।। প্রথম কলকাতা ।।
Kim Jong Un: খেল দেখাচ্ছে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন, কখন কি যে করেন বোঝা দায়। কিম দক্ষিণ কোরিয়ায় হঠাৎ পাঠাচ্ছেন টনটন নোংরা বর্জ্যের বেলুন। কিন্তু কেন? শুধুই কি যুদ্ধের উস্কানি? ওদিকে দক্ষিণ কোরিয়া জবাব দিচ্ছে স্পিকারে। তাহলে কি, আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ বাঁধাতে চাইছেন কিম? কৌশলে কিম ঘায়েল করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রকে! চরমে দুই কোরিয়ার উত্তেজনা। এই বুঝি যুদ্ধ বাঁধল। কিমের দোসর আবার চীন রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রকে জবাব দিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ঢাল করা হচ্ছে না তো? এই সংঘাত শুধু দুই কোরিয়ার নয়, বরং গোটা বিশ্বের। অতীতে লুকিয়ে রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। যুদ্ধ বাঁধলে কে জিতবে? কিম নাকি বাইডেন? কিমের পাঠানো নোংরা বেলুনের জবাব দিতে পারবে তো যুক্তরাষ্ট্র? তলে তলে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিমের এত শত্রুতা কীসের?
স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া কিম, যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে জবরদস্ত প্ল্যান!
দুই কোরিয়ার দ্বন্দ্ব কারোরই অজানা নয়। দক্ষিণ কোরিয়াকে টার্গেট করে কিম পাঠাচ্ছেন রহস্যজনক বেলুন। সেগুলো উড়ে এসে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর সিউলের বিভিন্ন এলাকায়। না, এই বেলুন গুলোতে মারাত্মক সব অস্ত্র নেই। কিন্তু যা আছে, ভাবলে অবাক হয়ে যাবেন। এটা আবার কি ধরনের বদলা? নাকি বড় যুদ্ধের আগে হুমকি দিচ্ছেন কিম? তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় বেলুনে করে পাঠাচ্ছেন বাতিল কাগজ, প্লাস্টিকের আবর্জনা, সিগারেটের ফিল্টার, কাপড় আবার কোন কোন বেলুনে নাকি রয়েছে মল-মূত্রের মত আবর্জনা। উত্তর কোরিয়া উপহাস করে বলেছিল, এসব নাকি তাদের আন্তরিকতার উপহার। গোটা বিশ্বে এত যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু কখনোই শত্রুপক্ষকে এইভাবে হুমকি দিতে দেখা যায়নি। এমনি থেকেই কিম জং উন মানে, সবার থেকে ব্যতিক্রমী একজন নেতা। যাঁর হুমকিতে কাঁপে গোটা উত্তর কোরিয়া।
এমত পরিস্থিতিতে, কিন্তু যথেষ্ট ক্ষুব্ধ দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। উত্তর কোরিয়ার এই কর্মকান্ডকে অত্যন্ত বিপ্পজনক বলেই মনে করে। যতই দক্ষিণ কোরিয়ার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সাপোর্ট থাকুক না কেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিমের এমন পদক্ষেপে দেশটা একটু ঘাবড়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন কি হয় কি হয়। দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধাটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, আসলে কিম বেলুন পাঠিয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করতে চাইছেন। পায়ে পা লাগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে চাইছেন। কিম যে ইতিমধ্যেই তলে তলে সমস্ত যুদ্ধ প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন, তা তো আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। আসলে কিমের যুক্তরাষ্ট্রের উপরেও কম রাগ নেই। এই সুযোগে এক ঢিলে দুই পাখির মত, এক যুদ্ধে একসঙ্গে মাত দিতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রকে। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া বুঝিয়ে দিচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের কাছে অনেকটা ডাস্টবিনের মত। তাই তো বেলুনে করে তাদের দেশের টন টন ময়লা পাঠিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এ যেন এক অদ্ভুত যুদ্ধনীতি। আর অপর দিকে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে উড়ে আসছে লিফলেট। চলতি বছরের ২ জুন কিমের দেশ বলেছিল, তারা নাকি ইতিমধ্যেই ১৫ টন ময়লা তাদের শত্রু দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
দুই কোরিয়ার দ্বন্দ্ব মেটানোর জন্য মাঝে কম বৈঠক হয়নি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এই তো ২০১৮ সাল নাগাদ, কিম জং উনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার এক বিরল বৈঠক হয়েছিল। যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে লাউড স্পিকারে প্রচার চালানো বন্ধ হবে। কিন্তু যখন উত্তর কোরিয়া বেলুন পাঠিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করছে, তখন কেন চুপ থাকবে দক্ষিণ কোরিয়া? বেলুনের জবাব দিচ্ছে লাউড স্পিকারে। ইতিমধ্যেই কিমের দেশকে লক্ষ্য করে, লাউড স্পিকারে সম্প্রচার শুরু করে দিয়েছে সিউল। দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের মতে, হয়তো তাদের এমন পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার শাসকদের কাছে অসহনীয় হতে পারে। কিন্তু এটা কিমের দেশের সেনা থেকে শুরু করে জনগণের জন্য একটা আশা আর আলোর বার্তা। যদিও এর আগে সিউল বারংবার বলেছে, যদি উত্তর কোরিয়া বেলুন পাঠানো বন্ধ না করে, তাহলে তারা লাউড স্পিকার থেকে উত্তর কোরিয়াকে লক্ষ্য করে সম্প্রচার করবে। তাহলে কি এটাই চাইছিলেন কিম? দক্ষিণ কোরিয়া তাদের ধৈর্যের বাঁধ সহ্য করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিক, আর সেই সুযোগে তিনি বড় যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারবেন? আপনার কী মনে হয়? কিম খুব ভালোভাবেই জানেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তিনি যদি একবার জিতে যান, তাহলেই কেল্লাফতে। গোটা বিশ্বের কাছে পাবেন একটা আলাদা জায়গা। কারণ দক্ষিণ কোরিয়া সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র। গোটা বিশ্বের কাছে একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হিসেবে পরিচিত হবেন তিনি। ধীরে ধীরে কিম হয়ে উঠবেন বিশ্ব নায়ক। কিন্তু কিমের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, নাকি সত্যি সত্যি তিনি একসময় গোটা বিশ্বে রাজ করবে তা তো ভবিষ্যতেই বলবে। এখন শুধু সম্ভাবনার কথাটাই বলা যায়।
দুই কোরিয়ার শত্রুতার মাঝে কী করছে যুক্তরাষ্ট্র? বড় ভূমিকা চীন রাশিয়ার
দুই কোরিয়া বিশ্বের এমন দুই দেশ, যাদের মধ্যে একটু সংঘাত বাঁধলেই নজর পড়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর। কারণ একটা সময় এই দুই কোরিয়ার যুদ্ধে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র চীন আর রাশিয়া। । কোরিয়া যে দুই ভাগে ভাগ ছিল, তার উত্তর অংশ ছিল সোভিয়েত সমর্থিত কমিউনিস্ট অঞ্চল, আর দক্ষিণ অংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত অঞ্চল। আসল দ্বন্দ্ব টা তো শুরু হয়েছিল সেই সময় থেকেই। তখন কমিউনিস্ট সেনারা একের পর এক দক্ষিণের অঞ্চল দখল করে নিতে থাকে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ দিকে সাগর পাড়ের ছোট্ট শহর পুশান ছাড়া প্রায় সবটাই চলে যায় কমিউনিস্টদের দখলে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দক্ষিণের সাধারণ মানুষ। অনেকে ভাবতে থাকেন অন্যত্র চলে যাবেন। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে ১৯৫০ সালের দিকে। সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়া আর জাতিসংঘের সম্মিলিত বাহিনী শুরু করে দেয় পাল্টা আক্রমণ। আর সেই দলে তখন গুরুত্বপূর্ণভাবে যোগ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। আসলে তখন যুক্তরাষ্ট্রের মনে অনেক ভয় কাজ করছিল। যদি কমিউনিস্টদের দখলে পুরো কোরিয়াটা চলে যায়, তখন নিজের আধিপত্য হারাতে পারে দেশটা।
তারপর একটা রক্তক্ষয়ী সময় পেরিয়ে দুই কোরিয়া পাকাপাকি ভাবে আলাদা হলেও বিন্দুমাত্র তিক্ততা মেটেনি। ১৯৫০ সালে শুরু হয়েছিল দুই কোরিয়ার যুদ্ধ, যেটা চলেছিল টানা তিন বছর। সেখান থেক এখনো পর্যন্ত কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়াকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল চীনের হস্তক্ষেপে। যখন জাতিসংঘের বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন রাজধানী দখল করে উত্তর দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই সেখানে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয় চীন। কারণ একটাই, উত্তর কোরিয়ার সাথে চীনের সীমান্ত বেশ বড়। ১৯৫১ সাল নাগাদ চীনের বাহিনী পৌঁছে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীর একদম দোরগোড়ায়। আক্রমণ চালাতে থাকে জাতিসংঘের বাহিনীর উপর। বলা হয়ে থাকে, কোরিয়ার সেই যুদ্ধে নাকি মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০ থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের। প্রায় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তিন বছর পর যুদ্ধ থামলেও কোন আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি হয়নি। কোরিয়া এখনো সেই ভাবেই বিভক্তি আছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এই মাথাচড়া দিয়ে উঠে যুদ্ধের উত্তেজনা।
আর সেই যে শত্রুতা শুরু হলেও, তা এখনো থামেনি। বছর ছয়েক আগে তুমুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র নাকি হামলা চালাতে পারে কিমের দেশে। শুধু তাই নয়, গুঞ্জন উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু হামলা পর্যন্ত চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে পিয়ংইয়ং। এমনটাই দাবি করেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান। তুমুল আশঙ্কা তৈরি হওয়ায়, যদি একবার যুদ্ধ বাঁধে তাহলে উত্তর কোরিয়ায় গণমৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রও ছেড়ে কথা বলবে না। উত্তর কোরিয়া সামরিক অভিযান চালালে ক্ষতি তো হবেই, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই মিত্ররা রাষ্ট্র জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষও তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে বিচলিত হয়ে ওঠে ওয়াশিংটন। বহুবার মার্কিন প্রশাসনকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে। যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ছিলেন তখনও তিনি তাঁর দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই নিয়ে বারংবার আলোচনা করেছেন। জো বাইডেনের ক্ষেত্রেও কিন্তু সেই আলোচনা থেমে নেই। কিমের দেশের উপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অর্থনৈতিক অবরোধও।
এমনকি বহুবার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে কিমের সম্পর্কটা ঠিক যেন মেনে নিতে পারেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এইতো গত বছর, কিম যখন রাশিয়া গিয়েছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। কারণ ভালোভাবে বুঝতে পারছিল রাশিয়া আর উত্তর কোরিয়া তাদের মধ্যে অস্ত্র আলোচনা আরো সক্রিয় করছে। যা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা বড় হুমকি। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রেও কিন্তু চীনের কম ভূমিকা নেই। তাই এই দুই দেশের বন্ধুত্বের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা। আর অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে গোটা বিশ্ব ভয় পায়, মেনে চলে, সেই যুক্তরাষ্ট্রকে মুখের ওপর বারংবার হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পাল্টা ছুঁড়েছে ক্ষেপণাস্ত্র। বুঝতে পারছেন, কিমের ক্ষমতাটা ঠিক কতটা? আসলে কিম কাউকে তোয়াক্কাই করেন না। এখন দুই কোরিয়াকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্বজুড়ে দেখা গিয়েছে, একটু ব্যতিক্রমী ভূ রাজনীতি। যে সময়টা উত্তর কোরিয়ার মানুষ যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী সমাবেশে যোগ দিচ্ছে, কোরীয় উপদ্বীপীয় শান্তি এবং স্থিতিশীলতার ধ্বংসকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নিন্দা জানাচ্ছে , ঠিক সেই সময় উত্তর কোরিয়া বিরোধী জোট হিসেবে কাজ করছে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আর জাপান। শুধু তাই নয়, এই দেশগুলো উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকি প্রতিরোধ করতে নিয়মিত যৌথ আর দ্বিপক্ষীয় সামরিক মহড়াও চালায়। আপাতত পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, এখন দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই শুধু বাকি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম