।। প্রথম কলকাতা ।।
Kenjakura Muri Mela: শীতের রোদ্দুরে খোলা প্রকাণ্ড মাঠ, সেখানে দলে দলে মানুষ এসে হাজির হচ্ছেন। সঙ্গে আছে পরিবারের লোক, আবার কারোর সঙ্গে রয়েছে প্রচুর আত্মীয়-স্বজন। একটাই উদ্দেশ্য, মাঠে গিয়ে সবাই মিলে মুড়ি খাবেন। সঙ্গে আছে মুড়ি, চপ, বেগুনি, সিঙারা। যার যেমন সামর্থ্য তেমন ভাবেই পুঁটলি বেঁধে চলে যান মাঠে। তারপর সবাই মিলে মাটিতে বসে গোল হয়ে একসাথে যোগ দেন মুড়ি উৎসবে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে রয়েছে প্রচুর সংস্কৃতি। ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার এক গ্রামে হয় মুড়ির মেলা। এই মেলা দেখতে শুধু এই রাজ্য নয়, ভিন রাজ্য থেকেও বহু মানুষ এখানে হাজির হন।
কেন মুড়ি খেতে জড়ো হন লক্ষাধিক মানুষ ?
মেলার মূল কেন্দ্রে রয়েছে মুড়ি। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি দিনে মুড়ি ভিজিয়ে খাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ হাজির হয় এই বিশেষ মেলায়। সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে বাঁকুড়ার মুড়ির মেলা অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বাঁকুড়ার লাল মাটি আর তার সাথে ধবধবে সাদা মুড়ির মেলা যেন অন্য এক প্রেমের কথা রচনা করে। শীতের রোদে খোলা আকাশে দারকেশ্বর নদীর চরে মেলা যেনো মুড়িময় হয়ে ওঠে। প্রতিবছর মাঘ মাসের ৪ তারিখে এই মেলা আয়োজিত হয়। বাঁকুড়ার এক নম্বর ব্লকের কেঞ্জাকুরা গ্রামে দারকেশ্বর নদীর পাড়ে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মানুষ এই মুড়ির মেলায় অংশগ্রহণ করেন। মেলায় অংশগ্রহণ করার একটাই মূল উদ্দেশ্য , জলে ভিজিয়ে মুড়ি খাওয়া।
প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাটটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয় এই মুড়ির মেলায়। তার মধ্যে থাকে আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্য জেলার লোকজন। প্রত্যেকে গামছা করে আনেন মুড়ি। তারপর দারকেশ্বরের চড়ে গর্ত খুলে, গর্তের পরিষ্কার জল গামছা দিয়ে ছেঁকে নেওয়া হয়। সেই জলে ভিজিয়ে খাওয়া হয় মুড়ি। মেনুতে থাকে মুড়ির সাথে আলুর চপ , বেগুনি, পিয়াঁজ, লঙ্কা, সিঙারা প্রভৃতি। অনেক গ্রামবাসী আবার সঙ্গে নিয়ে আসেন নাড়ু ও পিঠে। মেনুতে বাদ যায়না টমেটো ও কড়াইশুঁটি।
বাঁকুড়ার মুড়ির মেলা একশো বছরেরও বেশি প্রাচীন । তবে গত ত্রিশ বছরে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরত্বে দারকেশ্বর নদীর তীরে রয়েছে সঞ্জীবনী মাতার আশ্রম। অনেক কাল আগে আশ্রমের আশেপাশেএকসময় ঘন জঙ্গল ছিল। হরিনাম সংকীর্তন করতে এবং শুনতে যাঁরা এই আশ্রমে আসতেন, তাঁরা রাত্রে আর ফিরতে পারতেন না। তাই সঙ্গে আনা মুড়ি ও বাতাসা ছিল প্রকৃত ভরসা। এই রেওয়াজ ধীরে ধীরে বর্তমানের মুড়ির মেলার রূপ ধারণ করেছে। মেলার দিন সঞ্জীবনী মাতার আশ্রমে খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হয়। মুড়ি মেলার অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো, পড়ন্ত বিকেলে মেলার পর আশ্রমের খিচুড়ি প্রসাদ সংগ্রহ ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম