।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাকে ঘিরে থাকে অনেকগুলো সন্তান। তাদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৫ কেজির খাবার প্রয়োজন। খরচও অনেক। সারাদিন অত সন্তানকে দেখাশোনা করতে করতে নিজে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পান না। যদিও দিনশেষে তিনি ক্লান্তি অনুভব করেন না। তার সন্তানরা ভালো আছে দেখে তিনি বেশ সুখেই রয়েছেন। তার সন্তান কোন মানুষ নয়, প্রচুর বিড়াল আর কুকুর। বাংলাদেশের (Bangladesh) সাবিনা রহমানের দিন কাটে অসহায় প্রাণীদের ভালবেসে।
ঢাকার (Dhaka) শেখেরটেকে একটি ফার্মাসিটি রয়েছে, যা অন্যান্য ফার্মেসি থেকে এক্কেবারে আলাদা। এখানে গেলে দেখতে পাবেন দোকানের দায়িত্ব রয়েছে কয়েকটি গুরুগম্ভীর বিড়ালের ওপর। তারা নিশ্চিন্তে ওষুধের তাকের মাঝে ঘুমিয়ে রয়েছে। আবার কখনো বা চেয়ারে বসে তদারকি করছে। দেখলে মনে হবে, কারোর বাড়িতে বিড়াল গুলো থাকে না। আসলে বিড়ালদের ঘরেতে মানুষ থাকে। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে এই ফার্মেসির মালিক রফিকুল ইসলাম আর সাবিনার রহমানের ৩৯ টি বিড়াল আর ৯টি কুকুর ছিল। দিনের পর দিন সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সবকটি বিড়াল কিন্তু উদ্ধার করা। কেউ বা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গিয়েছে, কেউ বা মারধর করে অসহায় প্রাণীগুলিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বস্তির অলি গলি কিংবা বড় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা নোংরা ডাস্টবিন থেকে অসহায় বিড়াল কুকুরদের উদ্ধার করেন এই দম্পতি। কেউ চোখে দেখতে পায় না, কারোর হাত-পা ভাঙা, কারোর বা শরীরের জটিল রোগ। সেই সমস্ত কুকুর বিড়ালকে পরম স্নেহে কোলে তুলে বাড়িতে আনেন সাবিনা। তারপর আদর ভালবাসায় তাদের সুস্থ করে তোলেন। এই বিড়াল কুকুর সাবিনার রহমানের কাছে অমূল্য সন্তানের সমান। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। সামিনা রহমান ডাকলেই দৌড়ে তারা তাদের মায়ের কাছে চলে আসে। শুধু বাড়ির পোষ্য নয়, সাবিনা রহমান রাস্তায় থাকা কুকুর বিড়ালদের জন্য আলাদা করে খাবার তৈরি করেন।
আসলে সাবিনা ছোট থেকেই দেখেছেন তার বাবা-মা বিভিন্ন প্রাণী পুষতেন। সেই তালিকায় বানর, হরিণও ছিল। তিনি এই ভালবাসার প্রথম পাঠ পেয়েছিলেন বাবা-মায়ের কাছে। ২০১০ সালে যশোর থেকে চলে আসেন ঢাকার শেখেরটেকে। প্রায় ১৮ বছরের চাকরি জীবনকে বিদায় দিয়ে এখন সম্পূর্ণ সময় দেন এই প্রাণী গুলির সাথে। দিনের পর দিন তার সন্তানের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন তাদের জন্য প্রায় ১৫ কেজি খাবার রান্না করা মুখের কথা নয়. তার উপর রয়েছে ক্যাট ফুড কেনার খরচ। মূল্য বৃদ্ধির চড়া বাজারে তিনি তো আর সন্তানকে না খাইয়ে রাখতে পারেন না। তার সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানদের ভালো রাখার চেষ্টা করেন।
ওই এলাকায় সাবিনাকে সবাই চেনেন প্রাণীপ্রেমী হিসেবে। বর্তমানে তার বাড়িতে কুকুর বিড়ালের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতর বেশি। আশেপাশে কোন বিড়াল কুকুরকে অসুস্থ বা আহত অবস্থায় দেখলে অনেকে সাবিনা রহমানকে ফোন করেন। প্রতিদিন ঘরের বাচ্চাদের জন্য খাবার তৈরি করে তারপর বেশ বড় একটি ব্যাগে খাবার ভরে রওনা দেন রাস্তায়। সেখানেও রয়েছে প্রচুর সন্তান। কুকুর-বিড়ালকে খাবার দিতে গিয়ে প্রায় সময় অন্যান্য মানুষদের গালি শুনতে হয়। এমনকি কয়েক বার থানা পুলিশও করতে হয়েছে। যদিও এসবকে পাত্তা দেন না সাবিনার রহমান। কারণ তিনি যখন খাবার ভর্তি ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় বের হন তখন চার-পাঁচটি কুকুর বিড়াল তাকে ঘিরে ধরে। তাদের খুশি দেখে সমস্ত ক্লান্তি দুঃখের কথা ভুলে যান সাবিনা রহমান। তার বাড়িতে আসবাবের জৌলুস নেই। ২০১৮ সালে এই সন্তানদের জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরিতে গেলে নিয়মিত খাবার দিতে পারতেন না। যার কারণে অভুক্ত থাকত অসহায় প্রাণীগুলি। আত্মীয়-স্বজনদেরও অনেকেই সাবিনার রহমানকে এড়িয়ে চলেন, শুধুমাত্র তার বাড়িতে থাকা কুকুর বিড়ালের কারণে। যদিও সাবিনা এই সবে আর মন খারাপ করেন না। তিনি মনে করেন, মানুষকে ভালবাসার লোক আছে অথচ এই অবলা প্রাণীদের ভালোবাসার কেউ নেই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম