।। প্রথম কলকাতা ।।
Israeli-Palestinian conflict: একের পর এক পাল্টি খাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। ইসরায়েলের হাত ছেড়ে ধরছে ফিলিস্তিনের হাত। মধ্যপ্রাচ্যে হচ্ছে টা কী? ঘুরে দাঁড়ালো জাতিসংঘ, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েই ছাড়বে। বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল স্লোভেনিয়াও। তাহলে কি ভালো সাজার মুখোশ পরে রয়েছে ইসরায়েল? খসে পড়তেই একের পর এক দেশ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে? রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে আদৌ কি ফিলিস্তিনকে বাঁচানো যাবে? গাজায় হামলা বন্ধের যেন সব রাস্তাই বন্ধ, হামাসকে ঘিরে ফেলে মারতে চাইছে ইসরায়েল। এই যে এত বন্ধু হারাচ্ছেন নেতানিয়াহু, তাতে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। বেকার যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত চেষ্টা।
ধাক্কার পর ধাক্কা খাচ্ছে ইসরায়েল, সবাই যেন ফিলিস্তিনকে বাঁচাতে মরিয়া!
মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় আগাগোড়াই এক ঘরে ছিল ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। ইসরায়েলে বন্ধুত্ব বেশিরভাগ সময় দেখা গিয়েছে পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, ইউরোপের একের পর এক বড় রাষ্ট্রের কাছ থেকে ইসরায়েল ধাক্কা খেয়েই চলেছে। ইসরায়েল আর ফিলিস্তিনের শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও, এককালে ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও পাশে দাঁড়াচ্ছে ফিলিস্তিনের। সোজা কথায়, দুর্বল হচ্ছে ইসরায়েলের বন্ধুত্বের হাত। শুধু তাই নয়, এমত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ পর্যন্ত ইসরায়েলকে ছেড়ে কথা বলছে না। উল্টে ফিলিস্তিনের কীভাবে জোর বাড়ে তার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে।
এতদিন জাতিসংঘে ফিলিস্তিন যে লড়াইটা লড়ছিল, এবার সেই লড়াইটা হয়তো জিতে যেতে পারে। বহুবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছে, কিন্তু সবশেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে ওঠেনি। এবার ইউরোপের দেশ স্পেন আয়ারল্যান্ড নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল তাদের বড় সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিল। যা যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের কাছে একটা বড় ধাক্কাই বলতে পারেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বহুবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের মুক্তিসহ স্বাধীনতার দাবিতে একটা ন্যায্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা যদি স্বীকৃতি পায়, তাহলে সেই আন্দোলন আরো গতিশীল হবে।
অর্থাৎ ফিলিস্তিনের আন্দোলনকে যথাযথ বলে সিলমোহর দিয়ে দিল জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক এই সংস্থার মতে, ফিলিস্তিনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির ক্ষেত্রে রাফাতে সামরিক অভিযান বন্ধ করাটা খুব দরকার। গাজায় যত তাড়াতাড়ি যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করা হবে ততই ভালো। কারণ একটাই, ফিলিস্তিন আর ইসরায়েল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই যে নিরাপত্তাহীনতা আর সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পথ হল দ্বিরাষ্ট্র সমাধান। যেটা বড্ড প্রয়োজন। নাহলে অশান্তির আগুনে পুড়বে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। আর সেই সমাধানের প্রথম ধাপটাই হল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কয়েক মাস আগেই কিন্তু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই বিষয়ে একটা ভোটাভুটি হয়েছিল। যেখানে ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্য পদ প্রাপ্তির পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩ টি দেশ।
ভূ রাজনীতিতে ব্যালেন্স হারাচ্ছে ইসরায়েল, নিজের পায়ে কুড়ুল মারছেন নেতানিয়াহু
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, ধীরে ধীরে কিন্তু ইউরোপের দেশগুলো ফিলিস্তিনের দিকে ঘেঁষছে। কয়েকদিন আগেই ইউরোপীয় দেশ স্লোভেনিয়ার পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যে প্রস্তাব অনুযায়ী, দেশটা স্বীকৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনকে। যা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটার কাছে অনেক বড় পাওনা। সামাজিক মাধ্যমের এক্সে দেয়া পোস্টে স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন রবার্ট গোলব বলেন, একটা সার্বভৌম আর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি পশ্চিমি তীর সহ গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটা বড় আশার সঞ্চার করেছে। গত মাসে ইউরোপীয় ৩ দেশ স্পেন আয়ারল্যান্ড আর নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অপরদিকে ফ্রান্স স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। প্রশ্ন তো এখানেই। যখন ইউরোপের দেশগুলো ফিলিস্তিনের দিকে ঝুঁকছে, তখনই সেই দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে মরিয়া ইসরায়েল।
কিন্তু এভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে একদিন ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র বলতে হাতে গোনা কয়েকটা দেশ থাকবে। জাতিসংঘে ধীরে ধীরে ইসরায়েলের গুরুত্বও কমবে। তাহলে কি, আন্তর্জাতিক কূটনীতিটা ঠিকঠাক ব্যালেন্স করতে পারছেন না নেতানিয়াহু? শুধুমাত্র হামাসকে টার্গেট করতে গিয়েই বিশ্বমঞ্চে নিজের দেশের বড় পজিশনটা হারিয়ে ফেলবেন না তো? যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। ব্যাপারটা পুরোপুরি ঝুলে রয়েছে। হামাস প্রথমে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি বেঁকে বসে ইসরায়েল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী। বাইডেন মনে করেন, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে হামাস রাজি হয়, তাহলে ইসরায়েলও রাজি হবে। কিন্তু কোথায় কি, বিষয়টা পুরো আলোচনা স্তরেই রয়ে গিয়েছে।
মুখোশ খুলে যাবে নেতানিয়াহুর, নড়বড়ে হচ্ছে ইসরায়েলের ভিত!
এই যে গাজায় ইসরায়েলের উন্মত্ততা এটা কি নেতানিয়াহুর ভয় পাওয়ার ফল? যে ভয় থেকে এত বড় স্টেপ নিচ্ছেন? অব্যাহত রেখেছে গাজা যুদ্ধ। গত বছরের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে করা হামাসের আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন ঠিকই, কিন্তু সেখানে চরম ভুক্তভোগী গাজার সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক মহলে যার জেরে ইসরায়েলকে তুমুল সমালোচিত হতে হচ্ছে। অথচ এই ইসরায়েল নিজেকে সবসময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করে, আর ফিলিস্তিনিকে দাবি করে সন্ত্রাসবাদ বলে। বহু সমালোচকের ধারণা, গোটা বিশ্বের সামনে ইসরায়েল একটা মুখোশ পরে রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলো সেই মুখোশ টেনে খুলে ফেলতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম হল, যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের বিক্ষোভ, নেতানিয়াহু এবং তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়া, একের পর এক ইউরোপীয় দেশের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া, এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলকে রাফা হামলা বন্ধের নির্দেশ।
আর এই ঘটনা গুলো নাড়িয়ে দিতে পারে ইসরায়েলের ভিত। ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে দেশটার ভালো ইমেজকে। অপরদিকে বহু ফিলিস্তিনি মনে করছে, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলেও, ফিলিস্তিনকে হত্যা দখলদারি থেকে সম্পূর্ণভাবে বাঁচানো যাবে না। গজায় যে ভাবে হামলা চলছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একটা কার্যকরী কৌশল দরকার। যে স্টেপগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা। ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করা এবং ইসরায়েলকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে বর্জন করা। অথচ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই দিকটাতে গুরুত্ব না দিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে। আর সব থেকে বড় কথা কি বলুন তো, ইসরায়েল এখন বিশ্বের যে জায়গাটাতে রয়েছে, যতটা শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সহজ ব্যাপার নয়। হয়ত বহু দেশ মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে, ফিলিস্তিনের পাল্লা ভারী করতে পারে, কিন্তু গোটা বিশ্বের কাছে ইসরায়েল কখনই একা হয়ে যেতে পারে না।
কারণ ইসরায়েলের নেপথ্যে রয়েছে পশ্চিমা দুনিয়ার একটা বড় সাপোর্ট। প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্য শক্ত করে ধরে রেখেছে নেতানিয়াহুর হাত। তাছাড়া প্রত্যেকটা দেশে চলে নিজেদের জাতীয় স্বার্থের নীতিতে। এই যে এত রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের হয়ে কথা বলছে, সরাসরি কিন্তু ফিলিস্তিনের হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না। যদি ফিলিস্তিনের সমর্থনকারী দেশগুলো একজোট হয়ে গাজা হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তাহলে গাজা যুদ্ধ বন্ধ হতে বাধ্য। কিন্তু সবাই চলছে তাদের কূটনৈতিক নির্দিষ্ট একটা নীতিতে। তাই ইসরায়েলকে মাত দেওয়া অতটা সোজা নয়। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে গেলে অবিলম্বে একটা সুষ্ঠ কার্যকরী পদক্ষেপের প্রয়োজন। আর তার থেকেও বড় দরকার, ইসরায়েল আর হামাসের সমঝোতা। না হলে মাঝখান দিয়ে যতই আলাপ আলোচনা হোক না কেন, সবটাই বেকার হয়ে যাবে। আর পড়ে পড়ে মার খাবে গাজার সাধারণ মানুষ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম