।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran-Israel conflict: ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরান পেতে চলেছে আরো কট্টর ধর্মীয় নেতা। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছেলে আসতে পারেন ইরানের ক্ষমতায়। জোর বিতর্ক আর তুমুল সমালোচনা। যদি রাইসির জায়গায় খামেনির ছেলে আসে, তাহলে ইরানের ভিত আরো শক্ত হবে, নাকি দুর্বল? বড় প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলে। ইরান স্পষ্ট বলে দিয়েছে, তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি বদলাবে না। রাইসির হঠাৎ মৃত্যু খামেনির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একটা বড় পরীক্ষা। ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতার হাতে যা যা ক্ষমতা আছে শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। আর সেই পদ এবার কে পেতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু জল্পনা। আদৌ কি রাইসির অভাব পূরণ করতে পারবেন খামেনির ছেলে মোজতবা? ইরান এখন রয়েছে শত্রু বলয়ের মাঝে, ভুল মানুষ ক্ষমতায় এলে শত্রুদের হাতের মুঠোয় চলে যেতে পারে ইরান। কতটা আশঙ্কায় তেহরান? ক্ষমতার হাত বদলে, আদৌ কি ইরানের নীতি বদলাবে? নাকি একই অবস্থানে শত্রুদের মোকাবিলা করবে দেশটা? খামেনির ছেলের হাতে প্রচুর ক্ষমতা।
খামেনির ছেলের রাইসির থেকেও ক্ষমতাবান? শক্ত হাতে সামলাবে ইরান
ইব্রাহিম রাইসি কিন্তু শুধুমাত্র ইরানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, ছিলেন ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার প্রধান দাবিদার। তার মৃত্যুর পর, ইরানে যেমন একদিকে নেমেছে শোকের ছায়া, অপরদিকে ইরানের কিছু মানুষ রয়েছেন রীতিমত সেলিব্রেশন মুডে। তারই ভিডিও ছবি হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ ইরানের অভ্যন্তরে রাইসির বিরোধীর সংখ্যা কম ছিল না। তারা এই দুর্ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে, তৈরি করছেন নানান মিম। এমনকি ইরানের রাতের আকাশে আতশবাজি ছাড়তেও দেখা গিয়েছে। রাইসি ছিলেন কট্টর পন্থায় বিশ্বাসী। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি ইরানের উদারপন্থী শাহ আসনের বিরুদ্ধে নানান প্রতিবাদে অংশও নিয়েছিলেন। তার সরকার পরিচালনার ধারণা ইরানের কিছু মানুষের কাছে তাকে অজনপ্রিয় করে তুলেছিল। পাশাপাশি রয়েছে পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ হয়েও সাম্প্রতিক সময়ে দুর্বল হয়ে পড়ছিল ইরানের অর্থনীতি। দেশটাতে গ্রাস করছে আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক বেকারত্ব সহ আমলা তান্ত্রিক দুর্নীতি। এমত পরিস্থিতিতে যারা রাইসিকে ভালবাসতেন কিংবা রাইসির সমর্থক তারা চাইছেন রাইসির মতোই একজন ব্যক্তি ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসুক। অপরদিকে বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের একেবারেই বিরুদ্ধে।
তবে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, হয়তো ইরান পেতে চলেছে রাইসির থেকেও আরো বড় কট্টরপন্থী নেতাকে। আয়াতুল্লাহ খামেনির ছেলেই হতে পারেন ইরানের পরবর্তী নেতা। তাকেই আপাতত মনে করা হচ্ছে খামেনির উত্তরসূরীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। তবে আয়াতুল্লাহ খামেনির ছেলে মোজতবা খামেনি ইরানের রাজনৈতিক মহলে খুব একটা জনপ্রিয় নন। তিনি রাজনীতির অন্তরালে থাকা মানুষ। তবে হ্যাঁ, ক্ষমতার দিক থেকে কিন্তু তার প্রভাব প্রতিপত্তি বিশাল। দীর্ঘদিন তিনি ইরানের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। কিন্তু কি বলুন তো, রাইসির মৃত্যুর আগে যতবার প্রশ্ন উঠেছে, আয়াতুল্লাহ আলি খামিনির উত্তরসূরি কে হবেন, তখন কিন্তু তার ছেলের নাম আসেনি। এসেছে ইব্রাহিম রাইসির নাম। অর্থাৎ ইরানের বহু মানুষ ওই পদে রাইসিকেই দেখতে চেয়েছিলেন। এবারও তারা আশা করছেন, ওই পদে রাইসির মতোই একজন মানুষ আসবেন। রাইসির মৃত্যুর আগে মোজতবা খামেনি যে ইরানের পরবর্তী নেতা হতে পারেন, এমনটা কিন্তু ইরানের মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি। কিন্তু এখন দ্বিগুণ বেড়েছে সেই জল্পনা। বিশ্লেষক মহলের গুঞ্জন বলছে, হয়ত ইরানের ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা এবার অবসর নেবেন। আর তার জায়গায় নতুন উত্তরসূরী নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন। রাইসির মৃত্যু যেন নতুন মোড় দিল ইরানের দুটো ঘটনাকে।
প্রথমত, হঠাৎ করে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সূচনা, আর দ্বিতীয়ত খামেনির স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের গতিশীলতাকে পরিবর্তন করা। আর সেখানেই চলে আসছে সর্বপ্রথম মোজতবার নাম। ২০০৯ সালেও ইরানে মানুষ খামেনির উত্তরসূরী হিসেবে তার ছেলের কথা বলতে শুরু করলেও, অনেকে এটাকে একটা সস্তা গুজব বলে মনে করেছিল। কিন্তু এখন সেটাই হয়তো সত্যি হতে চলেছে। এতদিন তিনি জনসাধারণের চোখে ছিলেন প্রায় অদৃশ্য, কিন্তু এখন ইরানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটা ক্রমবর্ধমান অংশ প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন করছে। একটু কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ইরানের বিরোধীপক্ষ। কারণ আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ৬ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র হল ৫০ বছর বয়সী মোজতবা খামেনি। তিনি রক্ষণশীল হিসেবেই পরিচিত। বেড়ে উঠেছেন রাজনৈতিক অভিজাতকদের মধ্যে। শুধু তাই নয় বিপ্লবী ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রথম থেকেই তার বাবা খামেনির অধিদপ্তর পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। কিন্তু এখানেও রয়ে গিয়েছে একটা বড় প্রশ্ন। কারণ ইরানের নিয়মে বংশগত শাসনের অবসান ঘটেছে বহু আগেই। যদি আয়াতুল্লাহ খামেনি তার নিজের ছেলেকে তার পদে বসান, তাহলে ইরানের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে পারে, যে তাদের দেশে সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনে কোন গণতন্ত্র নেই। চালু রয়েছে বংশানুক্রমিক ব্যবস্থা। পাশাপাশি এমন পদক্ষেপে গোটা বিশ্বের কাছে নতুন প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে ইরান। তাই বহু সমালোচক মনে করছেন, হয়তো আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেই চাইবেন না, তার ছেলে পরবর্তীকালে তার পদে বসুক। আবার অপরপক্ষ মনে করছে, যেহেতু মোজতবা খামেনির রাজনৈতিক কৌশলে পারদর্শী, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীতে তার বড় প্রভাব রয়েছে। এমনকি এই গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গেও তার গভীর যোগাযোগ, ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে তিনি। যেহেতু এখন ইব্রাহিম রাইসি নেই তাই এই মুহূর্তে মোজতবাকে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির যোগ্য উত্তরসূরি বলে এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকরা।
রহস্যময় ইরানের রাজনীতি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাড়ছে খামেনির চিন্তা!
আসলে কি বলুন তো, এমত পরিস্থিতিতেই ইরানের মধ্যে দেখা দিয়েছে একটা দ্বিধা বিভক্ত পরিস্থিতি। কারণ রাইসির মৃত্যু এমন একটা সময় হল, যখন ইরান পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। ইরানের শক্তিশালী বাহিনী রেভ্যুলেশনারী গার্ডের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একজন নেতা ছিলেন রাইসি। তার মৃত্যুর আগে থেকেই তো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ৮৫ বছর বয়সী খামেনির স্বাস্থ্য যেহেতু ক্রমে খারাপ হতে শুরু করেছে, তাই ইরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। তার উপর রয়েছে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভের পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি সহ ইসরায়েল এবং পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তেজনার মত পরিস্থিতি গুলো। এই সময় রাইসির শূন্যস্থানটা পূরণ করতে না পারলে দুর্বল হয়ে যেতে পারে ইরানের ভিত। তবে কূটনৈতিক মহলের মতে, রাইসির মৃত্যুতেও ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতিতে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। কারণ ইরানের রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি চলছে নির্দিষ্ট একটা পথে। যদি পরবর্তীকালে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পরিবর্তন হয়, সেক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে ইরান চলবে সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পথে। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন কিংবা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য থেকে কখনোই পিছু হটবে না। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদে যেই বসুক না কেন, খামেনির পরিবর্তে যেই আসুক, তাকে ওই দৃষ্টি ভঙ্গির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। রাইসির মৃত্যুর পর সুগম হয়েছে মোজতবা খামেনির বাবার উত্তরসূরী হওয়ার পথ। যদিও ইরানের ধর্মীয় এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিন্তু অনেকটা রহস্যময়। তাই খামেনির জায়গায় কে আসবে, সেই সিদ্ধান্ত কিছুটা নির্ভর করছে দেশটার জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাদের তৈরি একটি কাউন্সিলের হাতে। ইরানের এই কাউন্সিল তাদের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে খামেনির জায়গায় কাউকে বেছে নেবে, নাকি সবাই যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে, সেটাই দেখার। এখনো পর্যন্ত সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি ইরান।
খামেনির হাতে মারাত্মক ক্ষমতা, কন্ট্রোল করছে পুরো ইরানকে
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, এই যে বারংবার বলা হচ্ছে ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর একজন ধর্মীয় নেতার হাতে। এটা কিন্তু সত্যি। ইরানের প্রেসিডেন্টকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেও, ওই ধর্মীয় নেতার উপর তাকে নির্ভর করতে হয়। সেই ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে রয়েছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি কিন্তু দেশটার প্রধান এবং কমান্ডার ইন চিফ। শুধু তাই নয়, তার হাতে রয়েছে ইরানের সরকারি পুলিশ এবং নীতি পুলিশের কর্তৃত্ব। ইসলামিক রেভল্যুশন গার্ড কর্পসের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে তার হাতে। স্বেচ্ছাসেবক শাখা বাসিজ রেজিসট্যান্স ফোর্স, তারও প্রধানও আয়াতুল্লাহু খামেনি। ইরানের অভ্যন্তরের বিক্ষোভকারীদের কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনাও আসে তার কাছ থেকে। ইরানের প্রেসিডেন্ট শীর্ষ নির্বাচিত কর্মকর্তা হলেও, সর্বোচ্চ নেতার পরেই তার অবস্থান। অর্থাৎ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা যদি মনে করেন, কোন বাহিনীর মাধ্যমে বিক্ষোভ দমন করবেন, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট কেও চলতে হবে সেই পথে। ইরানের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আবার যাচাই করা হয় পার্লামেন্টের মাধ্যমে। আর এই পার্লামেন্টই ইরানের নতুন আইন প্রণয়ন করে। পার্লামেন্টের গার্ডিয়ান কাউন্সিলে থাকেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ মিত্ররা। এই কাউন্সিল চাইলে নতুন আইন অনুমোদন করতে পারে এবং ভেটো দিতে পারে। বুঝতে পারছেন, তাহলে খামেনির হাতে ঠিক কতটা ক্ষমতা? সোজা কথায়, ইরানে তিনি যা বলবেন তাই হবে। আর সেই পদ পেতে লড়াইটা যে খুব সহজ হবে, এমনটা ভাবা একদমই ভুল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম