।। প্রথম কলকাতা ।।
Mymensingh in Bangladesh: শিল্প ও সাহিত্যের জেলা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ। এখানকার মাটিতে রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঐতিহ্যের প্রবাহমান স্রোতধারা। ভারত-বাংলাদেশ যখন একসাথে ছিল, অর্থাৎ অবিভক্ত দেশ, সেই সময়ে ময়মনসিং ছিল একটা বিশাল বড় জেলা। পরিচয় করাতে ছিল একটা সুন্দর প্রবাদ। ” হাওর জঙ্গল মহিষের শিং, এই তিনে ময়মনসিং”। প্রবাদটা শুনে নিশ্চয়ই ধারণা করতে পারছেন, এখানে ঠিক কি কি রয়েছে। চলুন আজ আপনাকে বলব বাংলাদেশের বিখ্যাত ইতিহাস সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের কথা।
বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহের বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল এই জেলা। মূলত অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা বলে মনে করা হয়। যত সময় গিয়েছে জেলার আকারের পরিবর্তন ঘটেছ। এই জেলায় রয়েছে মোট ১৩ টি উপজেলা। এখানে যে ঠিক কতগুলো নদী আছে আপনি গুনে শেষ করতে পারবেন না। একগুচ্ছ নদী, কমপক্ষে ৪৪ থেকে ৪৫টা নদী। যদি বলা হয়, বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি, লোক উৎসব, লোকসংগীত আর লোককথার দিক থেকে কোন জেলা শীর্ষে , তাহলে প্রথমেই চলে আসবে ময়মনসিংহের নাম। এখানকার সংস্কৃতি ঐতিহ্য শুধুমাত্র দেশটার জাতীয় স্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের মৈমনসিংহ গীতিকা ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় অনূদিত হয়ে মর্যাদা পেয়েছে বিশ্বসাহিত্যে।
যদি চান একদিন ঘুরে গোটা ময়মনসিংহের সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় জায়গা গুলো দেখে ফেলবেন, সেটা হবে না। তালিকাটা বড্ড লম্বা। বোটানিক্যাল গার্ডেন, ময়মনসিংহ জাদুঘর, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী পার্ক, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা, গৌরীপুর লজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, শশী লজ, নজরুল স্মৃতি কেন্দ্র, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, মহারাজ সূর্যকান্তের বাড়ি , গৌরিপুর রাজবাড়ি, রামগোপাল জমিদার বাড়ি, ফুলবাড়িয়ার অর্কিড বাগান, চিনা মাটির টিলা, কুমিরের খামার, তেপান্তর ফিল্ম সিটি সহ প্রচুর কিছু। যদি আপনি মিষ্টি বিলাসী হন তাহলে মুক্তাগাছার মন্ডা খেতে ভুলবেন না। এই মন্ডার সাথে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যের স্বাদ।মন্ডার পাশাপাশি ময়মনসিংহে গেলে আর একটা খাবার একদমই মিস করবেন না। টক মিষ্টি জিলাপি। এর বিশেষত্ব হল, জিলাপি বানাতে ব্যবহার করা হয় তেঁতুল। বলা হয়, ময়মনসিংহের মানুষ নাকি শুটকি খেতে খুব পছন্দ করেন। তাদের রান্না করা শুটকির এক বিশেষ পদের নাম চ্যাপার পুলি।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন এই শহর, এখন আমুল বদলে গেলেও পুরাতনের ছোঁয়া রয়েছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা সমৃদ্ধ করেছে ময়মনসিংহ শহরকে। যার প্রাণ কেন্দ্রে স্ব মহিমায় রয়েছে লাল ইটের রাজবাড়ি শশী লজ। প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সাদা মার্বেল পাথরের গ্রিক দেবী ভেনাসের প্রতিমূর্তি। প্রাসাদটিতে রয়েছে ১৬ টি গম্বুজ। এই রাজবাড়ী ১৯৫২ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হিসাবে। বর্তমানে এই মহলের তিনটি কক্ষে রাজবাড়ীর যাবতীয় পুরাকীর্তি, রাজার ব্যবহার্য দুষ্প্রাপ্য জিনিস থেকে শুরু করে আসবাবপত্র সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এখান থেকে বেরিয়ে ঠিক পাঁচ মিনিট হাঁটলেই, সামনে পাবেন আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ভবন। এটি নির্মাণে লোহা ব্যবহারের কারণে স্থানীয়দের কাছে লোহা কুঠি নামে পরিচিত। এটি আলেকজান্ডার ক্যাসেল। নান্দনিকতা এবং আভিজাত্যে পরিপূর্ণ ক্যাসেল তৈরি জন্য চীন থেকে আনা হয়েছিল কারিগর। এখান থেকে আরেকটু কিছুটা দূর গেলে বহ্মপুত্র নদীর তীরে রয়েছে জয়নুল আবেদন পার্ক। নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে মন শান্ত হয়ে যাবে। এই পার্ক ময়মনসিংহের অন্যতম বিনোদনের স্থান। নৌকা করে ভেসে বেড়াতে পারবেন নদীর বুকে। মনে হবে, যেন কোনো গ্রামীন মেলায় চলে এসেছেন, প্রচুর দোকান। ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি। প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অন্যতম নিদর্শন। যার অন্যতম আকর্ষণ রাজরাজেশ্বরী মন্দির, যেটি রয়েছে প্রাসাদের প্রবেশের মুখে।বাংলাদেশের ময়মনসিংহের এখানেই রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় বারোশ একরের উপর তৈরি বিশাল ক্যাম্পাস। যেখানে হারিয়ে যাওয়া খুবই সহজ।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/736661015323165/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
রূপ বৈচিত্রের সূক্ষ্ম বুননে আঁকা বাংলাদেশ। যার প্রত্যেকটা জেলায় গেলেই পাবেন মনের খোরাক। প্রত্যেকটা জেলাতেই কমবেশি রয়েছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য। এছাড়াও রয়েছে স্ব স্ব জেলার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আর ভাষার বৈচিত্রময় মিষ্টতা। আপনার কাছে বাংলাদেশের কোন জেলা সবচেয়ে প্রিয়? কোন জেলার সৌন্দর্য আপনাকে বেশি মুগ্ধ করে? কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম