।। প্রথম কলকাতা ।।
Sudan Conflict: ঈদে উৎসবমুখর পরিবেশ নয়, সুদানের মানুষ পেয়েছে ভুতুড়ে আবহাওয়া। রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। পচাপড়া গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ। ধ্বংসলীলা চলছে সুদানের খার্তুমে। গোটা বিশ্বজুড়ে সুদান সংঘর্ষ দিচ্ছে নতুন ইঙ্গিত। ভয়ে কাঁপছে পশ্চিমা বিশ্ব। ভেস্তে যেতে পারে রাশিয়ার সমস্ত প্ল্যান। সংঘর্ষে জ্বলছে সুদান আর বিপদের নিঃশ্বাস পড়ছে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কাঁধে। মুড়ি মুরকির মতো মরছে মানুষ। এরই মাঝে শুরু হয়ে গিয়েছে চরম পলিটিক্স।
সুদানের সংঘাতের জেরে উদ্বিগ্ন বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ। তেল পাইপ লাইন আর নীলনদের জল ভাগাভাগি নিয়ে সুদানের প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে নতুন সমস্যার জট তৈরি হচ্ছে। সুদান মূলত বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু লোহিত সাগরের তীরে সুদান থাকায় এই সংঘর্ষের প্রভাব পড়বে গোটা বিশ্বে। এই সংঘাতে বেশি জর্জরিত হবে সুদানের পাঁচটি প্রতিবেশী দেশ চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং ইথিওপিয়া। এছাড়াও বিপাকে পড়তে চলেছে মিশর। মিশর ও সুদান সুপেয় জলের জন্য নীল নদের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম এর কারণে দুটি দেশ এখন মহা সমস্যায়। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও গৃহযুদ্ধ এসে সব ঘেঁটে দিয়েছে। গৃহযুদ্ধের জেরে সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলিতে বস্তুচ্যুত সুদানিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যেই চাদে পালিয়ে গিয়েছে প্রায় চার লক্ষ সুদানি। এছাড়াও মিশরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ সুদানি নাগরিক। একইভাবে শরণার্থী সমস্যায় ভুগছে দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়া। তবে এদের ভয়কে ছাপিয়ে গিয়েছে রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমস্যা। সুদানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র। গৃহযুদ্ধ না থামলে গোটা বিশ্বের জন্য ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে। যেমন ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্বে প্রভাব ফেলেছে, তেমনি সুদানের সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
গৃহযুদ্ধ হচ্ছে সুদানে আর মহা চিন্তায় রাশিয়া
ইতিমধ্যেই সুদানে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুতিনের ভাড়াটে যোদ্ধা বাহিনী ওয়াগনার। প্রশ্ন উঠছে, সুদানে সংঘর্ষ হচ্ছে দুই সামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে। সেখানে রাশিয়ান যোদ্ধা বাহিনী কি করছে? আসলে তলতলে চলছে অন্য ষড়যন্ত্র। রাশিয়া কব্জা করতে চাইছে সুদানকে। কারণ সুদানে রয়েছে জ্যাকপট। এই ওয়াগনার মূলত রাশিয়ার একাধিক কোম্পানি নেটওয়ার্ক। যা সুদানের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সামরিক যোগাযোগের উপর নজরদারি রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, ওয়াগনার সুদানের বিবাদমান গোষ্ঠী আরএসএফকে শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে যুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে। এর পিছনে স্বার্থটাই বা কি? আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এত রাগ কেন? আসলে সুদানের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বহুদিনের তীব্র প্রতিযোগিতা। ভূরাজনীতিতে আফ্রিকার দেশ সুদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকায় আধিপত্য ধরে রাখতে সুদানে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে মরিয়া রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। আসলে সুদানের কাছেই লোহিসাগরের বড় সীমানা রয়েছে। লোহিত সাগরের কোল ঘেঁষে নৌ ঘাঁটি গড়ে তুলতে সুদানকে পাশে রাখা দরকার। আবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাজ করতে গেলে লোহিত সাগরের উপর কড়া নজরদারির প্রয়োজন। নিজেদের স্বার্থে সুদানকে কেন্দ্র করে গোপন প্রতিযোগিতায় নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া। লোহিত সাগরকে কব্জা করতে সুদানের ভূমি ব্যবহারে বিকল্প নেই। সুদানে সামরিক ক্ষমতা বাড়াতেই ইতিমধ্যেই দুই শক্তিধর রাষ্ট্র সুদানের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু সেভাবে সুফল পায়নি। যদিও এক্ষেত্রে একটু বেশি জোর রয়েছে রাশিয়ার। বলা হয় সুদানের স্বর্ণ খনি পূরণ করে রাশিয়ার রিজার্ভ। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, এই সোনায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমাতে ব্যবহার করা হয়। সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার একটি চুক্তি হয়েছে। মস্কো সুদানের উপকূলে নৌ ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি পেয়েছে। আপাতত রাশিয়ার লক্ষ্য সুদানে পারমাণবিক জাহাজ মোতায়েন করবে। এই ভাবেই ধীরে ধীরে গোটা আফ্রিকায় নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে চান পুতিন। যখন পরিকল্পনা একটু একটু করে বাস্তবায়নের দিকে, তখন সুদানের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে দিতে চলেছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম