।। প্রথম কলকাতা ।।
Kankalitala: এই সতীপীঠ ঘিরে নানা অলৌকিক ঘটনার উত্তর নেই আজও। ভক্তদের সব মনষ্কামনা পূর্ণ করেন কঙ্কালী মা। এখানে কেন হয় ৫১ কুমারীর পুজো? জেনে নিন এই সতীপীঠের মাহাত্ম্যকথা।
রেলপথে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পরের স্টেশন প্রান্তিক। এই প্রান্তিক স্টেশনকে পাশ কাটিয়ে শান্তিনিকেতন থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে কঙ্কালীতলা। সতীপীঠের ৫১ তম পীঠ। তবে আর পাঁচটা সতীপীঠের থেকে অনেকটাই আলাদা, এই জাগ্রত কালীমন্দিরের অজানা ইতিহাস বলবো আপনাদের। সতীর দেহত্যাগের পর শিবের পিঠ থেকে দেবীর কাঁখাল পড়েছিল এখানেই। কাঁখাল অর্থাত কোমর। এখানে আগে দেবী বেদগর্ভা নামেই পরিচিত ছিল। এই মন্দিরের কুণ্ড বা পুকুরে দেবীর কোমর রয়েছে। এটাই মানুষের বিশ্বাস। কুণ্ডে রয়েছেন পঞ্চশিব পুকুরের পাশেই তৈরি হয়েছে মন্দির। আজও সেই কুণ্ডের জলে নামতে সাহস পান না ভক্তরা। মানুষের বিশ্বাস সেখানে বিরাজ করছেন স্বয়ং দেবী।
এই পুকুরের জলে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য। জলের তলায় বেশ কিছু পাথর রয়েছে, ভক্তদের বিশ্বাস সেগুলিই দেবীর দেহের অংশ। বীরভূমের প্রবল গরমেও পুকুরের জল শুকায়না কেন? পুকুরের তলায় থাকা পাথর তোলা হয় ২০ বছর বাদে বাদে। পুজো হয়ে গেলে ফের তা ডুবিয়ে দেওয়া হয় কুণ্ডের জলে।প্রবল গরমে যখন অনেক পুকুরের জল শুকিয়ে যায়।এই কুণ্ড সেই সময়ও জলে ভরা থাকে। তাহলে কি এই পুকুরের তলায় কোনও সুড়়ঙ্গ রয়েছে?সেই সুড়ঙ্গ পথের সঙ্গে নদীর যোগের কারণেই কুণ্ডের জল শোকায় না?
তবে মন্দিরের পাশেই কোপাই নদী। হয়তো সেই নদী থেকেই জল আসে কঙ্কালিতলা মন্দিরের কুণ্ডে। এই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা স্থানীয়দের কাছে। এই পীঠের অস্তিত্বের খোঁজ কবে মেলে তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। অনেকে বলেন, কয়েকশো বছর আগে এক সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পীঠের অস্তিত্বের খোঁজ পান। পরে অন্য এক সাধক এই পীঠে পুজোর শুরু করেন। বাংলার ইতিহাস বইতে ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, গৌড়বঙ্গের পালবংশের রাজত্বে কাঞ্চিরাজ রাজেন্দ্রচোল। বীরভূমের এই জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন।শিবভক্ত কাঞ্চিরাজই কোপাই নদীর ধারে রাজা প্রথম মহীপালের রাজত্বে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিবমন্দির। তাই এখানকার শিবলিঙ্গ কাঞ্চীশ্বর শিবলিঙ্গ নামে পরিচিত। এই শিবমন্দিরের পাশেই রয়েছে মহাশ্মশান ও পঞ্চবটী বন।
এই শক্তিপীঠের কুমারী পুজো দেখেছেন? কঙ্কালীতলা গুপ্ত তন্ত্রসাধনার জন্য বিখ্যাত। ত্রয়োদশী তিথি অর্থাৎ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোরআগের দিন এখানে ৫১ জন কুমারীর পুজো হয়। ৫১ পীঠের অন্যতম সতীপীঠ বলে ত্রয়োদশীতে সতীর দেহের ৫১টি খণ্ডকে সংকল্প করে, একটি ঘটে স্থাপন করা হয়। এরপর কালীমন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নিচে ৫১ জন কুমারীর পুজো শুরু হয়। পুজোর প্রায় এক মাস আগে থেকে শুরু হয় প্রস্তুতি। কঙ্কালীতলার আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের ৫-৯ বছর বয়সের কুমারীদের পরিবারের সদস্যরা পুজোর জন্য নাম লিখিয়ে যান। সেই তালিকা থেকেই ৫১ জনকে ঠিক করা হয়।
এই পুজো শুরু হয়েছিল ৪৭ বছরের বেশি আগে। বোলপুর কঙ্কালীতলার কাপাসটিকুড়ি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় কঙ্কালীমায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তিনি ত্রয়োদশীর দিন এই কুমারী পুজোর শুরু করেছিলেন। দীপান্বিতা অমাবস্যাতেও ধুমধাম করেই দেবীর পুজো চলে। কংকালী মাকে এদিন ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় খিচুড়ি, ভাজা, চাটনি, পরমাণ্ন ভোগ, ফ্রাইড রাইস, ডাল, পায়েস, মিষ্টি । রাতে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়। সেই খিচুড়ি ভোগ আমিষ হয়, তাতে থাকে পাঁঠার মাংস। আগে এখানে খোলা বেদীতেই দেবীর পুজো হত। এখন মন্দির তৈরি হলেও দেবীর কোনও মূর্তি নেই। রয়েছে শ্মশানকালীর বড় বাঁধানো ছবি। যাকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। এই সতীপীঠে দেবীকে কেউ বলেন দেবগর্ভা। কেউ বলেন রত্নাগর্ভি। ভৈরবকে বলা হয় রুরু। চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে তিন দিন ধরে মন্দিরে উৎসব চলে। উতসবের দিন ছাড়াও দেবীর টানে অন্যান্য দিনেও কঙ্কালীতলায় সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম