।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran-Russia: রাশিয়ার হাতে ইরান, যুক্তরাষ্ট্রের বড় লস! বাহরাইন তেহরানকে পাশে চাইছে কেন? ইরানকে বোঝানোর ক্ষমতা আছে শুধু রাশিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের মুখ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের গ্রাস কেড়ে নিল পুতিনের দেশ। বুঝিয়ে দিল বাহরাইন। ইরানের সাথে সম্পর্ক ঠিক করতে, তাহলে কি রাশিয়াই শেষ ভরসা? ইরান রাশিয়ার সম্পর্ক যে কতটা গভীর, তা বুঝে গেল বিশ্ব। রাশিয়া কোন কৌশলে ইরানকে হাতে রেখেছে? একটা সময় এক ঘরে ইরানকে কাছে টানতে মরিয়া বহু দেশ, নিজের ভাগ্য নিজেই পরিবর্তন করছে তেহেরান। কিন্তু কোন ম্যাজিকে? মস্কো-তেহরানের বন্ধুত্ব জ্বলছে পশ্চিমি দুনিয়া, বিরাট লস হয়ে যাচ্ছে। বাহরাইন হঠাৎ ইরান আর ইসরায়েলের মাঝে থেকে ব্যালেন্স করছে কেন? ইরানকে পাশে পেতে ছুটে গেল রাশিয়ার কাছে! চাইছে টাই বা কী?
রাশিয়া তাহলে মধ্যপ্রাচ্যকে ভালোই কব্জা করে নিল! মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বুঝে গিয়েছে, ইরানের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে রাশিয়াকে বড্ড দরকার। সোজা কথায় যুক্তরাষ্ট্র নয়, মধ্যপ্রাচ্যে যেন একটা পোক্ত জায়গা করে ফেলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় তাই রাশিয়াকেই পাশে চাইছে বাহরাইনের মতো দেশ। যে দেশের সঙ্গে ইরানের এত তিক্ততা, সেই দেশ কিনা ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে রাশিয়ার শরণাপন্ন। বাহরাইনের এমন পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিল মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ক্ষমতা ঠিক কতটা। প্রায় ৮ বছর আগের ঘটনা। ইরানের সঙ্গে হঠাৎই একদিন কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করে বাহরাইন। আর এই পুরো ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সৌদি আরব। সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে, সৌদি প্রায় ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। আর তারই প্রতিবাদে হামলার ঘটনা ঘটেছিল ইরানে সৌদি দূতাবাসে। ব্যাস, তারপর তিক্ততা শুরু হলে তা মিটতে সময় লাগে বহু বছর। সে সময় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি পর্যন্ত এমন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
আর সেই প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা করে সৌদি আরব। বুঝতেই তো পারছেন, মধ্যপ্রাচ্যে এক সুন্নি পন্থী বড় শক্তি হল সৌদি আরব, অপরদিকে শিয়া পন্থী বড় শক্তি ইরান। সৌদি আরবকে সেই সময়ে অনুসরণ করে বাহরাইনও। শুধু তাই নয়, দেশটিতে নিযুক্ত থাকা ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল বাহরাইন। ইরানের দিকে আঙুল তুলে বলেছিল, তেহরান নাকি প্রকাশ্যে বিপ্পজনকভাবে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। সময়ের সাথে যে কত কি ঘটে যায়, এই ঘটনাটাই তার সব থেকে বড় প্রমাণ। যে সময় সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল, তখন সত্যি সত্যি ইরানের সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। বাহরাইনের পাশাপাশি সৌদির পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিল সুদানও। তার উপর আবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তেহরানে আমিরাতের দূতাবাসে কূটনীতিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে, পাশাপাশি তাদের দেশেও ইরানের কূটনৈতিকদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে বলা হয়। কিন্তু এখানে একটা কথা বলে রাখি, বাহরাইন সরকারের তৎকালীন সিদ্ধান্ত দেশটা বহু নাগরিক কিন্তু মেনে নিতে পারেনি। কারণ বাহরাইনের অধিকাংশ নাগরিক ইরানকে বেশি সমর্থন করে। তারপর সময়ের সাথে সাথে সেই তিক্ততা নরম হয়ে এসেছে। বাহরাইন ইরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় চালু করার জন্য বারংবার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু কি বলুন তো, যে সম্পর্ক কূটনৈতিকভাবে ভেঙে যায়, সেই সম্পর্ক জোড়া লাগা সহজ নয়। মাঝে বিস্তর আলাপ আলোচনার প্রয়োজন। ইরানও বা কি ভরসায় বাহরাইনকে পুনরায় ভরসা করবে? এটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। আর এই জায়গায় এখন বাহরাইন পড়েছে দ্বিমুখী চাপে। একদিকে দেশটার অভ্যন্তরীণ জনগণ ইরানের সাথে সম্পর্ক খারাপ থাকায় সরকারকে চাপ দিচ্ছে, অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান যখন তার শক্তি নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন বাহরাইন বুঝতে পারছে, ইরানকে পাশে রাখা দরকার।
তাই বাহরাইনের সামনে এখন সবথেকে বড় অপশন রাশিয়া। মনে করছে, রাশিয়াই পারে ইরানের সাথে তার সম্পর্কটা ঠিক করে দিতে। রাশিয়ার মাধ্যমে ইরানের কাছে ইতিমধ্যেই একটা অনুরোধ পাঠিয়েছে। যার জেরে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন করে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ কেন বাহরাইন এই দিকে এগোচ্ছে? আসলে কি বলুন তো, সেই ২০১৬ সালে তেহরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ছিন্ন করেছিল বাহরাইন, কিন্তু গত বছর যখন চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব আর ইরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে, তখন বাহরাইনও বা কেন চুপ থাকবে? শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন বাহরাইনের শাসক হামাদ আলে খলিফা।মস্কোতে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, অতীতে ইরানের সঙ্গে বাহরাইনের নাকি যে সমস্যা ছিল, তা আর নেই। তাই ইরানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যাওয়ায় তিনি আর বিন্দুমাত্র দেরি করতে চাইছেন না। প্রশ্নটা তো এখানেই, কেন তিনি পুতিনের কাছেই গেলেন? অন্য কোন দেশের কাছে গিয়েও তো সাহায্য চাইতে পারতেন? ইরানের সাথে সম্পর্ক ঠিক করবে কিনা রাশিয়া। অর্থাৎ বাহরাইন বুঝে গিয়েছে ইরান আর রাশিয়ার বন্ধুত্বের জল ঠিক কতটা গভীর। আর এই সুযোগে বাহরাইন রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কটা একবার ঝালিয়ে নিল। অনেকটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত।
তবে বাহরাইন যে একান্তভাবেই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় গঠনের চেষ্টা করছে না, এমনটাও না। ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনিকে ফোন করেছিলেন বাহরাইনের শাসক। ওদিকে আবার ইসরায়েলের সাথেও কিন্তু দেশটার সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ২০২০ সাল নাগাদ বাহরাইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটা চুক্তি স্বাক্ষর করে। তার কয়েক বছর পর আবার, ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার চুক্তিও স্বাক্ষর করে দেশটা। এছাড়াও বাহরাইন ইরান মিত্র হুতিদের দ্বারা যে আন্তর্জাতিক শিপিং লেনগুলোতে আক্রমণ চলছে, তা প্রতিহত করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটেও যোগ দিয়েছে।
আসলে বাহরাইন চলছে অত্যন্ত ব্যালেন্স করে। দেশটা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের সঙ্গে বেশি শত্রুতায় জড়াতে চাইছে না, মোটামুটি ভাবে নিরপেক্ষভাবে বন্ধুত্বের নীতিতে চলার চেষ্টা করছে বাহরাইন। ইরান আর ইসরায়েল দুই দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এখন বেজায় ব্যস্ত। তবে কি বলুন তো, মধ্যপ্রাচ্যের এখন যা ভূ রাজনীতি, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইরান আর ইসরায়েলের মাঝে ব্যালেন্স করাটা বড্ড কঠিন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাহরাইন কতদিন নিরপেক্ষ ভাবে থাকতে পারবে, সেটাও একটা বড় সংশয়।
এই যে রাশিয়া আর ইরানের সামরিক মৈত্রী বা বন্ধুত্ব, এটা কিন্তু পশ্চিমাদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত। বর্তমান পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই দুই দেশের সহযোগিতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। অথচ একটা সময় এই রাশিয়া আর ইরানের মধ্যে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, পারমানবিক চুক্তি কিংবা চীনের ভূমিকা নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতের কোন মিল ছিল না।। অথচ আজ এই দুই দেশ হাত মেলাতেই মারাত্মক চাপে পড়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। দিনের পর দিন, রাশিয়া ইরানের মধ্যে যেভাবে সামরিক সহযোগিতা বাড়ছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য কদিন থাকে সেটাই দেখার। কারণ এখন কূটনৈতিক সম্পর্কের অঙ্ক চলছে উল্টো পথে। একটা সময় ইরানে রাশিয়ার আগ্রাসন চালানোর ইতিহাস রয়েছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সমাজে এক ঘরে থাকা ইরান আর রাশিয়ার মধ্যে মিল আছে কম, পার্থক্য অনেকটাই বেশি। এই দুই দেশের মৈত্রীর আসল গভীরতা বোঝা গিয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর। পশ্চিমি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সম্মুখীন হয়ে সমর্থনের জন্য রাশিয়াকে তখন নির্ভর করতে হয়েছে মিত্রদের উপর। এখনো ঠিক তাই করতে হচ্ছে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, রাশিয়ার কাছে ইরান হয়ে উঠেছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা দেশ। অপরদিকে ইরানের সামরিক সহায়তার বিনিময়ে রাশিয়া ইরানকে দিচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ বহু প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রস্তাব। সোজা কথায়, দুই দেশের বন্ধুত্ব এখন জবরদস্ত।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম