।। প্রথম কলকাতা ।।
যুক্তরাষ্ট্রে গুহার ভেতরে তেলের স্রোত বইছে। ইরান-সৌদি নয়, আমেরিকাতেই লুকিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় তেলের ভাণ্ডার? কিভাবে নুনের স্তর ভেদ করে তৈরি করা হয়েছে গুহা? গুহার ভেতরে শুধুই কি কোটি কোটি ব্যারেল তেল?কেন এইভাবে তেল জমাচ্ছে দেশটা? এই তেলের ভাণ্ডার দিয়ে কত দিন চলবে? কখনো কি এই তেল ব্যবহার করা হয়েছে? স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ নিয়ে এতটা গোপনীয়তার কারণই বা কী? ভেতরে ভেতরে কোন রহস্যের জাল বুনে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র? একেবারে সুরক্ষিত একটা জায়গা। কৌশলে পুরোটাই তৈরি করা হয়েছে ভূগর্ভে মাটির নীচে।
টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, আর লুইজিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে মাটির নীচে নুনের স্তরের একটা অংশের নুন গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয়েছে এই গুহা। প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল মজুত রাখাই টার্গেট। মাটির ৩৩০০ ফিট নীচে তৈরি করা অনেকগুলো গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে। মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল জমা রাখার চেয়ে এই পদ্ধতি অনেক সস্তা, অনেক নিরাপদ। ভূগর্ভস্থ নুনের রাসায়নিক গঠন আর ভূতাত্বিক চাপ, ঠিক এই দুটো কারণেই এখান থেকে তেল বেরোতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল এখান থেকে তেল ছাড়া হয় কিভাবে? তেল জলের থেকে হালকা। তেল বের করার জন্য এক্ষেত্রে নুনের তৈরি গুহাতে জল পাম্প করা হয়, আর এর মধ্য দিয়ে অপরিশোধিত তেল ভেসে ওঠে।সেখান থেকেই তেল সংগ্রহ করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু, এখানে কী সত্যিই তেলের স্রোত বইছে?
এখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জরুরি প্রয়োজন সামাল দেওয়ার জন্য জমা করে রাখা যাবে ৭০ কোটি ব্যারেল তেল। কিন্তু রহস্য তো অন্য জায়গায়। আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মত পেট্রোলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে তেলের ভান্ডার গড়ে তুলেছে তিলে তিলে, তার মত বড় মজুত পৃথিবীর আর কোথাও নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। আসলে, এই তেলের মজুত গড়ে তোলার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তেল সংকটের কারণে ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল নিষেধাজ্ঞার ধাক্কায় সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ। আর ঠিক সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায়, মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলার ডিসিশন নেয়।
২০১৯ এর বিবিসির রিপোর্ট বলছে, এই জরুরি তেলের মজুতে আমেরিকার ৩১ দিন চলে যাবে। তবে এখান থেকে তেল বের করা এতো সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার অবধি পৌঁছে দিতে প্রায় দু সপ্তাহ সময় লাগবে। তাছাড়া এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অশোধিত আকারে কিন্তু গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করাতে হবে। যদিও, এভাবে এই তেল বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৯১, ১৯৯৭, ২০১১ এমনকি ২০২২ সালেও এই তেল ব্যবহার করা হয়েছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম