।। প্রথম কলকাতা ।।
Nitish-Naidu: আপাতত নীতীশ-নাইডুকে পাশে পেলেন না রাহুল গান্ধী। কিন্তু শরিকি কাঁটায় জেরবার মোদী। ইন্ডিয়া জোটের নতুন রণকৌশল, কোনো তাড়াহুড়ো নয়, শুধুই অপেক্ষা। তাহলে কি ঝোপ বুঝে কোপ মারবে ইন্ডিয়া জোট? বিরোধী হলেও কৌশলী রাজনৈতিক বার্তা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ল ইন্ডিয়া। ইতিমধ্যেই তৃতীয় বার সরকার গড়তে বৈঠক হয়ে গিয়েছে এনডিএর মধ্যে। ঠিক হয়ে গিয়েছে রণনীতি। ইন্ডিয়া বৈঠকে মোদীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত সব দলের। শোনা যাচ্ছে, ৭ই জুন রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গঠনের দাবিও জানাবে এনডিএ। কিন্তু ভিতরে ভিতরে রয়ে গিয়েছে বড় সমস্যা। নীতীশদের চাপে জেরবার মোদী। কেউ চাইছেন রেলমন্ত্রী হতে, তো কেউ অর্থমন্ত্রী আবার কেউবা স্পিকার। সব জটিলতা কাটিয়ে তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদী কি প্রধানমন্ত্রী হবেন? চান্স কত পার্সেন্ট? তলে তলে অন্য কোন প্ল্যান করছে না তো ইন্ডিয়া জোট? হঠাৎ নিজেদেরকে বিরোধী জোটে রাখার এত বড় সিদ্ধান্ত কেন? এনডিএ জোট ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে ফিকে মোদী ম্যাজিক। ভোট ব্যাংকে কাজ করেনি রাম মন্দিরের হাওয়া। এই মুহূর্তে ভারতে সরকার গঠন করবে কে? এনডিএ নাকি ইন্ডিয়া? আসল ট্রাম্প কার্ড খেলে দিলেন নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নায়ডু। গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল এই দুই জন মানুষের দিকে। যে কোন মুহূর্তে এনারা খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু মোদীর ভরসা রাখলেন, এনডিএর বৈঠকে দুজনকেই দেখা গেল মোদীর পাশে। সরকার ভাঙ্গা গড়ার আসল খেলা শুরু গিয়েছে দিল্লিতে। জোড়া বৈঠকেই ঠিক হয়ে গেল, কেমন হবে জোটের রাজনীতি। এনডিএর বৈঠকে মোদীর হাতে লেটার অব সাপোর্ট তুলে দেওয়ার কথা ছিল নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর। কিছুটা মিলে গেল সেই আগাম হিসেবের অঙ্কটা।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার এগিয়ে রয়েছে, পেয়েছে ২৯৩/ ২৯৩ টি আসন। কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই ইন্ডিয়া জোটও। পেয়েছে ২৩৪টি আসন। আর এখানেই তো রয়েছে মূল ফ্যাক্টর টা। জল্পনা বলছিল, যদি একবার ইন্ডিয়া জোট নাইডু আর নীতীশকে নিজেদের জোটে টেনে দিতে পারে তাহলে কিন্তু মোদী সরকারের গদি টলমলে হয়ে যাবে। নীতীশের সঙ্গে এনডিএ এবং ইন্ডিয়া দুই জোটই যোগাযোগ করে। নীতীশ এনডিএ জোটে থাকলেও, তিনি যে পাল্টি খাবেন না এমন কোন গ্যারান্টি ছিল না। তখনই ভারতের রাজনীতিতে প্রশ্নটা ওঠে, নীতীশ তুমি কার? এখন এই প্রশ্নের উত্তরেই মোড় নিচ্ছে ভারতের জাতীয় রাজনীতি।
২০২৪ এর লোকসভা ভোটে বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, পেরোতে পারেনি ২৭২ এর ম্যাজিক ফিগার। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকে এনডিএ জোট। অপরদিকে বৈঠক ডেকেছিল ইন্ডিয়া জোটও। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২৭২টি আসনে জিতলে তবে সেই দল সরকার গঠন করতে পারবে। তবে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইটা হচ্ছিল, দুই জোট পক্ষের মধ্যে। এক দিকে এনডিএ, তো অপরদিকে ইন্ডিয়া জোট। আর এনডিএ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আসন সংখ্যায় এনডিএ এগিয়ে থাকলেও, নীতীশ কুমারকে নিয়ে ছিল প্রচুর খটকা। কারণ একটা সময় ইন্ডিয়া জোটের হোতা ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। কিন্তু পরবর্তীকালে পাল্টি খেয়ে হাত মেলান এনডিএ জোটের সঙ্গে। যার জন্য তাকে শুনতে হয়েছিল দলবদলুর তকমাও।
গতবছরে এই নীতীশ কুমারের ডাকে পাটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ছিল প্রায় ১৫টি দল। ঠিক তার পরের মাসে বেঙ্গালুরুতে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২৬। তারপর, সদলবলে নীতীশ চলে আসেন এনডিএতে। কিন্তু এখন ইন্ডিয়া জোট যে জায়গায় রয়েছে, সেখানে যদি নীতীশ কুমার আবারও পাল্টি খান, তাহলে মহা বিপাকে পড়তে পারে এনডিএ জোট। তবে সেটা না করার সম্ভবনাই বেশি। অপরদিকে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের পর, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকাজুর্ন খাড়গে বুঝিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটে যতই ভালো করুক না কেন, ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠনের জন্য উপযুক্ত সংখ্যা নেই। তাই আপাতত বিরোধী জোট হিসাবে এই লড়াই জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইন্ডিয়া। খাড়গের কথায়, মোদীর স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়া জোট লড়াইটা জারি রাখবে। এই জোটের সব শরিকই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এক সুরে কথা বলবে, এখন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা।
কিন্তু বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, হাম, আপনা দল, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দের শিবসেনা। যে যার প্রাপ্য বুঝে নিতেই যেন ব্যস্ত। মোদীকে সমর্থনের বিনিময়ে সামনে রাখল একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া। ওদিকে স্পিকারের পদ চাইছেন চন্দ্রবাবু, পাশাপাশি তাঁর চাই তিনটি পূর্ণ মন্ত্রী আর দুটি প্রতিমন্ত্রীর পথ। নীতীশ কুমারও তার দলের জন্য চার পূর্ণ মন্ত্রী আর একটা প্রতিমন্ত্রীর পদ চেয়ে বসে আছেন। অথচ ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে নীতীশের সমঝোতা হয়েছিল, যদি এনডিএ ক্ষমতায় আসে তাহলে নীতীশ পাবে তিনটি পূর্ণ মন্ত্রীর পদ। কিন্তু এখন নীতীশ চাইছেন চারটি পূর্ণ মন্ত্রীর পদ।। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন জলসম্পদের মতো মন্ত্রক গুলো। গতবারের নির্বাচনে মোদী সরকারের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এইসব দলকে গুরুত্ব দিতেই হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট ছোট দলেরও দাবি মানতে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বকে। দাবি না মানলে, সরকার হারাতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। কিন্তু প্রশ্নটা তো সেখানেই, যে নরেন্দ্র মোদী প্রথমে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, পরে দশ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন, পরবর্তীকালে তিনি এই শরিকি কাঁটা আদৌ সামলাতে পারবেন তো?
আসলে কি বলুন তো, এই এনডিএ জোটের ভাঙা গড়া খেলা একদমই নতুন নয়। তাই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ভাঙা মনে শক্তি বাড়বে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি যৌথ মঞ্চ ইন্ডিয়ার। নির্বাচনের চর্চায় বারংবার কংগ্রেসের তোপের মুখে পড়েছে এনডিএ জোট। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেছিলেন, এনডিএর শরিক হিসেবে নাকি এমন সব দলের নাম করা হচ্ছে, তাদের অনেকেরই নাম শোনেননি তিনি। পাল্টা জবাবে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, সারা ভারতে ছড়িয়ে থাকা ৩৮ দলের এনডিএ জোট সময় পরীক্ষিত জোট। যারা আরও বেশি জাতীয় অগ্রগতি আর আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চায়।
আচ্ছা, এই এনডিএ জোট কী অতটাই দুর্বল? যে সহজে ভেঙে যেতে পারে? এই জোটের শুরুটা ঠিক কোথায়? গতবারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে, নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহদের কাছে এই জোট শরিকদের প্রয়োজন কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। তারই মধ্যে অনেকটা বদলে এসেছে এনডিএ জোটের সাবেক গড়নেও। কৃষি আইনের বিরোধিতা করে শিরোমনি আকালি দল এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি নীতীশ কুমারের বিরোধিতা করে এই জোট ছেড়েছিল এলজেপির চিরাগ পাসোয়ান। যদিও পরে তিনি আবার এনডিএ তে ফিরে আসেন। মহারাষ্ট্রে এনডিএ ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলায় শিবসেনা। উল্টোদিকেই আবার মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ভেঙে শিন্দে গোষ্ঠী জোড়ে বিজেপির সঙ্গে।
উইকিপিডিয়া বলছে, এনডিএ হল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে ভারতীয় রাজনৈতিক জোট। যার ইতিহাস অনেক পুরনো। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মূলত ওই সময় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তখন এই জোট গঠন হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বিরোধী জোট গঠন করা। বিজেপির নেতৃত্বে থাকলেও এতে সমতা পার্টি, AIADMK, শিবসেনা সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শিবসেনা ২০১৯ সালে কংগ্রেস এবং এনসিপি-এর সাথে মহা বিকাশ আঘাদিতে যোগ দিতে জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জনতা দল (ইউনাইটেড) গঠনের পর ২০০৩ সালে সমতা পার্টিও জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এআইএডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহার করায় এক বছরের মধ্যে সরকার পতন হয়। আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দলের প্রবেশের পর, এনডিএ ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হন এবং এই সময় পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এনডিএর ২০০৪ সালের নির্বাচনে প্রচারণা ছিল “ইন্ডিয়া শাইনিং” স্লোগানকে ঘিরে।
মনে করা হয়েছিল এনডিএ সরকার দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি, পরাজয়ের সম্মুখীন হয় এনডিএ। তখন লোকসভায় মাত্র ১৮৬টি আসন জিতেছিল, যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের ২২২টি আসন জেতায় প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। সেই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন, গ্রামীণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থতার কারণে এনডিএ-র পরাজয় হয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বায়িত্বে এলে, দ্রুত বদলাতে থাকে এনডিএ জোটের চেহারা। এবারে বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায়, এই জোট শরিকের হাত ধরে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে। যদিও এখানে থেকে যাচ্ছে একটা কিন্তু ভাব। কারণ আগামী দিনে ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠনের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। হয়তো এক্ষুনি নয়, কিন্তু আগামী দিনে এনডিএ ছেড়ে ইন্ডিয়াতে নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নায়ডু ফিরবেন কিনা সেদিকেও কিন্তু নজর রয়েছে গোটা দেশের। যদিও শোনা যাচ্ছে, সব ঠিক থাকলে নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বারের জন্য ৮ ই জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম