।। প্রথম কলকাতা ।।
Azad Hind Fauj: ১৯৪৩ সালের ২১শে অক্টোবর, এই দিনটি ভারতবর্ষের (India) কাছে অত্যন্ত গৌরবময় একটি দিন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে এই দিন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজাদ হিন্দ সরকার। ১৯৪২ সালে তৈরি হয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ (Azad Hind Fauj)। আজাদ হিন্দ সরকার স্বীকৃতি পেয়েছিল জার্মানি, ইতালি, বার্মা, ক্রোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল জাপান থেকে। আজাদ হিন্দ (Azad Hind) গঠনের পিছনে জাপানের (Japan) ভূমিকা অনেকটা।
গোটা বিশ্বজুড়ে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (Second World War) দামামা বাজছে, তখন ব্রিটিশদের অত্যাচার থেকে ভারতকে মুক্ত করতে আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন হয়। আজাদ হিন্দ সরকার জাপানের কাছ থেকে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের অধিকার পেয়েছিল। এমনকি এই সরকারের ছিল নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা, দণ্ডবিধি আর মুদ্রা। এই বাহিনী গঠন হয়েছিল জাপানের মাটিতে। শুরুটা করেছিলেন ভারতের বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। এই বাহিনীর দায়িত্ব পরবর্তীকালে তুলে দেন নেতাজির কাছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজারের বেশি। মহিলাদের একটি ইউনিট ছিল। আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এই সরকারের ছিল একটি নিজস্ব ব্যাঙ্ক, যাকে বলা হত আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্ক। এই ব্যাঙ্কে দশ টাকার কয়েন থেকে পাওয়া যেত ১ লক্ষ টাকার নোট। সেই নোটে ছিল সুভাষচন্দ্র বসুর ছবি।
ভারতের ইতিহাসে ১৫ই আগস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কিন্তু তার আগেই ভারতবাসীর একাংশ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন। সময়টা ছিল ১৯৪৪ সালের ১৪ই এপ্রিল। মৈরাঙের মাটিতে চলেছে সম্মুখ সমর। ব্রিটিশদের থেকে এই জয়গা ভারতীয়রা কেড়ে নিতে পেরেছিল। নিজেদের দেশের কিছুটা অংশ পুনরুদ্ধার করতে পেরে সেই অংশেই তেরঙ্গা পতাকা উড়িয়ে ছিল স্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজ। ১৫ই আগস্ট এইদিন বিজয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল দিল্লির লালকেল্লায়। কিন্তু ১৯৪৪ সালে দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মৈরাঙে সর্বপ্রথম ভারতের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। ইতিহাসের পাতায় আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ের কথা আমরা জানতে পারলেও প্রকৃত সংগ্রাম সম্পর্কে কতজনই বা খোঁজ নেন ?
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দামামার মধ্যেই জাপানের সাহায্য নিয়ে আজাধীন ফৌজ বাহিনী এগিয়ে চলেছিল ভারত জয়ের লক্ষ্যে। মনিপুর নাগাল্যান্ড পেরিয়ে আজাদ বাহিনী প্রবেশ করে কোহিমায়। প্রকৃতপক্ষে কোহিমা থেকেই ভারতের বিজয় সূচক ইতিহাসের শুরু। ব্রিটিশ সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল কোহিমার এই যুদ্ধে। আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং ব্রিটিশ সরকারের এই লড়াই ইতিহাসে ব্যাটেল অফ কোহিমা নামে পরিচিত। পরাজয় হলেও আজাদ বাহিনীর সংগ্রাম ছিল বীরত্বের। এই বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশ সরকারের রেল পরিষেবাকে আটকে দেওয়া। তারপর আসাম পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ। নাগাল্যান্ডে আজাদ হিন্দ বাহিনী জয় লাভ করলেও, তার বিনিময় দিতে হয়েছিল ২৪ হাজার সৈন্যের প্রাণ।
১৯৪৪ সালের ১৪ই এপ্রিল ছিল ইতিহাসের সেই বিশেষ দিন। বিকেল ৫ টার সময় ইম্ফল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে মনিপুরের বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাং অঞ্চলে সর্বপ্রথম ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আজাদ হিন্দ বাহিনী। পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে সূচনা হয় ভারতের বিজয় উৎসব। এই পতাকাটি উত্তোলন করেছিলেন নেতাজির নেতৃত্বে কর্নেল শওকত আলি মালিক। ইনি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর বাহাদুর গ্রুপের সদস্য । বর্তমান পাকিস্তানের মুলতানে জন্ম। প্রথমে তিনি ব্রিটিশ সৈন্য দলে যুক্ত ছিলেন কিন্তু তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠালে জাপানিদের হাতে বন্দী হন এবং পরবর্তীকালে যোগ দেন আজাদ হিন্দ বাহিনীতে। মৈরাঙে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরে নেতাজি আহবান করেছিলেন ‘ দিল্লি চলো ‘।
কিন্তু এই সাফল্য বেশি দিন ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুদ্ধের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছিল। ফলে দেখা দেয় অস্ত্রের সমস্যা। আজাদ হিন্দ বাহিনীর যে সময় দরকার ছিল জাপানিদের সহযোগিতা, সেই সময় পায় চরম অসহযোগিতা। অস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন থাকলেও তা পাননি। এই বাহিনীর কিছু সৈন্য নিজেদের মত পরিবর্তন করে যোগ দেন অন্য দলে। পাহাড়ি অঞ্চলের অতিরিক্ত বৃষ্টি, হরপা বান, খাদ্যসঙ্কট , ম্যালেরিয়ার মত পরিস্থিতি গুলি অসহায় করে তুলেছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীকে। শত্রু শিবির বারংবার সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করতে বলে। পাশাপাশি নানান খাবারের লোভ দেখায়, কিন্তু সেদিকে গুরুত্ব দেয়নি সৈন্যরা। এমনকি মাইকে ঘোষণা করে দূর থেকে খাবারের প্যাকেট দেখানো হয়েছিল। প্রায় দু-তিন দিন ধরে ভারতীয় সৈন্যরা না খেয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীর স্মরণে মৈরাঙে এখন বর্তমানে রয়েছে আই .এন. এর হেডকোয়ার্টার। যা মিউজিয়ামে রূপান্তরিত হয়েছে। রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি। ইতিহাসের পাতায় ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলিত হলেও ভারতের বিজয় পতাকা প্রথম উত্তোলিত হয়েছিল মৈরাঙে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম