।। প্রথম কলকাতা ।।
ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনালে গোল করে কেঁদে ভাসালেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। এই কান্না যে অবেগের কান্না, অনেক যন্ত্রণার কান্না, না পাওয়ার আক্ষেপের কান্না। অনেকেই বলছেন ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে যদি ডি মারিয়া থাকতেন তবে মেসির হাতেই উঠতো কাপ। কিংবা ধরুন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা যদি খেলতেন, তবে কী ট্রফি জয় বঞ্চিত হতে হত আর্জেন্টিনাকে। মনে হয় না! কিন্তু সর্বনাশা চোটই বারবার ছিটকে দিয়েছে ডি মারিয়াকে। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামকে হারানোর পর অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে হাপুস নয়নে কাঁদতে দেখেছিল বিশ্বফুটবল। কারণটা সেই চোট। তিনি জেনে গিয়েছিলেন এই ম্যাচ জিতলেও চোটের কারণে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচে খেলতে পারবেন না তিনি।
কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মেসির গোলটি আসে ডি মারিয়ার পাস থেকেই। এরপরই চোট তাকে বসিয়ে দেয় ডাগ আউটে। ফাইনালেও অনিশ্চিত ছিলেন আর্জেন্টিনার এই ফরোয়ার্ড। পোল্যান্ডের বিপক্ষে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর আর্জেন্টিনার শুরুর একাদশে আর দেখা যায়নি অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকে। তবে ফাইনালের মঞ্চে ফ্রান্সের বিপক্ষে শুরুর একাদশে ফিরেই জ্বলে উঠলেন এই ফরোয়ার্ড। নিজের শেষ বিশ্বকাপে গোল করলেন, একটি পেনাল্টি আদায় করে দিলেন। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের ঐতিহাসিক এক মুহূর্তের সাক্ষী থাকলেন ডি মারিয়া। এমন স্মরণীয় বিদায় কয়জনের হয়।
তারকাখচিত আর্জেন্টিনা দলে লিওনেল মেসির পরেই যার স্থান তিনি হলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ২০০৮ সালের অলিম্পিক্সেও ডি মারিয়ার গোলেই সোনা জেতে লিওনেল মেসি, ম্যাসচেরানোদের আর্জেন্টিনা। বেজিংয়ে অলিম্পিক্সে তরুণ মেসির একমাত্র আন্তর্জাতিক জয়ের কারিগর হয়ে উঠেছিলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। এরপর লিওনেল মেসির প্রথম সিনিয়র আন্তর্জাতিক খেতাব জয়ের রাতে ফাইনালে ফের গোল করেন ডি মারিয়া। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে তাঁর করা একমাত্র গোলেই মারাকানা স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছরের ট্রফির খরা কাটায় মেসির আর্জেন্টিনা।
ডি মারিয়া বরাবরই বড় ম্যাচের প্লেয়ার। কোপা হোক বা বিশ্বকাপ ডি মারিয়া গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ম্যাচে জ্বলে ওঠেন। সমর্থকরা বলেন, যখনই মেসির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তখনই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এই ডি মারিয়া। এদিনও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়েছিলেন। এদিনও চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন। তবে সেটা ছিল যন্ত্রনার আর এটা আনন্দের। রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোর ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হারের ম্যাচে গোল করেছিলেন আর্জেন্টিনার এই ফরোয়ার্ড। এদিন ফাইনালেও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে করলেন গোল। শুধু পার্থক্যটা সেইবার ছিটকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা আর এবার বিশ্বজয়।