেশ রয়েছে তার প্রথম সারিতেই রয়েছে সৌদি আরব। ধর্মীয় কারণে বিশ্বের বহু দেশের কাছে সৌদি আরবের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর থেকে নিজের ক্ষমতাকে আরো সুসংহত করতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শক্ত হাতে দমন করেছেন তিনি। এই যে এতদিন ধরে একদিকে ইসরায়েল আর অপরদিকে ইরান আর হামাস দ্বন্দের মাঝে সৌদি আরব কোন পক্ষ নেয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়েও নিরপেক্ষ থেকেছে। ইরান বলুন আর ইসরায়েল, এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা মাখোমাখো নয়। সম্প্রতি সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধানে জোর দিয়েছেন দ্বিরাষ্ট্রের উপর। তার কথায়, এই অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি আর নিরাপত্তার ভিত্তি হল দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার আর নিরাপত্তার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যমতের লক্ষণ রয়েছে।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি সহ জিম্মিদের মুক্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত। কারণ দ্রুত খারাপ হচ্ছে গাজার মানবিক পরিস্থিতি। আর সেই অবস্থা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। শুধু তাই নয়, তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রশংসা করেছেন নরওয়ে স্পেন এবং আয়ারল্যান্ডের। আরো বলেন, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোরও এই একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। সৌদির এই বক্তব্যে ফিলিস্তিনি পন্থী বহু রাষ্ট্রের কূটনীতিক মনে করছেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের কথা বলছে সৌদি, মানে তাহলে কি ইসরায়েলকে স্বীকৃতির বড় ইঙ্গিত দিয়ে দিল? এখনো পর্যন্ত ইসরায়েল আর হামাসের সংঘাত বন্ধে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া বড় কোন স্টেপ নেইনি সৌদি আরব। হয়ত ইসরায়েলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ঠিক করতে চলেছে। জোর গুঞ্জন কূটনৈতিক মহলে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম