।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel vs Palestine conflict: ফিলিস্তিনের ভাগ্য ফিরতে হয়ত আর বেশি দেরি নেই। আরব দেশগুলো জোট বাঁধছে ফিলিস্তিনের হয়ে। গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল হারাতে চলেছে বড় সাপোর্ট। একদিকে গাজায় যেমন ফিলিস্তিনিরা তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছে, আবার ঘুরপথে এই গাজাই ফিলিস্তিনকে এনে দিতে পারে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা। কথাটা শুনতে একটু বিতর্কিত মনে হলেও, এটা কিন্তু বড় ফ্যাক্টর। গাজায় বেসামরিকদের উপর হামলার ঠিক পরেই গোটা বিশ্ব নড়েচড়ে বসেছে ফিলিস্তিনের হয়ে। প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের হয়ে কথা বলছে। আবার কেউ বা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গিয়ে কূটনৈতিক স্টেপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের জন্য তৈরি হচ্ছে একটা মজবুত ভিত। ভাবছেন, সেটা কীভাবে? কারণ ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের দ্বন্দ্ব কারোর অজানা নয়। তাহলে হঠাৎ আরব বিশ্ব জোট বেঁধে ফিলিস্তিনের জন্য কী এমন করবে? যা বদলে দিতে পারে ফিলিস্তিনের ভাগ্য! একে একে দেশগুলো হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ইসরায়েলের রোষানলে পড়বে না তো? জাতিসংঘের বড় মর্যাদা পেতে পারে ফিলিস্তিন। ভেতরে ভেতরে বাড়াচ্ছে নিজের শক্তি।
ভাগ্য খুলবে ফিলিস্তিনের, জোট বাঁধছে আরব দেশ
গোটা বিশ্বের কাছে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের মর্যাদা পেতে আর বেশি দেরি নেই। বিশ্বের একে একে দেশ পাশে দাঁড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের। যদি বলেন, ঠিক কতগুলো রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে, তাহলে সংখ্যাটা নির্দিষ্ট করে বলাটা খুব চাপের। কারণ কিছু মাস পরে পরেই সংখ্যাটা পাল্টে যাচ্ছে, আপডেট হচ্ছে নতুন সংখ্যায়। কয়েকদিন আগেও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্য পদ নিয়ে পাশ হয়েছে প্রস্তাব। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে বেশ তৎপর আরব দেশগুলো। সেই তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডান আর মিশর। সম্প্রতি এই দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক কিন্তু খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। জর্ডানের মতো কিছু কিছু দেশ হয়তো সামনে কিছু বলতে পারছে না, কিন্তু গাজায় যেভাবে বেসামরিক মানুষের উপর হামলা চলছে তা মেনে নেওয়াটাও চাপের ব্যাপার। তার উপর ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের চাপ তো রয়েইছে। গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দেশগুলোই ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
গাজায় চলা বেসামরিক মানুষের উপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। শুধু এখানেই বিষয়টা থেমে থাকেনি। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পরিকল্পনা করছে ইউরোপের বহু দেশ। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা নাকি ভাবতেও শুরু করে দিয়েছেন, যুদ্ধ পরবর্তী গাজার অবস্থাটা ঠিক কেমন হবে। যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনের সহায়তার ক্ষেত্রে এই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান শর্ত হতে চলেছে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। শুধুমাত্র কূটনৈতিক তৎপরতা নয়, রীতিমত প্রকাশ্যে দেশগুলো কথা বলছে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিয়ে। আর তা হয়তো আদায় করেই ছাড়বে। কিছু কিছু আরব দেশ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, গাজায় যে আর্থিক আর রাজনৈতিক সমর্থন চলছে, এর মূল কারণ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা। সৌদি আরবের মতে, একমাত্র এভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমানো সম্ভব।
দেখুন, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা মানে কিন্তু তার এফেক্ট পড়বে গোটা বিশ্বে। আর মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা কি হবে তা তো জানেনই। কোন দেশই চায়না, শুধুমাত্র অন্য রাষ্ট্রের যুদ্ধে জেরে নিজেদের স্থিতিশীল অর্থনীতির বিপর্যয়ের মুখে পড়ুক। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে,যে যার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভাবছে। কোন রাষ্ট্রের সঙ্গে কোন রাষ্ট্রের যুদ্ধ আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বকে উস্কে দিতে পারে। তাই মধ্যপ্রাচ্যকে শান্ত থাকাটা খুব দরকার। গত মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের মাঝে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয় নিয়ে আরব দেশের এবং ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে আরব নেতারা। যার মূলে গুরুত্ব পাচ্ছে দুটি বিষয়। একটা হল, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন, আর দ্বিতীয়টা হল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি দান। আপাতত আরব দেশগুলো চাইছে, গাজা যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর আর গাজায় একটাই প্রশাসন থাকবে। অর্থাৎ গঠন করা হবে একটা সমন্বিত সরকার। ফিলিস্তিনের একক সরকারের উপর পুরোপুরি বিশ্বাসী কাতারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, ফিলিস্তিনের সমন্বিত সরকারের দায়িত্বে থাকবে পশ্চিম তীর আর গাজা অঞ্চল। এমনটাই মনে করছে কাতার। ওদিকে দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে গাজার অবস্থা। গাজার উত্তরাঞ্চলের জনবহুল এলাকা গুলোতে ইসরায়েলি সেনারা হামলা আরো জোরদার করেছে। তবে এখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে হামাস বাহিনী। হতাহতের ঘটনা ঘটছে দুপক্ষেই।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সৌদি আরব, ফিলিস্তিনের মর্যাদা ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা
যখন ইরান আর ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বাঁধে, তখন কিন্তু প্রায় নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। দেশটা ইরানের দিকে নাকি ইসরায়েলের দিকে তা বোঝা বেশ দুষ্কর হয়ে ওঠে। তবে হ্যাঁ, এই সৌদি আরব ফিলিস্তিনের সমর্থক। এমনকি সৌদি আরব রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে তারা কোন সম্পর্ক রাখবে না। এই তো চলতি বছরের গোড়ার কথা, তখন সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটা বিবৃতিতে ওয়াশিংটনকে জানায়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। অর্থাৎ ফিলিস্তিনকে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে সম্মান দেবে কি দেবে না তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে সৌদি আরব আর ইসরায়েলের কূটনীতিক সম্পর্ক। শুধু তাই নয়, সৌদি সে সময় বলেছিল, যদি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং অবরুদ্ধ এলাকা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে ইসরায়েলি বাহিনীকে। কারণ, আঞ্চলিক শান্তির অর্থ ইসরায়েলের জন্য শান্তি। আর তার সঙ্গে সৌদি আরব একমত। আর সেটা কেবলমাত্র সম্ভব হবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে। ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে। হামাস আর ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর আগে থেকেই, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিল সৌদি আরব। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেই পরিকল্পনা থেকে এখন অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে রিয়াদ। সোজা কোথায়, আরব দুনিয়ার বড় সাপোর্টটাই পাচ্ছে এখন ফিলিস্তিন।
দেখুন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত আজকের নয়। বহু পুরনো বিশ্বের ইতিহাসে এদের শত্রুতা বেশ পুরনো। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের গঠন হওয়ার পর থেকে আরো চাপে পড়ে ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ফিলিস্তিন সহ এর বাইরে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ১৯৪৮ সালের পর থেকে বেড়েছে প্রায় দশগুণ। ২০২৩ সালে গোটা বিশ্বে ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি চল্লিশ লক্ষে। যত দিন যাচ্ছে তত ইসরায়েলের সামনে চ্যালেঞ্জ বাড়াচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। কূটনৈতিক মহলের মতে, একটা সময় ছিল যখন ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনিরা একা লড়ত। কিন্তু এখন ফিলিস্তিন থেকে লেবানন এবং ইরাক পর্যন্ত, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিরোধ ফ্রন্টকে। পাশাপাশি ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপে পড়েছে নেতানিয়াহুর দেশ। অপরদিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
পাল্টি খাচ্ছে ইউরোপ, গাজার অবস্থা দেখে ফিলিস্তিনকে বেশি সাপোর্ট
চলতি মাসেই আন্তর্জাতিক মহলে গুঞ্জন ওঠে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্তত চারটি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনকে যৌথভাবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে আয়ারল্যান্ড, স্পেন স্লোভেনিয়া এবং মাল্টার মধ্যে। গত সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধে, যখন বেজায় খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের। ঠিক সেই সময় তীব্র আকার ধারণ করেছে ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলন এবং জনমত। এমত পরিস্থিতিতে ইউরোপের এই চার দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনি থেকেই ফিলিস্তিনের অধিকারের বিষয়ে জড়িয়ে রয়েছে স্পেন আর আয়ারল্যান্ডের লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। যদি ১৯৮৮ সালের পর থেকে হিসাব করেন, তাহলে জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৩৯টি রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংখ্যাটা কিন্তু দিনের পর দিন বাড়ছে অর্থাৎ পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতিতে বাড়ছে ফিলিস্তিনের সমর্থন। চলতি মাসে, ফিলিস্তিনকে আয়ারল্যান্ড স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছে। এর আগেও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ বাহামাস।
যদিও জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিন সদস্ পদ পাবে কিনা তা তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। তবে হ্যাঁ, জাতিসংঘের ভিতরে বেড়েছে ফিলিস্তিনের অধিকার সীমা, আরো জোরালো হয়েছে সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিনকে অন্তর্ভুক্তি করার দাবি। ২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পেয়ে আসছে ফিলিস্তিন। কিন্তু পূর্ণ সদস্যের সুযোগ সুবিধা পায় না। আর এই সদস্য পদের বিষয়টা পুরোটাই নির্ভর করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উপর। ভোটের আগে জাতিসংঘের নিযুক্ত ফিলিস্তিনের দূত বলেছিলে, ফিলিস্তিন শান্তি চায়। ফিলিস্তিন স্বাধীনতা চায়। একটা হ্যাঁ ভোট ফিলিস্তিনের অস্তিত্বের ভোট।। আর এটা কোন রাষ্ট্রের বিপক্ষে নয়। এখন কবে জাতিসংঘের ১৯৪ তম সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিন অন্তর্ভুক্ত হবে তার চূড়ান্ত দিনক্ষণ পাওয়া কিন্তু মুশকিল। মাঝে বেশ কিছু প্রক্রিয়া আছে। ওদিকে ইসরায়েলসহ কিছু কিছু রাষ্ট্রের দাবি, ১৯৩৩ সালের মন্টে ভিডিও কনভেশন অনুযায়ী রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা রয়েছে ফিলিস্তিন নাকি তার মধ্যে পরেই না। এক্ষেত্রে একটা স্থায়ী জনগোষ্ঠী, নির্দিষ্ট সীমানা সরকার এবং অন্য দেশের সাথে সম্পর্কে যাওয়ার সামর্থের প্রয়োজন। কিন্তু এখন উল্টে যাচ্ছে পুরো অঙ্কটাই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সাপোর্ট করছে ফিলিস্তিনকে। গাজা যুদ্ধে যেমন বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের উপর করুন পরিণতি নেমে এসেছে, আবার এই গাজা যুদ্ধের কারণে ঘুরপথে গোটা বিশ্বের কাছে ভাগ্য খুলে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম