।। প্রথম কলকাতা।।
Christmas 2022: শীতের ছুটি শুরু হল বলে। আর শীতের ছুটি মানেই বড়দিন ও নতুন বছরের শুরু। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে গলা মেলানোর সময়। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। এই দিন এদেশ হোক কিংবা বিদেশ, সকল জায়গায় বাড়িঘর সেজে ওঠে ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) আর আলোর রোশনাইতে। ভিড় পরে বেকারির দোকানে। এতজনের জন্মদিন রয়েছে। দুনিয়ায় মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করতে বহু জন জন্মেছেন। কিন্তু যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। বলতে গেলে ২৪ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব।
কিন্তু কেন ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন?
বাইবেলে আলাদা করে যিশুর (Jesus Christ) কোনও জন্ম তারিখ দেওয়া নেই। ইতিহাস বলে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ যিশুর জন্মের আগে ২৫ ডিসেম্বর প্রথম বড়দিন উদযাপিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পোপ জুলিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে এই তারিখকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করেন। আর তারপর থেকেই ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন হিসেবে পালিত হয় ও যিশুর জন্মদিন হিসেবে এই দিনটিকেই মানা হয়।
কিন্তু বড়দিন কি আসলেই বড়?
এমনিতে উত্তর গোলার্ধে ডিসেম্বর মাসে শীতকাল অর্থাৎ দিন ছোট আর রাত বড়। তাহলে ২৫ ডিসেম্বর কে কেন বড়দিন বলা হয়? খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব এটি। যদিও কালে সকল ধর্মাবলম্বীর মানুষ এই উৎসবকে নিজের করে নিয়েছে। গ্রীক বর্ণমালায় বড়দিনের অর্থ পাওয়া যায়। বলা হয়, যিশু খ্রিষ্টের জন্ম মাস বলে পুরো মাসকে ‘ক্রিসমাস’ বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে এসেছে খ্রিষ্টের মাস। কিন্তু এই দিনটিকে ‘বড়দিন’ বলার কারণ কী? ভৌগোলিক ব্যাখ্যা দিয়ে এর উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে না। মূলত এখানে ‘বড়’ অর্থে ‘দীর্ঘ’ নয়। এর অর্থ মহান বা পবিত্র। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ২৫ ডিসেম্বর মহান পুরুষ যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল। তাই এই দিনটিকে ‘বড়দিন’ আখ্যা দেওয়া হয়। এমনকি দার্শনিকেরাও মনে করেন, মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড় দিন। এটিকে বড়দিন হিসেবে পালন করার প্রথা শুরু করেন রোমানরা। ইতিহাস বলে, রোমান রাজা অরেলিয়ান এই দিনে মহাসমারোহে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন শুরু করেছিলেন। সে কারণে বিশ্বজুড়ে ২৫ ডিসেম্বরকেই ‘বড়দিন’ হিসেবে পালন করা হয়। অন্যদিকে বিশ্বের কিছু জায়গায় আবার এই উৎসব ৭ জানুয়ারি পালন করা হয়, যেমন- রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া প্রমুখ।
কেন কেক খাওয়া হয় ক্রিসমাসে?
বড়দিন মানেই প্রত্যেকর বাড়িতে গেলে মিলবে কেক। সেইসঙ্গে কেক আর পেস্ট্রির মধ্যে থাকবে নানা ধরনের ভ্যারাইটি। কিন্তু কেকই (Cake) কেন? যদি মিষ্টিমুখই করতে হয়, তাহলে শুধু চকলেট দিয়েও তা সাড়া যায়। আর যিশুর জন্মের সময় এসবের বালাই তো ছিল না বলেই মনে হয়। কিন্তু ইতিহাস বলছে, যখন প্রথম বড়দিন পালন শুরু হয় তখন থেকে এই কেকের প্রসঙ্গ আসে। রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে ক্রিসমাস সেলিব্রেশন হয়। সেই সময় বড়দিনের আগের দিন উপবাস করার নিয়ম ছিল। উপবাস ভাঙ্গা হত প্লাম পরিজ খেয়ে। এরপর পরিজ বানানো শুরু হয় ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে। ক্রমশ তাতে যুক্ত হতে থাকলো মশলা, মধু, ময়দা, চিনি। তারপর তা আজকের দিনের কেকে পরিণত হয়। মূলত রোমানরা ফ্রুট কেকের জনক, এটা কারোর কাছেই অজানা নয়। আর তাদের হাত ধরেই এই ক্রিসমাস শুরু হয়েছে। সেই সময় থেকেই এই কেকের প্রচলন শুরু হয়।
বড়দিনে উপহার কেন দিতে হয়?
২৫ ডিসেম্বর মানেই উপহার মিলবে, এই আশায় বসে থাকে বাচ্চারা। কিন্তু প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য শুধু বড়দিনই কেন? অন্য যে কোনও দিনে উপহার (Christmas Gift) দেওয়া যায়। তবে মনে করা হয় ,এই দিনে উপহার দেওয়ার পেছনে রয়েছে বিশ্বাস। প্রচলিত রয়েছে, যিশু মাতা মেরির কোলে আসার পর তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তি যিশুকে তিনটি উপহার দিয়েছিলেন। আর সেই উপহার দেওয়ার ঘটনা মনে রেখেই বড়দিনে উপহার দেওয়ার রীতি চালু হয়। সেই সময় উপহারগুলিতে কোনও খেলনা গাড়ি বা সফট টয় ছিল না। সেখানে রাজত্ব, দৈবত্ব আর মৃত্যুকে নির্দেশ করে এমন উপহার ছিল ।কিন্তু সেই উপহারের কথা মনে করে বড় আর ছোটদের মধ্যে উপহার দেওয়ার রীতি চালু হয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে, ২৫ ডিসেম্বর সকলের কাছে খুশির খাজানা নিয়ে আসে। আনন্দ-উল্লাস, দেদার খাওয়া-দাওয়া করে সকলের কাটে এই দিনটি। ইতিহাসের পাতায় এই দিনের গুরুত্ব আলাদাই।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম