।। প্রথম কলকাতা ।।
বড় সিক্রেট ফাঁস। জানেন? কীভাবে মহাবিশ্বে ভারত হয়ে উঠলো মিসাইল সম্রাট? নেপথ্যে কে? ভারতের “মিসাইল ওম্যান”কে না চিনলে বড় মিস করবেন। অগ্নি ৪-অগ্নি ৫ এর মাস্টারমাইন্ড। তাঁর হাত মানেই “মিশন সাকসেসফুল”।দৈনিক ১০০ টাকা ঋণ নিয়ে পড়াশোনা থেকে সারা বিশ্বের অগ্নিকন্যা। রকেটের মন্ত্রেই জীবনে বেড়ে ওঠা। স্বপ্ন পূরণ করেছে ডিআরডিও। কেরালার ছোট্ট গ্রাম থেকে কিভাবে জার্নি শুরু মিসাইল ওম্যানের? নতুন প্রজন্মের ব্যালেস্টিক মিসাইল অগ্নির ‘মিসাইল গাইডেন্স‘-এর কাজ শুরু যে মানুষটার হাত ধরে; যার অসামান্য এক গবেষণা আশাতীতভাবে সাহায্য করেছে ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র প্রজেক্ট গুলোকে, দূরপাল্লার ব্যালেস্টিক মিসাইলের গাইডেন্স স্কিমের এক অসামান্য নকশা করেছেন যিনি, যা ব্যবহার করা হয়েছে সমস্ত অগ্নি মিসাইলে। তিনিই অগ্নি ৪-অগ্নি ৫ এর মাস্টারমাইন্ড।
কেরলের ছোট্ট গ্রাম আলেপির টেসি থমাস। ২০১৮ থেকে ‘অগ্নিকন্যা’ ডঃ টেসি থমাস ডিআরডিও অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমের ডিরেক্টর জেনারেল গোটা বিশ্বে ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণার জমি চিরকালই পুরুষ শাসিত ছিল, আছে ও থাকবে, এই ভ্রান্ত ধারণাটিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন ‘মিসাইল ওম্যান’ টেসি থমাস। অস্তিত্ব রক্ষার খাতিরেই মিসাইল প্রযুক্তিতে হাত পাকিয়েছে ভারত। শত্রুপক্ষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে যে মন্ত্র শিখেছে ভারত তার হাতে খড়ি “মিসাইল ম্যান” এর হাত ধরে। “মিসাইল ম্যান” এপিজে আবদুল কালাম। যে শক্তির বীজ বপন হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। থুম্বা থেকে উড়েছিল প্রথম ভারতীয় রকেট। মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখা প্রজেক্টের বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ছিলেন তরুণ বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম।
যে মানুষটা তখনও কল্পনাই করতে পারেননি, তাঁরই ভাবশিষ্যা থুম্বা রকেট লঞ্চিং স্টেশন থেকে মাত্র ১৪৭ কিলোমিটার দূরে আলেপ্পিতে সবে জন্ম নিয়েছেন। সেটাও ১৯৬৩ তেই। “মিসাইল ম্যান” কালামের জাদুস্পর্শে পরবর্তীকালে তিনিই হয়ে উঠলেন ভারতের “মিসাইল ওম্যান”। “মিসাইল ওম্যান” টেসি থমাস। ছোট থেকেই যার মন ছিল মহাকাশে। ছোট থেকেই টেসি পড়াশোনায় তুখোড়। বিজ্ঞানের সব বিষয়ে টেসির মার্কস থাকত একশোর কাছাকাছি। অবসরের সঙ্গী ছিল মহাকাশ। কারণ ‘থুম্বা ইকুয়েটরিয়াল রকেট লঞ্চিং স্টেশন‘ টেসিদের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। প্রথমে আলেপ্পির সেন্ট মাইকেল স্কুল, তারপর সেন্ট জোসেফ স্কুল থেকে পড়াশুনা করে, কালিকট ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি.টেক করেছেন টেসি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য মাসে ১০০ টাকা করে এডুকেশন লোন নেন ব্যাঙ্ক থেকে। স্কলারশিপের টাকায় পড়তেন টিউশন, লোনের টাকা দিয়ে মেটাতেন হোস্টেল খরচ।
বি.টেক এর পর পুণের ইন্সটিটিউট অফ আর্মামেন্ট টেকনোলজি বর্তমানে ডিফেন্স ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স টেকনোলজি থেকে গাইডেড মিসাইল নিয়ে এম.ই কমপ্লিট করেন। মাস্টার ডিগ্রির পর ‘মিসাইল গাইডেন্স’ নিয়ে পি.এইচ.ডি করেন হায়দরাবাদের জওহরলাল নেহেরু টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে। একবার ভেবেছিলেন আইএএস পরীক্ষা দেবেন, প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবন পাল্টে দিয়েছিল একটা ইন্টারভিউ। ১৯৮৬ সালে পুণের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাভিয়েশন টেকনোলজির অধ্যাপক পদে আবেদন করেন। ইন্টারভিউ মাঝপথেই থামিয়ে তাঁকে তখনই ওই পদে যোগ দিতে বলা হয়। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ইনস্টিটিউট অফ অ্যাভিয়েশন টেকনোলজিতে গাইডেড মিসাইলের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হয়ে গিয়েছিলেন ডঃ টেসি থমাস। ১৯৮৮ সালে ডাক এসেছিল, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে থাকা বিখ্যাত সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন থেকে।
ডঃ টেসি থমাস যোগ দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরিতে। সেখানেই মিসাইল গাইডেন্স এর কাজ শুরু। অগ্নি-থ্রি মিসাইল প্রজেক্টে ডঃ টেসি থমাসকে টেনে নিয়েছিলেন ডঃ কালাম। ডঃ টেসি থমাস হয়েছিলেন অগ্নি-থ্রি মিসাইল প্রজেক্টের অ্যাসোসিয়েট প্রজেক্ট ডিরেক্টর। ডঃ টেসি থমাসকে সরাসরি অগ্নি-৪ প্রজেক্টের নেতৃত্বে নিয়ে এসেছিলেন ডঃ কালাম। সেই প্রথম, কোনও ভারতীয় নারী হয়েছিলেন কোনও মিসাইল প্রজেক্টের ডিরেক্টর। অগ্নি-৫ মিসাইল প্রজেক্টের ডিরেক্টরও ছিলেন কালামের ভাবশিষ্যা টেসি।দারিদ্রতা কে সঙ্গী করে, দৃঢ়চেতা মাকে দেখে বড় হওয়া টেসি খুব জেদী। ব্যর্থতা তার ডিকশনারিতে নেই। যে জেদ আর অদম্য ইচ্ছার জন্য আজ সারা বিশ্বের কাছে তিনি ‘অগ্নি-কন্যা’, ভারতের ‘মিসাইল ওম্যান’। ভারতীয় নৌসেনার কম্যান্ডার সরোজ কুমারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে। ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনকেও সমানভাবে ব্যালেন্স করেছেন টেসি থমাস।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম