।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel in Hezbollah’s trap: মধ্যপ্রাচ্যে বাঁধবে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ, মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল। ইসরায়েল-হামাসের পর আবারো মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা। ভয় পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তড়িঘড়ি সবটা সামলাতে চাইছেন জো বাইডেন। না হলে যে মারাত্মক বিপদ। এবার আর চুপ থাকবে না ইরান। হিজবুল্লাহর ফাঁদে পড়ে গেল না তো ইসরায়েল? ইরান হয়তো এটাই চাইছিল। যুদ্ধে যুদ্ধে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ুক ইসরায়েল। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের কোন নতুন প্ল্যান? মুহূর্তে সুর পাল্টে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র, এবার আর ঘুরপথে নয়। সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে ইরান-ইসরায়েল! লেবানন তো মাধ্যম মাত্র। মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্কর পরিণতির আঁচ পড়বে যুক্তরাষ্ট্রে। রিস্কে জো বাইডেনের গদি।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভয়, বানচাল বাইডেনের স্বপ্ন!
গোটা মধ্যপ্রাচ্য যেন বসে আছে উত্তেজনার কড়াইতে। আবারো বড় যুদ্ধের আশঙ্কা। কিন্তু এবারও সেই ঘুরে ফিরে চলে এল ইসরায়েলের নাম। তবে হামাস বা ফিলিস্তিন নয়, লড়াইটা শুরু হতে পারে লেবাননের সঙ্গে। দুই পক্ষই যুদ্ধের জন্য একদম প্রস্তুত। যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর একবার যদি ইসরায়েল আর লেবাননের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যায়, তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতের বাইরে চলে যাবে। তাই তড়িঘড়ি জো বাইডেন ইসরায়েল আর লেবাননের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি পাঠালেন ইসরায়েলে। কিন্তু কেনই বা যুক্তরাষ্ট্র এত ভয় পাচ্ছে? আদৌ কি ভয় পাওয়ার কোন কারণ রয়েছে? কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, সামনে ওয়াশিংটনকে ফেস করতে হবে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের জেরে ফেল হয়ে যেতে পারে জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি। যা বাইডেন সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। হয়ত বা যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে কোন বড় রকমের ঝামেলা চাইছে না।
তার উপর যে মধ্যপ্রাচ্যে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র মোড়লগিরি ফলাতে চেয়েছিল, সেই মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশই কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রকে মানে না। উল্টে বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। ইসরায়েল আর লেবাননের যুদ্ধ বাঁধা মানে, আবারো সেই দলাদলি। কিন্তু পক্ষ আর বিপক্ষের অঙ্কের সমীকরণে খুব একটা বদল আসবে না। অর্থাৎ লেবাননের পক্ষে থাকবে ইরান ফিলিস্তিন সহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ। ওদিকে ইসরায়েলের সাপোর্টে থাকবে পশ্চিমারা। অনেকটা ইসরায়েল হামাসের যুদ্ধের মতোই পরিস্থিতি। শুধুমাত্র হামাসের পরিবর্তে এখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে লেবাননের হিজবুল্লাহ্। গাজা যুদ্ধের প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে থেকেও গোটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্বাস অর্জনের জন্য মাঝেমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। অস্ত্র দেবে না বলে হুমকিও দিয়েছে। কিন্তু শেষমেষ অটুট রেখেছে তেল আবিব-ওয়াশিংটনের বন্ধুত্ব। যা মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম প্রধান দেশগুলোর কাছে চক্ষুশূল ব্যাপার। এটা প্রথম থেকেই আঁচ করতে পেরেছেন জো বাইডেন। তাই এবারে আর কোন ভুল পদক্ষেপ নয়। তিনি খুব ভালো করে জানেন, যুদ্ধ বাঁধলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলবে। আর একবার যদি হিজবুল্লাহ্ হামাস সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জোট বেঁধে একসাথে ইসরায়েলকে আক্রমণ করে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশের পক্ষে তা ভালো হবে না। বলে রাখা ভাল, ইসরায়েল যথেষ্ট শক্তিধর দেশ। পশ্চিমাদের প্রচুর সাপোর্ট রয়েছে। কিন্তু শত্রু সংখ্যা বেড়ে গেলে, সামাল দেওয়া মুশকিল।
ইসরায়েলকে বোঝাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, নেতানিয়াহু আদৌ শুনবেন তো?
এই সম্ভাব্য যুদ্ধ যদি না ঠেকানো যায়, তাহলে সত্যি সত্যি এবার মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলে উঠবে। আর তাই হয়ত যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থামাতে তড়িঘড়ি মাঠে নেমে পড়েছে। বোঝানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েলকে। কারণ ইসরায়েল লেবাননে হামলার সমস্ত প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। ওদিকে হুঙ্কার ছাড়ছে হিজবুল্লাহ। লেবাননের সাথে ইসরায়েলের শত্রুতা কম নেই। গাজায় হামলার শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহুর সরকার লেবাননের দিক থেকে প্রচুর প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। প্রতিনিয়ত চলছে হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লড়াই। কিন্তু কি বলুন তো, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের কথা যে অক্ষরে অক্ষরে শুনবে, এমনটা কিন্তু কোনও গ্যারান্টি নেই। এর আগেও যখন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের মধ্যে একটু মনোমালিন্য চলেছিল। তখন স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল, নেতানিয়াহু স্বার্থের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনকে পাত্তা দেন না। নিজের নীতিতেই চলেন। তাই তিনি যদি মনে করেন, লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন তো অবশ্যই যুদ্ধ করবেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কথাকে কোন রকম ভাবেই তোয়াক্কা করবেন না। তার বড় উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়। গাজায় যুদ্ধ বিরতি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কম চেষ্টা করেনি। এমনকি ইসরায়েলকে বারংবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরায়েল তার সিদ্ধান্তেই অনড়।
পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে বাইডেন চুপ করে বসেও থাকতে পারছেন না। তাই বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন পাঠিয়েছেন নেতানিয়াহু আর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে বৈঠক করতে। হোচস্টেইনকে বাইডেন নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে এই ইসরায়েল আর লেবাননের মধ্যে শত্রুতার ব্লু লাইন কোনভাবেই অতিক্রম না হয়। সেই চেষ্টা চালাতে হবে। হোচস্টেইনের সাথে ছিলেন মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি স্টেফানি হ্যালেট। যদিও বৈঠকে বিস্তারিত কী আলোচনা হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত ইসরায়েল সরকার জানায়নি। তবে হোচস্টেইন ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক করেছেন। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে জরুরী ভিত্তিতে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় , হোচস্টেইন গিয়েছিলেন লেবাননেও। দেশটার রাজধানী বৈরুত সফরে গিয়ে বলেন, ইসরায়েল আর লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘাত চলছে। এই ইস্যু কূটনৈতিকভাবে খুব দ্রুত সমাধান করা জরুরী। পাশাপাশি স্পষ্ট বলেছেন, ওয়াশিংটনে এই অঞ্চলে বড় যুদ্ধ এড়াতে চায়।
ইসরায়েলের ত্রাস হিজবুল্লাহ, লড়াই লাগবে ইরানের সাথে
বিগত আট মাস ধরে ইসরায়েল এবং লেবাননে একের পর এক চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। ইসরায়েলের উপর এই হামলাগুলো মূলত চালাচ্ছে লেবাননের ইরান সমর্থিত ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইরানের সাথে হিজবুল্লাহর সখ্যতা কিন্তু অত্যন্ত গভীর। তাই তো কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, যদি লেবানন আর ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে, আর সেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে সেখানে ইরান জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনি থেকেই হিজবুল্লাহ্কে সমস্ত রকম সাপোর্ট দিয়ে থাকে ইরান। তেহরানের ক্ষমতাতে এত জোর পায় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। না হলে ইসরায়েলের মত শক্তিধর দেশে একটা সশস্ত্র গোষ্ঠীর পক্ষে বারংবার হামলা চালানো অত সহজ ব্যাপার ছিল না। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে উচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের। ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে তারা যে জোট বাঁধতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা জোর গলায় ঘোষণাও করেছে। আর তাই হয়ত, ভয় পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ লেবানন ইসরায়েলের যুদ্ধ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। যুদ্ধটা তখন শুধু এই দুই পক্ষের মধ্যে থাকবে ন, দলাদলি হয়ে দুভাগ হয়ে যাবে গোটা অঞ্চল। যেখানে এক দিকে থাকবে ইরান সমর্থিত দেশ এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। অপরদিকে থাকবে ইসরায়েল সমর্থিত দেশগুলো। লড়াই হবে শেয়ানে সেয়ানে। ইসরায়েল যুদ্ধ করা মানেই পশ্চিমারা জড়িয়ে পড়বে। আর এই মুহূর্তে নির্বাচনের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধের এত বড় ধকল নেয়া সম্ভব নয়।
আসলে মধ্যপ্রাচ্যে লেবানন-ইসরায়েলের উত্তেজনা ধীরগতির। কিন্তু সমস্যা হল তা ক্রমাগত বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সীমান্তে দুই পক্ষের হতাহতের সংখ্যা আর হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরণ। যা ইসরায়েলের জন্য বড় হুমকি তৈরি করেছে। এই দুই পক্ষের যুদ্ধ প্রায় কয়েক দশক ধরে চলছে। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত ট্যাংক পাঠিয়েছিল। এখানেও কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল লেবাননে থাকা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রসঙ্গ। তার দীর্ঘ ২২ বছর পর দক্ষিণ লেবানন দখল করে নেয় ইসরায়েল। আর সেই সময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে হিজবুল্লাহ। ওই অঞ্চল থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইসরায়েল। তারপর থেকেই গোটা বিশ্বে একটা ক্ষমতাশীল সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে হিজবুল্লাহ্। এই গোষ্ঠীর মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনী রয়েছে। তারা সবসময় ইসরায়েলকে প্রতিহত করার দায়িত্বে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। ইসরায়েলকে বিবেচনা করে এসেছে একটা শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে। তাই তো পশ্চিমা বিশ্বে হিজবুল্লাহকে প্রায়ই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করা হয়। দুপক্ষ বারংবার দিয়েছে কঠোর বক্তব্য। এর আগেও নেতানিয়াহু স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যদি কেউ মনে করে, তারা ইসরায়েলের ক্ষতি করবে, তখন কিন্তু ইসরায়েল নীরব থাকবে না। যেভাবেই হোক ইসরায়েল উত্তরের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনবে। অপরদিকে হিজবুল্লাহ্ ইসরায়েলকে দমিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। এমত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ বাঁধার আশঙ্কা প্রবল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম