।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas War: গাজার (Gaza) রাফায় (Rafah) হামলা কি তবে ভুল সিদ্ধান্ত? তাড়াহুড়ো করে ফেলছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu)। হামাস পেতেছে বড় ফাঁদ। চুক্তি না হলে, যুদ্ধ করা বেকার। চাপ দিচ্ছে মিশরও (Egypt)। কারোর কথা শুনতে চাইছেন না নেতানিয়াহু, হামাস নির্মূল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আর এখানেই গন্ডগোল করে ফেলছেন যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজিতে। হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলের মানুষ, মুক্তি পাওয়ার রাস্তা তাহলে কি এবার বন্ধ হয়ে যাবে? রাফায় কী এমন আছে, যাকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্ব জুড়ে এত হইচই? আস্তে আস্তে সবার সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল, রাফা অভিযান একটা বড় ভুল স্টেপ হয়ে গেল না তো? হামাস ওদিকে কোন ফন্দি এঁটেছে?
ইসরায়েল বলেছিল, হামাস যদি জিম্মি চুক্তি করে, তাহলে রাফাতে আর হামলা চালাবে না। কিন্তু সেই সব চুক্তি কোথায় গেল? রাফাতে কিন্তু ইসরাইল হামলা শুরু করে দিয়েছে। যাতে আতঙ্কে জাতিসংঘ। মানবতার ধ্বস নেমেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। ইসরায়েলের টার্গেট এখন একটাই, সেটা হলো রাফা। হামাসকে জব্দ করার মূল অস্ত্র রাফাকেই আপাতত টার্গেট করেছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। কারোর কথাই শুনছেন না। কাউকেই গ্রাহ্য করছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তোপের মুখেও পড়ছে ইসরায়েল। কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত এক কথায় অনড়। স্বাভাবিকভাবেই, এখন ভেস্তে যেতে পারে যুদ্ধ বিরতির পরিকল্পনা। শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি হামাসের হামলায় নিহত ইসরাইলি পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেতানিয়াহু।
তারপরেই তিনি বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত সব লক্ষ্য অর্জিত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। তার আগে যুদ্ধ বন্ধের ভাবনা ইসরায়েলের বিবেচনায় আপাতত নেই। সম্পূর্ণ জয় পেতে ইসরায়েলি বাহিনী প্রবেশ করেছে রাফাতে। সেখানে থাকা হামাসের ব্যাটালিয়নকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। সেক্ষেত্রে চুক্তি হোক আর, না হোক। সেদিকে তাকিয়ে বসে নেই ইসরায়েল। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, আপাতত স্বজন হারানো ইসরাইলিরা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে কিন্তু ইসরাইলের জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে, সেই জায়গা থেকে নেতানিয়াহুর পিছুপা হটার সম্ভাবনা ভীষণ কম।
আজ ইসরায়েল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কয়েকদিন আগে পর্যন্ত ইসরায়েল জানিয়েছিল, যদি হামাস জিম্মি চুক্তি করে, তাহলে গাজার একমাত্র নিরাপদ স্থল অর্থাৎ রাফাতে ইসরাইলি বাহিনী কোন হামলা চালাবে না। এমনটাই জানিয়েছিলেন ইজরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ। জিম্মিদের মুক্তি নাকি ইসরায়েলের কাছে এখন প্রধান বিষয়। কিন্তু হঠাৎ করে সেই অঙ্কটা এখন বদলে গিয়েছে। ইসরায়েল পাল্টে ফেলেছে তার সিদ্ধান্ত। কাজে আসেনি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিরতি প্রচেষ্টার পরিকল্পনা। গতবছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলছে হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ। প্রাণে বাঁচতে গাজার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে সীমান্ত শহর রাফাতে।
ইসরায়েলের দাবি, যদি হামাসকে পুরোপুরি হারাতে হয়, তাহলে হামলা চালাতে হবে রাফাতে। কারণ এখানে রয়ে গিয়েছে হামাসের চারটে ব্যাটালিয়ন। হামাসকে সমুলের নির্মূল করাই এখন নেতানিয়াহুর একমাত্র টার্গেট। গতবছর ৭ই অক্টোবর যখন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস হামলা চালিয়েছিল, তখন নিহত হন ইসরায়েলের প্রায় ১,২০০ জন মানুষ। হামাস জিম্মি করে ইসরায়েলের প্রায় ২৫৩ জনকে। যার মধ্যে ১০৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয় নভেম্বরে।। ধারণা করা হয়, এখনো নাকি হামাসের কাছে প্রায় ১৩০ জনেরও বেশি জিম্মি রয়েছেন। আর তাদেরকে জীবিত ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু। আপাতত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হামাসের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক গাজার রাফাতে হামলা চলবেই।
আচ্ছা এই যে বারংবার রাফার কথা বলা হচ্ছে, কেন গাজার এই রাফা এত গুরুত্বপূর্ণ? একটু ভেবে দেখেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ করছে হামাসের বিরুদ্ধে, কিন্তু প্রাণপণে হামলা চালাতে চাইছে ছোট্ট একটা শহর রাফাত। যেটি রয়েছে গাজার দক্ষিণে। শহরটা একদমই ছোট। এখানে হামলা চালানো ইসরায়েলের কাছে একদমই কঠিন কাজ নয়। আর রাফা হামলাকে কেন্দ্র করে আতঙ্কে গোটা বিশ্ব। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর, গোটা গাজার বাস্তুচ্যুতরা ভিড় করেছে এই শহরটিতে। প্রায় ৬৪ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরে ১৪ লক্ষ এরও বেশি মানুষের বাস। এই শহরটাই এখন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে। আসলে কি বলুন তো, গাজা উপত্যকার আয়তন প্রায় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। যেখানে যুদ্ধের আগে বাস করতেন প্রায় ২১ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনি। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ বাস্তুচ্যুত শুধুমাত্র আশ্রয় নিয়েছেন রাফা শহরে। এটি গাজা উপত্যকা আর মিশরের সীমান্তবর্তী একটা শহর।
ইসরায়েলের ধারণা, রাফায় রয়েছে হামাসের চারটি ব্রিগেড। আর তাই এখানে আরো জোরদার করতে চাইছে, বিমান আর স্থলপথের হামলা। শুধু তাই নয়, কৌশলগত কারণে ইসরায়েল রাফা শহরকে ফাঁকা করতে চাইছে। যদিও সেখানকার বাসিন্দাদের চূড়ান্ত অবস্থা কি হবে, কিংবা আদৌ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা, সেই বিষয়ে কিন্তু কোন ধরনের বিবৃতি দেয়নি তেল আবিব। ভয়াবহ আশঙ্কায় দিন কাটছে রাফাবাসীর। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এখানে একটা ইম্পর্টেন্ট বিষয় রয়েছে। গোটা বিশ্ব জানে, ইসরায়েলের সাথে মিশরের সম্পর্ক প্রায় আদায় কাঁচকলায়। একে অপরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একটু এড়িয়ে চলে। আর সেই মিশর পাশে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল চাইছে রাফা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিশরের সিনাই উপত্যকার দিকে ঠেলে দিতে। যদি এমনটা হয়, তাহলে বিঘ্নিত হতে পারে মিশরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। যদি কোন দেশে হঠাৎ করে নতুন করে প্রায় ১৪ লক্ষ শরণার্থী প্রবেশ করে, তাহলে সেটা চাপ সৃষ্টি করবে, এটাই স্বাভাবিক।
কারণ ইতিমধ্যে মিশরে প্রায় এক লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসেবে রয়েছেন। তাই মিসির রাফা সীমান্তের কাছে ইসরাইলি অভিযানে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বদ্ধপরিকর। কায়রো প্রশাসন মোতায়ন করেছে প্রায় ৪০টি ট্যাংকসহ বহু সাঁজোয়া যান। বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। মিশর রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে রেখেছে, যদি ইসরাইলি বাহিনী রাফায় হামলা চালায়, তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক ভাবে মিশরের ভূমিতে প্রবেশ করালে, লঙ্ঘন হতে পারে প্রায় ৪০ বছরের পুরনো ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি। আপাতত রাফাকে নিরাপদ বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। শহরটিতে মানুষকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে হামলার সাথে লড়াই করে। দিন কাটছে অমানবিক পরিবেশে। অত্যন্ত দুর্বিষহভাবে।
জাতিসংঘের প্রধান তো বলেই দিয়েছেন, রাফায় ইসরায়েল হামলা হবে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটা বড় বিপর্যয়ের ঘটনা। সহজ সত্যি টা হল, রাফাতে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান ট্র্যাজেডির থেকে কম কিছু হবে না। ইতিমধ্যেই, গাজায় হামলার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন প্রায় ৭৭ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র তার বহু মিত্রদের সাথে ইসরায়েলকে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আপাতত সায় দিচ্ছে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবের দিকে। কিন্তু এখন এসব কি ডোন্ট কেয়ার ভেবে নিয়েছেন নেতানিয়াহু। লক্ষ্য, রাফাতে প্রবেশ করে হামাস ব্যাটেলিয়ান গুলোকে ধ্বংস করা। শোনা যাচ্ছে, এই বিষয়ে জো বাইডেনের এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি নিয়ে কি কথা হয়েছে কিংবা রাফা হামলা নিয়ে কোন কথা হয়েছিল কিনা, তা এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতে, হামাসের ২৪টি ব্যাটালিয়নের মধ্যে ১৮ টি ব্যাটালিয়নকে ভেঙে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। কিন্তু এখনো রাফায় রয়ে গিয়েছে হামাসের চারটি ব্যাটালিয়ন। আর তাদেরকে ধ্বংস করতেই এই রাফা অভিযান।
আন্তর্জাতিক মহলে কিন্তু গুঞ্জন উঠেছে, এই রাফাযুদ্ধে নেতানিয়াহু হয়তো জিততে পারবেন না। কি, শুনে একটু হতবাক হলেন তো? হয়তো অনেকেই ভাবছেন, এই রাফা হামাস যুদ্ধের শেষ অধ্যায়। আর এই অভিযানের মধ্য দিয়ে হয়তো হামাসের পতনও হবে। এই ধারণাটা পুরো বদলে যেতে পারে অর্থাৎ পুরো ওলটপালট হয়ে যেতে পারে নেতানিয়াহুর যুদ্ধের অঙ্কটা। কিন্তু এখন দেশের ভিতরে কিংবা বাইরের কোন মিত্রের পরামর্শ শুনছেন না তিনি। ওদিকে রাফায় ইসরায়েল অভিযান শুরু করুক কিংবা না করুক, বন্দী মুক্তির ব্যাপারে কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে হামাস একদম অনড় । কারণ বন্দী মুক্ত করতে গেলে একমাত্র রাস্তা উভয় পক্ষের মধ্যে হওয়া চুক্তি। অপরদিকে গোটা বিশ্বে প্রবলভাবে বাড়ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সমর্থন। ক্ষোভ বাড়ছে ইসরায়েলের উপর। এত যুদ্ধ করেও কিন্তু নেতানিয়াহু হামাসের হাত থেকে ইসরাইলি বন্দীদের মুক্ত করতে পারেননি। আর সেটা সম্ভব হবে একমাত্র চুক্তির মাধ্যমে। এবার দেখার ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম