।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas war: যে কোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হয়ে যেতে পারেন নেতানিয়াহু, বড় বিপদে হামাসও। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে মহাবিপদ। ক্ষোভে ফুঁসছে ইসরায়েল। এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে জার্মানি? তাহলে কি পাল্টি খেল ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র? জার্মানি নেতানিয়াহুর বন্ধু হওয়ার সত্ত্বেও, হঠাৎ এমন স্টেপ নিল কেন? এভাবেই জোর বাড়ছে হামাসের। ফিলিস্তিন পৌঁছে গিয়েছে তার স্বপ্নের কাছাকাছি। আরও জটিল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি। ঠান্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েল, বাড়ছে শত্রু সংখ্যা।
হঠাৎ ফিলিস্তিনের দিকে জার্মানি, নেতানিয়াহুর মাথায় হাত!
বিশ্বজুড়ে একে একে একের পর এক দেশ পাশে দাঁড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের। জোরালো হচ্ছে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি। ইউরোপের যে দেশগুলো একটা সময় ফিলিস্তিনের থেকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল, আজ সেই দেশগুলোই ইসরায়েলের হুমকিকে অমান্য করে পাশে দাঁড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের। জার্মানির সঙ্গে ইসরায়েলের সখ্যতা কে না জানে। যখন হামাস আর ইসরায়েলের সংঘাত বেঁধেছিল, তখন জার্মানি সরকার জোর গলায় বলেছিল, তারা ইসরায়েলের পাশেই আছে। আজ সেই জার্মানির অন্দরে বাজছে ইসরায়েল বিরোধী সুর। শুধু তাই নয়, জার্মানির বিরোধী পক্ষ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দাবি করেছে। জার্মানির উগ্র বামপন্থী বিরোধী দ্যা লেফট জার্মানি সরকারের কাছে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হামাস সহ অন্যান্য সশস্ত্র দলকে মোকাবিলা করতে পারে। ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির জন্যও জার্মানির সংসদে একটি প্রস্তাব উত্থাপনের কথাও জানান তারা। তাদের বক্তব্য, ফিলিস্তিন ইসরায়েলের থেকেও হামাস এবং অন্যান্য সংগঠনের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারবে। হয়ত ইসরায়েলকে এটা সামরিকভাবে করতে পারবে, কিন্তু ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এর মোকাবিলা করতে পারবে অভ্যন্তরীণ কাঠামোর মাধ্যমে। এমন বহু দেশ আছে যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আর এমন পরিস্থিতিতে সেই ধারাবাহিকতা থেকে সরে আসা উচিত নয়। বরং একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা উচিত। কয়েকদিন আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের ৩ দেশ। নরওয়ে স্পেন আর আয়ারল্যান্ড। এই তিন দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির প্রয়োজনে ফিলিস্তিনকে তারা রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। আর এই স্বীকৃতির মাধ্যমেই শান্ত হবে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চল।
ঠান্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েল, হামাস ইস্যুতে দ্বিধাবিভক্ত জার্মানি
প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই জার্মানি কিন্তু প্রথম থেকেই ইসরায়েলকে নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে। যা অনেকটা বিস্মিত করেছে গোটা মধ্যপ্রাচকে। গত অক্টোবরে তিউনিশিয়া গিয়ে জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার প্রুগেল, ইসরায়েলিদের ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসের শিকার হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ওই সময় আবার তিউনিশিয়া ছিল ফিলিস্তিনের সমর্থনে। যার জেরে প্রুগেলের কথায় ছড়ায় ব্যাপক বিতর্ক। বিগত কয়েক দশক ধরে, জার্মানি আরব বিশ্বের প্রতি সুসম্পর্কের পাশাপাশি ইসরায়েলের সাথেও গভীর সম্পর্কের বন্ধন গড়ে তুলেছে। জার্মান সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা বহু সংস্থা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, হামাস আর ইসরায়েল দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে, তখন কিন্তু জার্মানি তার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি। নিরপেক্ষতা বজায় না রেখে সাপোর্ট করেছে ইসরায়েলকে। কিন্তু এখন জার্মানির কূটনীতির সেই অঙ্কটা পুরো অন্যরকম। সাম্প্রতিক সপ্তাহ গুলিতে, জার্মানির কিছু কর্মকর্তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নানান সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। যদিও বার্লিন নিজেকে ইসরায়েলের অন্যতম সমর্থক হিসেবে দাবি করে। অথচ এই জার্মান সরকার ইরাক যুদ্ধে অংশ নেয়নি। উপরন্তু ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি সিরীয় উদ্বাস্তুকে নিজের দেশের স্বাগত জানিয়েছিল। বার্লিন ইউরোপের বৃহত্তম ফিলিস্তিনি প্রবাসীদের আবাস স্থল, আরব সংস্কৃতি এবং বুদ্ধিজীবী জীবনের একটা অন্যতম কেন্দ্র।
যখনই ইউরোপের একের পর এক দেশ ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট করছে, তখন সেই দেশগুলোর সঙ্গে আবার ঠান্ডা লড়াইয়ে মেতেছেন নেতানিয়াহু। জাতিসংঘের বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্রই কিন্তু ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছে। তবে ইসরায়েল আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বলয়ের বেশ কিছু দেশ এখনও পর্যন্ত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেনি। সেই ২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিন জাতিসংঘে মর্যাদা পাচ্ছে একটা অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে। ইউরোপের তিন রাষ্ট্র একত্রে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে এই তিন দেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর মতে, যে যে ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দিচ্ছে, তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য একটাই। আর সেটা হল সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা। এটা কখনই মেনে নেবেন না নেতানিয়াহু। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এভাবেই ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইউরোপের সঙ্গে কার্যত ঠান্ডা লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন তিনি।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ফল মারাত্মক, নেতানিয়াহুর সামনে বড় বিপদ
ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, আর ওদিকে হামাসের শীর্ষ নেতাদের গলায় বিঁধেছে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানার কাঁটা। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যে কোন মুহূর্তে জারি হয়ে যেতে পারে গ্রেফতারি পরোয়ানা। নেতানিয়াহুর মতে, এটা নজিরবিহীন নৈতিক অবমাননা। তারা হামাসের বিরুদ্ধে ন্যায় সঙ্গতভাবে যুদ্ধ করেছে। কারণ হামাস একটা গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন। ইসরায়েল মনে করে, হামাস হলোকাস্টের পর ইহুদি জনগণের উপর চালিয়েছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হামলা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খানের আচরণ অনেকটা নাৎসি অধ্যুষিত জার্মানির বিচারকদের মতো। যারা একসময় ইহুদিদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তাদের জন্যই ঘটেছিল হলোকাস্টের মতো মারাত্মক ঘটনা। আর একবার যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু আইসিসি রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো সুযোগ পেলেই আটক করতে পারবে অভিযুক্তদের।
সোজা কথায়, তারা বাধ্য থাকবে। ওই সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী ১২৪ টা দেশের মধ্যে কিন্তু রাশিয়া, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র নেই। ইসরায়েলও ওই সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার অর্থ, নেতানিয়াহু যদি ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে দেখা করেন, সে ক্ষেত্রেও বড় ঝুঁকি থেকে যাবে। তিনি সহজে আর অন্যান্য দেশগুলোতে সফর করতে পারবেন না। ইতিমধ্যেই, ব্রিটেন কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে, ব্রিটেন তা কার্যকর করবে। নেতানিয়াহুর পাশাপাশি একইভাবে ফল ভুগবে হামাসের শীর্ষ কয়েকজন নেতাসহ ও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। আর ওদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া সহজে মিত্রদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। তখন তাকে বেশিরভাগ সময় কাটাতে হবে কাতারে। কারণ কাতারও ইসরায়েলের মত আইসিসির রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, অপর দুই অভিযুক্ত হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার আর মোহাম্মদ দেইফ গাজাতে আত্মগোপন করে আছেন। তাই এই গ্রেফতারি পরোয়ানা তাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে না।
এ সমস্ত ডামাডোলের মাঝে জার্মানিও জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা চূড়ান্ত করলে তা মেনে চলবে দেশটা। জার্মান চ্যান্সেলরের কথায়, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে নেতানিয়াহু যদি জার্মান সফরে যান, তখন তারা তাকে গ্রেফতার করবেন। কারণ তারা আইসিসির আইন মেনে চলে। আর এখানেও কিন্তু একইভাবে জার্মানির সিদ্ধান্তে ক্ষোভ আর নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। জার্মানির সরকারের সঙ্গে ইসরায়েল দূতাবাস এই বিষয়ে আলোচনার চেষ্টাও করছে। নেতানিয়াহু সরকার গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে অনুরোধ করছে তার মিত্র দেশগুলোকে। ওদিকে শুধু জার্মানি নয়, ফ্রান্স নরওয়েও জানিয়ে দিয়েছে, তারা আইসিসির নির্দেশই মেনে চলবে। অর্থাৎ নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করতে পারে। এই রুল একবার জারি হয়ে গেলে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী তখন জার্মানি, হল্যান্ড, গ্রীস, ফ্রান্স, জাপান এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে আর ভ্রমণের অনুমতি পাবে না। বুঝতে পারছেন, এই মুহূর্তে এমনি থেকেই যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলকে ঠিক কতটা সজাগ থাকতে হচ্ছে, তার উপর যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়, তাহলে বড়সড় বিপাকে পড়তে পারেন নেতানিয়াহু।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম