।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran-Israel conflict: হুঙ্কার ছাড়ল হিজবুল্লাহ, হামলা হবে ইসরায়েল জুড়ে। এবার হামলা হবে ইসরায়েল জুড়ে। লেবাননের একবার যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে ইসরায়েলের আর কোন জায়গায় নিরাপদ থাকবে না। মধ্যপ্রাচ্যে আরো বড় সংকট। নেতানিয়াহুকে বড় হুমকি। না, আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চুপ থাকবে না লেবানন। ইসরায়েল হুমকি দিলে পাল্টা হুমকি দিতে যেন প্রস্তুত হিজবুল্লাহ। যে কোনো মুহূর্তে বেঁধে যেতে পারে লেবানন আর ইসরায়েলের যুদ্ধ। তা বুঝিয়ে দিলেন হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ। সাথে জড়িয়ে পড়ল এবার ইউরোপের দেশ। তাহলে কি তলে তলে ইরান হিজবুল্লাহর শক্তি বাড়াতে শুরু করে দিয়েছে? ইসরায়েলের পাশে থেকে হঠাৎ সাইপ্রাস মধ্যপ্রাচ্যে নাক গলাচ্ছে কেন? হুঙ্কার ছাড়ছে হিজবুল্লাহ। সাইপ্রাসের সামনে কোন বড় বিপদ? ইরানকে বড় সুযোগ করে দিচ্ছে লেবানন, প্রশস্ত হচ্ছে যুদ্ধের রাস্তা।
ইরানকে বড় সুযোগ হিজবুল্লাহর, ইসরায়েলে হামলার নতুন প্রস্তুতি
প্রায় ৮ মাসেরও বেশি হয়ে গেল, হামাসের হামলার পাল্টা গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। মাঝখানে যুদ্ধ বিরতির কথা নিয়ে কত জল বয়ে গেল। মধ্যস্থতা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু না, কোন কিছুই কাজে এল না। না হামাস হেরেছে , না ইসরায়েল হামলা বন্ধ করেছে। হামাস জানে, তার পিছনে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশের সহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সাপোর্ট আছে। সাহায্য চাইলে সাহায্য পাওয়াটা একদম জলভাত ব্যাপার। অপরদিকে ইসরায়েলও জানে, এই যুদ্ধে হেরে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে তার জায়গা হারাবে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে। তেল আবিবে হামলা করার বড় সুযোগ পেয়ে যাবে ইরান। তাই দুই পক্ষই এখন নাছোড়বান্দা। আর এমত পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলের সামনে একের পর হুমকি তৈরি করেছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী কিন্তু হামাসের বেজায় সাপোর্টার। তার উপর ইরানের শক্তিতে বলীয়ান। আর তাই ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতায় বিন্দুমাত্র খামতি রাখছে না। তাছাড়া লেবাননের সাথে ইসরায়েলের শত্রুতা তো আর কম পুরনো নয়। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে, লেবানন সীমান্তের সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী আর হিজবুল্লাহ।
দফায় দফায় সংঘাতে দুই পক্ষের বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এরই মাঝে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়ে দেয়, তারা লেবাননের সাথে যুদ্ধ করতে একদম প্রস্তুত। তারা কখনই সীমান্তে হিজবুল্লাহর উপস্থিতি সহ্য করবে না। এবার তারই কড়া জবাব দিয়েছে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ। রীতিমত হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, যদি একবার সত্যি সত্যি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে ইসরায়েলের কোন জায়গা নিরাপদ রাখবে না। অর্থাৎ ইসরায়েল জুড়ে হামলা চালাবে লেবানন। সেই হামলা ইসরায়েলের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। বলছে কারণ তারাও তলে তলে যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। যাতে ইসরায়েলের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে। নেপথ্যে যে ইরানের সাপোর্ট রয়েছে তা তো সবাই জানে। ইরানের কাজ যেন অনেকটা সোজা করে দিচ্ছে হিজবুল্লাহ। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ যেখানে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের সঙ্গে এত গুলো মাস যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে পেরেছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হিজবুল্লাহরও মনের সাহস পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই প্রসঙ্গেই চলে এসেছে সাইপ্রাসের কথা। মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতে যেন হঠাৎ করে একটা দেশের নাম চলে এল। কিন্তু এই সাইপ্রাসের সঙ্গে হিজবুল্লাহর শত্রুতা কী? কেনই বা সাইপ্রাসকে হুমকি দিচ্ছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী? এখানেও রয়েছে কিন্তু বিস্তর জলঘোলা।
হিজবুল্লাহর রোষে সাইপ্রাস, ইসরায়েলকে সাহায্য করলেই মারাত্মক বিপদ
এই প্রথমবারের মতো কিন্তু কোন ইউরোপের দেশকে হামলার হুমকি দিয়েছে হিজবুল্লাহ। যদি ভৌগলিক দিক থেকে বিচার করা হয় তাহলে সাইপ্রাসের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। কিন্তু এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। হিজবুল্লাহ মনে করছে, যদি লেবানন ইসরায়েলের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়, তখন সাইপ্রাস ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের বন্দর আর ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিতে পারে। যার অর্থ সাইপ্রাসের সরকার এই যুদ্ধের অংশ। এই সাইপ্রাসে কিন্তু ব্রিটেনের দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। দুটি ঘাঁটির একটি বিমানবাহিনীর ঘাঁটি। দেশটার প্রতিরোধ বাহিনী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে কাজ করবে। যেন আগেভাগেই সতর্ক করে দিল হিজবুল্লাহ। যদিও সাইপ্রাস জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো সংঘাতে জড়াবে না। কিন্তু এসব কথা যেন কানেই নিচ্ছে না হিজবুল্লাহ। লেবানন আর ইসরায়েলি উপকূলের পশ্চিমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সাইপ্রাসকে রীতিমত সতর্ক করে বলেছে, তাদের কাছে নাকি তথ্য আছে, ইসরায়েল সাইপ্রাসে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। ওদিকে সাইপ্রাস সরকারের মতে, হিজবুল্লাহ প্রধানের দেওয়া এমন বিবৃতি কিংবা হুমকি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সাইপ্রাস কখনো সামরিক সংঘাতে জড়িত ছিল না। আর ভবিষ্যতে হবেও না। দেশটার প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডৌলিদেস বলেছেন, ‘গাজা যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর দেশ জড়িত নয়। তাঁরা বরং সমাধানের অংশ। তাঁদের সমাধান প্রচেষ্টার বিষয়টি পুরো আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক স্বীকৃত। পাশাপাশি তিনি গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে তাঁর দেশের ভূমিকার কথাও বলেছেন। কিন্তু তিনি যতই যাই বলুন না কেন, ইসরায়েলের মিত্রদের জন্যেও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলের পাশে যে দাঁড়াবে, তাদের কেও ছেড়ে কথা বলবে না লেবানন। অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস যদি লেবাননে হামলা চালানোর জন্য ইসরায়েলকে নিজেদের আকাশসীমা খুলে দেয় তাহলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। সাইপ্রাসেও হামলা চালাবে হিজবুল্লাহ।
ভাঙছে ইসরায়েল, আশঙ্কার মেঘ নেতানিয়াহুর মাথায়
কিন্তু প্রশ্নটা হল, যদি লেবাননের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধে, এই মুহূর্তে তা সামাল দেয়ার মতো তেল আবিবের ক্ষমতা আছে তো? তবে হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে ইসরায়েলের শক্তি কম নেই। ইসরায়েলের ভাঁড়ারেও অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট স্ট্রং। তাছাড়া পশ্চিমারা ইসরায়েলের বিপদে পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বর্তমানে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ অবস্থার দিকে তাকান, সেখানে রীতিমত ভাঙন দেখা দিয়েছে। নেতানিয়াহু যা বলছেন, আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান যা বলছেন, সেখানে বেশ অসামঞ্জস্য রয়েছে। ইতিমধ্যেই নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। কোনও দেশের সেনাপ্রধান বা সেনাবাহিনী যখন সেই দেশের সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়, তার পরিণাম কিন্তু ভয়ানক হতে পারে। সেই দেশের জনগণ পর্যন্ত সেই সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এমন কি সেই সরকারের পতন হতেও পারে। গৃহযুদ্ধের মুখে পড়তে পারে দেশটা। এতগুলো আশঙ্কার মেঘ এখন ইসরায়েলের মাথায়।
তার উপর দেশটা চালাচ্ছে, জোট সরকার। নেতানিয়াহু সব সময় ভয়ে ভয়ে আছেন, এই বুঝি জোট সরকার ভেঙে গেল। নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু এখন তাঁর বেঁধে দেওয়া সেই লক্ষ্য অর্জন প্রশ্নের মুখে। ইজরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারির মতে, হামাসকে নির্মূল করা নাকি অসম্ভব এবং এক কথায় ভুল। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বক্তব্য যে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ঝড় তুলবে সেটাই স্বাভাবিক । আর সেটাই হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের মতে, হামাসকে ধ্বংস করা, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া এক কথায় জনগণের চোখে ধুলো দেয়ার মতো। কারণ হামাস একটা দল, যে সংগঠনটি কিছু মানুষের মনের মধ্যে রয়েছে। কেউ যদি মনে করে হামাসকে নির্মূল করবে সেটা ভুল। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাগারির এই বক্তব্যে বেশ রেগে রয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। নেতানিয়াহু গাজায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ায়, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, এই নীতি অবাস্তব। সেখানে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর নেতানিয়াহু। যদিও তারপরেই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়ে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়ে দিয়েছে, মন্ত্রিসভার ঠিক করে দেওয়া যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনে সামরিক বাহিনী অঙ্গীকারবদ্ধ । আর তারা এই যুদ্ধে দিনরাত সেই কাজটি করে চলেছে। অব্যাহতভাবে সেটাই করবে।
আরো বলা হয়, হাগারির বক্তব্য ছিল হামাসের মতাদর্শ এবং ধারণা ধ্বংস করা নিয়ে। সেখানে অন্য সব দাবি নাকি অপ্রাসঙ্গিকভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সোজা কোথায়, ইসরায়েল এখন অন্তর্দ্বন্ধের বিতর্ক থেকে বের হতে চাইছে। যখন বাইরে চারিদিকে শত্রু, সেখানে নিজের ঘর সামলানোটা বড্ড জরুরি বলে মনে করছেন নেতানিয়াহু। তাই অভ্যন্তরীণ কোন সমস্যাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তবে এটা ঠিক, গাজা যুদ্ধ নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সেনা বাহিনীর এই ধরনের বিরোধ একদমই কিন্তু নতুন নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নেতানিয়াহু পরোক্ষভাবে বিতর্কে জড়িয়েছে। এছাড়াও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মন্ত্রী বেনি গানতজ। সোজা কোথায় অভ্যন্তরীণ চাপে রয়েছে দেশটা। এমত পরিস্থিতিতে যদি লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে তাহলে নেতানিয়াহু সরকার যে আরও বিপাকে পড়বে এটাই বাহুল্য। তাইতো যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি লেবানন আর ইসরায়েলের বিবাদ মেটাতে চাইছে। বোঝাচ্ছে দুই দেশকেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উপদেশ এই দুই পক্ষ আদৌ কানে তুলবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম