।। প্রথম কলকাতা ।।
Train Accident: রেলের বেসরকারি করণ কি সত্যি দরকার ? সরকারি প্রকল্প দিয়ে জাস্ট চলছে না ? সংকীর্ণ কামরা, টিকিটের দাম, দেরি করা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, এবং দুর্ঘটনা ঝঞ্ঝাট থেকে কবে মিলবে মুক্তি ? সম্প্রতি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আরও একবার অব্যবস্থা আর ত্রুটিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।৬০০ পেরোলো রেল দুর্ঘটনা। রেল দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২২৭ বছর। ত্রুটিপূর্ণ পরিষেবার মূল কারণ কাজে অবহেলা। রেল যাত্রার গোড়ার দিকে বেসরকারিই তো ছিল পরিষেবা।
করমণ্ডলের স্মৃতি এখনও টাটকা। সম্প্রতি সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আবার উস্কে দিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একটার পর একটা যে দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে তা কিন্তু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আর এই সবকিছুকে এক জায়গায় আনলে কিন্তু উঠে আসছে রেলের অব্যবস্থার কথাই। কিন্তু এমনটা হচ্ছে কেন? কোথায় রয়েছে গাফিলতি?
২০১৬-১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্যই ছিল ‘মিশন জিরো অ্যাক্সিডেন্ট’। বলা হয়েছিল দূর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে শূন্যে আনা হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে কই? সরকার তো জোর গলাতেই দাবি করেছিল, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সাজিয়ে তোলা হবে রেলের সমস্ত সিস্টেমকে। রেল ব্যবস্থাকে করে তোলা হবে সবচেয়ে সুরক্ষিত। রেল জানিয়েছিল, নিয়মিত রেল লাইন রক্ষণাবেক্ষণে গুরত্ব দেওয়া হবে। ব্যবহার করা হবে এলএইচবি রেল বগি, আধুনিক রেল ইঞ্জিন, লাইনে বসানো রেল প্রোটেকশন, এরকম আরও কত কী!
অথচ কাঞ্চনজঙ্ঘা দূর্ঘটনার পর জানা যাচ্ছে, সেখানে না ছিল এলএইচবি বগি, আর না ছিল কোনও কবচ। এমনকি সিগন্যাল সিস্টেম অবধি খারাপ ছিল সেখানে।
একদিকে রেল দাবি করছে, আগামি বছরের মধ্যেই ৬০০০ কিলোমিটার লাইনে কবচ ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে।কিন্তু কাজ কি হচ্ছে কচ্ছপের গতিতে? রেলের হাতে প্রোজেক্ট তো রয়েছে প্রচুর। তবে আমরা যদি কাজের গতির হিসেব করি তাহলে রেল যে গতিতে কাজ করছে তাতে সবটা শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত ২২৭ বছর। মানে জাস্ট ভাবতে পারছেন বিষয়টা! তবে কি ততদিন এভাবেই প্রাণ হারাবে সাধারণ মানুষ? আর আমরা কেবল অপেক্ষা করতে থাকব যে, কবে রেলব্যবস্থা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হবে?
এবার যদি আমরা একটু অতীতে যাই সর্বভারতীয় মিডিয়া রিপোর্ট বলছে ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত রেল দূর্ঘটনার সংখ্যা ৬৩৮টি। যেখানে ২০০৪ থেকে ২০১৪ অর্থাৎ UPA জামানার শেষ দশ বছরে রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১,৭১১টি। অর্থাৎ তিনগুণের একটু কম।
এসব দেখে অনেকেই মনে করছেন, বেসরকারিকরণই হচ্ছে আসল সমাধান। সত্যি কি তাই?
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, গোড়ার দিকে তো বেসরকারিই ছিল আমাদের রেল পরিষেবা। তাতে কি যাত্রীদের আদৌ কোনও লাভ হয়েছিল? ব্রিটিশ জামানায় রেল তৈরি হয়েছিল ভারতীয়দের দরকারে। অথচ বাস্তবে কেবল নিজেদেরই পকেট ভরে গেছে কোম্পানিগুলি। অনেকেই দেখি বলেন যে, রেল নাকি ব্রিটিশদের দেওয়া উপহার। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে জানতে পারবেন, সেই সময়ে রেল থেকে অন্তত ১০ হাজার ৫৬ কোটি টাকার মুনাফা তুলেছিল ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি।
সালটা তখন ১৮৪৯। বেশকিছু ব্রিটিশ রেল সংস্থার সাথে চুক্তি সই করে এ দেশের ঔপনিবেশিক সরকার। কোম্পানিগুলি প্রায় বিনামূল্যেই এই চুক্তি সম্পাদন করে ফেলে। চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল, এই প্রকল্পের প্রয়োজনে যাবতীয় জমির জোগান দেবে সরকার। এরপর রেলের লাভ বা ক্ষতি যাই হোক না কেন, সংস্থার খাতে অন্তত ৫ শতাংশ লাভ যেন থাকে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। অথচ কোম্পানিগুলি কিন্তু কোনও কাজের জন্যই সরকারের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না। অর্থাৎ একেবারে জোরজবরদস্তি বলতে পারেন। তবে এর বদলে সেই রেল কোম্পানিরা কী দিয়েছিল জানেন?
আম জনতার কথা তো তারা একেবারেই ভাবেনি। উল্টে মাল বহনের জন্য লাগামছাড়া দর হাঁকাতো তারা। সাহেব মেমদের জন্য ছিল বিলাসবহুল ব্যবস্থা। অন্যদিকে অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন কামারাতে ঠাসাঠাসি করে জায়গা হতে আমাদের দেশীয় মানুষদের। অর্থাৎ এদেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে মুনাফা তারা লুঠত, আর কষ্ট পেত আমাদের দেশের মানুষজন। তাই আপনিই বলুন, উপহার কথাটা কি যায়? বোধহয় যায়না।
তবে এটুকু তো বুঝতেই পারছেন যে, বেসরকারি হোক সরকারি, সমাধান আছে কেবল সদিচ্ছাতেই। রেলকে ত্রুটিমুক্ত না করতে পারলে, সমাধান কিন্তু কখনোই মিলবেনা। এই বিষয়ে আপনাদের কী মতামত? সেটা অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম