।। প্রথম কলকাতা ।।
Migratory Birds in Bangladesh: অতিথি পরায়ণ দেশ বাংলাদেশ। তাই তো শীত পড়তেই দ্বিগুণ সুন্দর হয়ে ওঠে দেশটা। দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করে রংবেরঙের নানা প্রজাতির পাখি। পাখিগুলো বাংলাদেশের নয়, কেউ হয়তো হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তবেই এসেছে, একটু আশ্রয়ের খোঁজে। সবুজ শ্যামলীমা ঘেরা বাংলাদেশেও পাখির জন্য জায়গার অভাব নেই। পরিযায়ী পাখিদের জন্য দরজা সবসময়য়ের জন্য খোলা। আর তারা অতিথি বলে কথা, তাদেরকে কেউ ডিস্টার্বই করে না। কিন্তু প্রশ্নটা হল, দেখে দেখে বাংলাদেশেই কেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিরা ভিড় করে? এখানে ঠিক কি আছে? পাখির মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে দেশটা।
মূলত, শীত যখন আসে, তখন বাংলাদেশের জলাশয় গুলোতে জল কমে যায়। সেখানেই জন্মায় পাখিদের অত্যন্ত প্রিয় খাবার। নানান ধরনের কচি পাতা, শামুক, ঝিনুক সহ বহু উপাদান। এই জলাশয় গুলোই হয়ে ওঠে পরিযায়ী পাখিদের প্রিয় জায়গা। উল্টোদিকে, তখন শীতের বরফে মুড়ে যায় বহু দেশ। দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। তাই পাখিরা বেঁচে থাকার তাগিদে উড়তে উড়তে চলে আসে বাংলাদেশে। তারপর মার্চের শেষে ফিরে যায় নিজেদের ঘরে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত এবং নেপালেও এই ধরনের পাখির অল্প বিস্তর দেখা মেলে।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, ঠিক কত ধরনের পাখি আসে বাংলাদেশে? যার জন্য এত আয়োজন! একটা সোজা হিসেব বলি। শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে, শীতের সময় গেলে ২০ থেকে ২৫ রকম প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখতে পাবেন। বাংলাদেশে আসা পরিযায়ী পাখিদের অধিকাংশটাই বিভিন্ন ধরনের সৈকত প্রজাতির পাখি, আর হাঁস। সৈকত প্রজাতির পাখি থাকে প্রায় পঞ্চাশ হাজার থেকে ১ লাখ , আর হাঁস প্রজাতির থাকে প্রায় তিন লাখের মতো। পছন্দের জায়গা বিশেষ করে ঢালচর, সোনাদিয়া দ্বীপচর, কুকরি মুকরি সহ বেশ কিছু চর। বিশেষ করে কক্সবাজারে সোনাদিয়ার কিছু দ্বীপের উপকূল আর টাঙ্গুয়ার হাওর সহ হাওর এলাকাগুলোতে এই পাখির ব্যাপকভাবে এসে থাকে। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে ইউরোপীয় এলাকা থেকে আসা লাল বুকের বিশেষ ক্লাইক্যাসার পাখি। জানলে আশ্চর্য হবেন, কিছু কিছু পাখি আছে, যারা বাংলাদেশে আসে প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে। কিসের টানে বলুন তো? শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নিরাপদ আশ্রয় আর মন পছন্দের খাবারের জন্য। এই পাখিদের বাস মূলত তিব্বত, উত্তর মাঙ্গোলিয়া, চীন, রাশিয়া সাইবেরিয়া তুন্দ্রা অঞ্চল অর্থাৎ ইউরোপ এশিয়ার কিছু এলাকা, উত্তর মেরু আর হিমালয় পর্বতমালার আশেপাশে এদের বাস। এরা বাংলাদেশে আসে খুশির আমেজ নিয়ে। অনেকেই এই সময়টা ব্যস্ততার সময়ের মাঝে কাজের ছুটি করে পরিযায়ী পাখি দেখতে যান। শীত শেষে পাখি গুলো ফিরে যায় বড্ড মায়া রেখে। আশ্বাস দিয়ে যায়, আসছে বছর তারা আবার আসবে।
পাখিগুলোকে আদর করে বলা হয় অতিথি পাখি। নিজেদের জীবন বাঁচাতে বেছে নেয় দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশকে। এদের বিচিত্র বাচ্চা পালন থেকে শুরু করে বাস তৈরির কৌশল। মূলত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের সবচেয়ে বেশি পাখি আসে দেশটাতে। বাংলাদেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, যার মধ্যে দেশান্তরি পাখি প্রায় ২০০ প্রজাতির।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/722737776715489/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার, গত কুড়ি বছরে কিন্তু বাংলাদেশে দিনের পর দিন এই পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে। ওই যে আবার বললাম, দেশটা ভীষণ অতিথি পরায়ণ। এতগুলো অতিথি পাখি যাতে নিরাপদে বাংলাদেশে থাকতে পারে তার জন্য দেশটিতে অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, পাখি শিকার এবং হত্যার দণ্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ পাখি কেনাবেচা, আমদানির রপ্তানি, লালন পালন কিংবা খামার স্থাপন করতে চান, তাহলে লাইসেন্স অবশ্যই জরুরী। লাইসেন্স না নিলে সেই ব্যক্তির কারাদণ্ড সহ জরিমানা হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষও বুঝেছে অতিথি পাখি প্রকৃতির বন্ধু। তাদের শত্রু কখনোই নয়। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এই জনসচেতনতা আগের থেকে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে শিকারের পরিমাণ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম