।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel-Hamas war: এক তালিকায় ইসরায়েল আর হামাস! আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাঠগোড়ায় দুই পক্ষই। ক্ষোভে ফুঁসছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের তুলনা, যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ওদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে, কতটা চাপে পড়তে চলেছে হামাস?এই সুযোগে ইসরায়েল মারাত্মক কান্ড ঘটিয়ে বসবে না তো? সাবধানে হামাস নেতারা, একমাত্র ইরানই পারে বাঁচাতে। রাইসির মৃত্যুর পর এবার কি হাল হবে হামাসের? আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে হামাস ইসরায়েলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, নাকি শক্তি হারিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হবে? সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কথা উঠলেই, বারংবার তিনটে নাম চলে আসে। ইসরায়েল, ইরান আর হামাস। সেখানে এখন কয়েক দিনের জন্য ব্যাকফুটে রয়েছে ইরান। তাহলে এবার কোন দিকে এগোবে ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধ? হামস যে ইরানের উপর অনেকটা ডিপেন্ডেড, তা গোটা বিশ্ব জানে। ইরান থেকে অস্ত্র আর অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে হামাস। এবার সেই সাহায্যটা কোথা থেকে পাবে? এরই মাঝে ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো, ইসরায়েল গাজায় হামলা আরো জোরদার করলে, ভীষণ মুশকিলে পড়তে পারে হামাস গোষ্ঠী। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কিন্তু এটা কি শুধুই আশঙ্কা? নাকি সত্যি সত্যি এমনটা করতে পারে তেল আবিব? ইরান তো বলেই দিয়েছে, তাদের নীতি থেকে বিন্দুমাত্র পিছু পা হবে না। কিন্তু ক্ষমতার হাত বদলে, হামাস কি আগের মতই কি সাপোর্ট পাবে?
রাইসির মৃত্যুতে বাড়ছে ইসরায়েলের মনোবল, ব্যাকফুটে হামাস?
রাইসির মৃত্যুতে কিছুটা মনোবল ফিরে পেয়েছে ইসরায়েল। রাইসের মৃত্যুর পর পশ্চিমা দুনিয়া থেকে শুরু করে ইসরায়েল কিন্তু একদম চুপ। এই চুপ মানে যে তারা নীরবতা পালন করছে তা নয়। হয়তো তলে তলে কষছে অন্য কোনো প্ল্যান। মনে পড়ে, যখন গতবছরের অক্টোবরে ইসরায়েলকে টার্গেট করে হামাস হামলা চালিয়েছিল, তখন ইরান জোর গলায় বলেছিল, হামাসের লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি হামাসকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাদের লক্ষ্য অর্জনের সাহায্য করবেন। আরো বলেন, ইসরায়েল যদি এভাবেই হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ওই অঞ্চলে যে কোন কিছু ঘটতে পারে। ইসরায়েলকে এই হামলা বন্ধে ইরান তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। গাজায় কীভাবে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য তেহেরান সব ইসলামী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ইরানের সেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর নেই। তাহলে কি হামাসকে দেওয়া তাদেরকে সেই কথার দাম আর রইল? এটাও একটা বড় প্রশ্ন।
ইরানে নতুন যিনি অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন, বা পরবর্তীকালেই যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন, তিনি হামাসকে কীভাবে সামলাবেন? আগের মতই কি হামাসের উপর ভরসা করবে? রয়েছে প্রচুর সংশয়। তবে ইরান নিজের রাষ্ট্রপতি আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হারালেও তাদের নীতি থেকে সরে আসেনি। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই বলে এসেছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য হামাসকে যে যে ধরনের সাহায্য দেয়া প্রয়োজন, সব রকম ভাবে সাপোর্ট করবে। তার কথায়, হামাস সবার কাছে প্রমাণ করে দিয়েছে, গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা এই ধরনের অভিযানে উদ্যোগ নেওয়া এবং তা সফল করার ক্ষমতা রাখে। প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা এই ধরনের সংগঠন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর যুদ্ধের ময়দানে তাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। তবে এই জায়গাতেও রয়ে গিয়েছে বিস্তর বিতর্ক। কারণ প্রথম দিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জানিয়ে দিয়েছিলে, হামাস ইরানকে না জানিয়ে ইসরায়েলে অভিযান চালিয়েছিল, তাই এই যুদ্ধে ইরান কখনোই সরাসরি জড়িত হবে না। তবে এ কথা সবাই জানে যে হামাসকে সবথেকে বড় সাপোর্টটা দিচ্ছে ইরান। সেই জায়গায় যদি ইরানের ভিতর নড়বড়ে হয়ে যায়, তখন কিন্তু হামাসের ভিতও দুর্বল হতে বাধ্য।
হামাসের ভিত ইরান, চোরাপথে চলে লেনদেন
দেখতে দেখতে সাত মাস হয়ে গেল। এখনো পর্যন্ত ইসরায়েল পুরোপুরি ভাবে গাজা কব্জা করতে পারেনি কিংবা হামাসকে নির্মূলও করতে পারেনি। যদি বলা হয়, হামাসকে কারা এত শক্তিশালী করছে বা কোথা থেকে হামাস এত অর্থ পাচ্ছে, তার উত্তরে ঘুরে ফিরে জড়িয়ে পড়বে ইরানের নাম। তাই ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি কিংবা টানাপোড়েনের উপর নির্ভর করে হামাসের অবস্থান। যতদূর শোনা যায়, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস নাকি বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করে থাকে একটা আর্থিক নেটওয়ার্ক। আর সেই সহায়তা পায় বিভিন্ন দ্রাতব্য সংস্থা আর বন্ধু প্রতিম কিছু দেশ থেকে। গাজায় নগদ অর্থ আসে টানেলের মাধ্যমে। কখনো কখনো ব্যবহার করা হয় ক্রিপটোকারেন্সি। মূলত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই তারা এটা করে থাকে। একবার মার্কিন কর্মকর্তা ম্যাথু লেভিট দাবি করেছিলেন, হামাসের মোট বাজেট প্রায় ৩০ কোটি ডলারেরও একটু বেশি। আর সেই অর্থের বড় অংশ আসে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর আরোপ করা কর থেকে। আর বাকি টাকা দেয় ইরান কাতার সহ বহু দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, ইরান প্রতিবছর হামাস সহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীকে দেয় প্রায় ১০ কোটি ডলার। এই টাকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ছদ্ম কোম্পানি, জাহাজের ভাড়ার জন্য লেনদেন, আর মূল্যবান ধাতু। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে ইরান তাৎক্ষণিকভাবে তখনো কোন মন্তব্য করেনি। ইসরায়েল কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে হামাসকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য অভিযুক্ত করে এসেছে ইরানকে। ওদিকে তেহেরান সবসময় বলে এসেছে, তারা হামাসকে নৈতিক আর আর্থিক সমর্থন দেয়।
গ্রেফতারি পরোয়ানার কাঁটায় বিদ্ধ ইসরায়েল আর হামাস, দুইপক্ষ এক তালিকায়
যখন ইরান তার অভ্যন্তরীণ অবস্থায় টালমাটাল পরিস্থিতিতে, তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পড়েছেন আর এক সমস্যায়। যেন তার গলা থেকে নামতে চাইছে না, গ্রেফতারি পরোয়ানার কাঁটা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি করিম খান নেতানিয়াহু আর হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন। তারপর থেকেই রাগে ফুঁসছে ইসরায়েল। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই রয়েছে অভিযোগ। প্রথমত ইসরায়েলে হামাসের হামলা, দ্বিতীয়ত সেই ধারাবাহিকতায় গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ ও হামাসের আরো দুই নেতা। জড়িয়ে পড়েছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াও। এটা হামাসের কাছেও একটা বড় চাপের বিষয়। হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, জিম্মি, বন্দিদের আটকের অভিযোগ। অপরদিকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, ত্রাণ সরবরাহে বাধা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ। এই অভিযোগে নেতানিয়াহু যত না ক্ষুব্ধ হয়েছে, তার থেকেও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, ইসরায়েলকে হামাসের সঙ্গে তুলনা করায়। যেহেতু একই অভিযোগের তালিকায় দুই পক্ষকেই রেখেছে, তাতেই যেন আত্মসম্মানে ঘা লাগছে নেতানিয়াহুর। তার কথায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করার ঘটনা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতার বিকৃতি। কারণ এখানে ইসরায়েল আর হামাসের তুলনা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর মতে, তিনি যাকে গণহত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থাৎ হামাস নেতা সিনওয়ার, তার সাথে তুলনা করা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ইসরায়েলকে। এই আবেদন অযৌক্তিক এবং মিথ্যা আদেশ। নেতানিয়াহুর এমন ক্ষোভ প্রতিধ্বনিত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গলায়ও। বাইডেনের কথায়, ইসরায়েল আর হামাস নাকি সমতুল্য হতে পারেনা।
কতটা ভেঙে পড়বে হামাস? নাকি সবটাই নিছক আশঙ্কা?
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে হামাস কতটা ভেঙে পড়বে, এক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটা সংশয়। কিছুদিন ধরেই তো মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা চলছিল। তার উপর ইরান মনে করছে, রাইসির মৃত্যুর পিছনে ইসরায়েলের হাত আছে। যদিও তথ্যপ্রমাণ এখনো পর্যন্ত কিছুই দিতে পারেনি। তবে ইরান অনুসন্ধান বন্ধ রাখেনি। স্বাভাবিকভাবেই আরো বাড়তে পারে জটিলতা। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের যে সমস্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এতদিন ইরান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল, ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছিল, তারা কিন্তু ইরানের শত্রু দেশ অর্থাৎ ইসরায়েলসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সহিংসতা ঘটনা বাড়াতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। শুধু তাই নয়, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের উপর বড় আক্রমণ করতে পারে ইরান। সোজা কথায়, আরো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে মধ্যপ্রাচ্য। সেক্ষেত্রে ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে গাজা ইস্যু। ঠিক যেমন ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের উত্তেজনা এখন সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে শুধুমাত্র ওই দুই দেশের মধ্যে। আন্তর্জাতিক মহলে এটা নিয়ে আর খুব বড় করে চর্চা চলে না। তেমনটাও হতে পারে হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্ষেত্রে। তখন কিন্তু এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘমেয়াদি হবে। আর ফল ভুগবে গাজাবাসী। যদি হামাস একই ভাবে ইরান থেকে সাপোর্ট পেয়ে থাকে, তাহলে যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদী হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর যদি হুট করে ইরান থেকে সাপোর্ট পাওয়াটা বন্ধ হয়ে যায়, ইরান সেক্ষেত্রে জয়ী হতে পারে ইসরায়েল।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম