।। প্রথম কলকাতা ।।
Netaji: কেউ ভারত মাতার উপর নির্বিচারে অত্যাচার করে যাবে আর তা মুখ বুজে সহ্য করবেন, এমন মানুষ ছিলেন না নেতাজি (Netaji)। তিনি প্রথম থেকেই বিশ্বাস করেছিলেন, অহিংসার জোরে কখনোই স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা যাবে না। দেশকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন সশস্ত্র আন্দোলন। কটকের বিখ্যাত আইনজীবী জানকীনাথ বসু এবং তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী দেবীর চার পুত্র এবং চার কন্যা সন্তানের পর যে নবম সন্তান জন্ম নেন তার নাম আদর করে রাখা হয় সুভাষ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র (Netaji Subhas Chandra Bose) ছোট থেকেই দেখেছেন ভারতবাসী ঠিক কতটা নিপীড়িত হচ্ছে। সেই স্কুল জীবন থেকে তিনি এই অত্যাচারের বারংবার প্রতিবাদ করে এসেছেন। এমনকি কলেজে এই কারণে তাঁকে রস্টিকেট হতে হয়। অথচ সেই ঘটনায় বদলে গিয়েছিল বর্ণবিদ্বেষী অধ্যাপকের জীবন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু বা অন্তর্ধান নিয়ে রয়েছে নানা রহস্য। এই ব্যক্তিকে ভারতবাসী ভগবানের আসনে বসিয়েছেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বীরত্বে প্রত্যেক ভারতবাসী প্রতি মুহূর্তে গর্ব অনুভব করেন। ছোট ছোট শিশুরাও জানেন এই ব্যক্তির মাহাত্ম্যপূর্ণ কাজ। ছোট থেকেই প্রতিবাদী ছিলেন নেতাজি। অসহায় ভারতবাসীর উপর এক বিন্দু অত্যাচার তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রাস্টিকেট হয়েছিলেন এক প্রফেসর উপর প্রহার করার অভিযোগে। যদিও এই ঘটনা কমবেশি প্রায় প্রত্যেকেই জানেন। কিন্তু সবিস্তারে জানেন কি, হঠাৎ করে এতটা নেতাজির রেগে যাওয়ার কারণ কি ছিল ?
ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের বাবা ছেলেকে কলকাতায় পড়তে পাঠান। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। একদিন সকালের দিকে কলেজ লাইব্রেরীতে নেতাজি বই পড়ছিলেন। হঠাৎ খবর পান জনৈক এক ইংরেজ অধ্যাপক তাঁদেরই ক্লাস রুমের একটি ছেলেকে প্রচুর মারধর করেছেন। সেই অধ্যাপক ছিলেন মিস্টার ওটেন। ছেলেদের উপর এমন মারধরের অভিযোগের পিছনে ছিল অধ্যাপকের বিরক্তি। ছেলেগুলি নাকি তার ঘরের সামনে পায়চারি করছিলেন। যা অধ্যাপকের একেবারেই পছন্দ হয়নি, তাই তিনি তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। এই সংবাদ শোনামাত্রই নেতাজি সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর সহপাঠীরা প্রতিবাদ করেন। পরের দিন ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা হয় ধর্মঘট, যদিও ওটেনের ঘরে ছাত্র দের এক মিটিংয়ে সেই সমস্যার সমাধান হয়।
কিন্তু মাস তিনেক পরে আবার সেই একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ছেলেদের উপর ওটেনের পুনরায় দুর্ব্যবহার করার পর নেতাজি নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি। যদিও এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের সহপাঠি প্রমথনাথ সরকার লিখেছিলেন, মিস্টার ওটেনকে মারা হয়েছিল কলেজের ঠিক শেষ পিরিয়ডের শেষে এবং মেরেছিলেন হিন্দু হোস্টেলের কয়েকজন বাছা-বাছা ছেলে। আর এর পিছনে মূল কারণ ছিল ওটেন সাহেবের বক্তৃতা।
এই অধ্যাপক কোন একটা উপলক্ষে সম্ভবত সরস্বতী পুজোয় নিমন্ত্রিত হয়ে হিন্দু হোস্টেলে যান। সেখানেই তিনি ইউরোপীয় এবং ভারতীয় সভ্যতা সম্বন্ধে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই বক্তৃতাকে ছাত্ররা হিন্দু সভ্যতার নিন্দা বলে মনে করেন। এই নিয়ে ছাত্ররা প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ করলেও তার কোন ফল পাননি। তাই ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেন, লুকিয়ে রাম ধোলাই দেবেন অধ্যাপক ওটেনকে। আর এই ষড়যন্তের সাথে নাকি জড়িত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। যদিও পরবর্তীকালে জানা যায়, এই কারসাজির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন অনঙ্গমোহন দাম।
একদিন অধ্যাপক ওটেন যখন সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নাম ছিলেন, তখন সেই সিঁড়ির পিছনে লুকিয়ে ছিলেন কয়েকজন ছাত্র। তারপর পিছন থেকে অতর্কিতভাবে বেধড়ক মার পরে অধ্যাপক ওটেনের উপর। এই দোষে দোষী সাব্যস্ত হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং তাঁকে কলেজ থেকে বহিস্কৃত করা হয়। এই ঘটনার পর নাকি বদলে গিয়েছিল অধ্যাপক ওটেনের জীবন। শোনা যায় এই ঘটনার অনেক বছর পর ওটেন ছাত্রদের জন্য একটি শোক কবিতা লিখেছিলেন। বহু ইতিহাসবিদ মনে করেন, প্রেসিডেন্সি কলেজের সেই ঘটনা অধ্যাপক ওটেনের জীবন পাল্টে দিয়েছিল। তিনি কবিতায় দেখাতে চেয়েছিলেন, নেতাজি সুভাষ কিভাবে মৃত্যুকে অতিক্রম করে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে চলেছেন। যে ছাত্রের বিরুদ্ধে তার উপর লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছিল, পরবর্তীকালে তার লেখায় সেই ছাত্রের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শোক ব্যক্ত করেছেন। বর্ণবিদ্বেষী অধ্যাপক পরবর্তীকালে হয়ে যান ভারতপ্রেমী।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম