।। প্রথম কলকাতা ।।
ইরানের পরম বন্ধু ছিল ইজরায়েল, অবিশ্বাস্য তথ্য ফাঁস। গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক তৈরিতে মোসাদের ছিল বড় হাত! কে শত্রু বানাল ইরান -ইজরায়েলকে? আমেরিকা না চীন? তেহেরানকে হুমকি ভেবে গোপনে শিরদাঁড়া ভেঙেছিল তেল আভিভ। ফল ভুগতে হবে ভবিষ্যতে। ইজরায়েল ইহুদিদের স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পর যেমন চলছিল তেমনটাই যদি চলত তাহলে বোধহয় আজ ইরান-ইজরায়েল এক মেরুতেই থাকত। ভাবতে পারছেন এই ইজরায়েল ও ইরান নাকি একসময় বন্ধু ছিল।
বন্ধুত্ব খুব গলায় গলায় না থাকলেও সখ্যতা কম ছিল বলা যায় না। তাহলে কেন আচমকা এরা একে অপরের শত্রু হয়ে গেল? আরব আমিরাত কিন্তু আরবদের দেশ হয়েও ব্যাবসায়িক, অর্থনৈতিক সুবিধাকে বিবেচনা করে ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছে বর্তমানে। তাই গাজা নিয়েও খুব বেশি ইনভল্ভমেন্ট সংযু্ক্ত আমিরশাহির দেখতে পাবেন না আপনারা। তাহলে ইরান কেন মাঝখান থেকে শত্রু হয়ে প্রেসার বাড়ালো? কে দোষী ছিল আসলে ইজরায়েল নাকি ইরান?
১৯৪৮ সালে যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় তখন তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল এই ইরান-ই। ইসরায়েলকে তেহেরান এই স্বীকৃতি দেয় ১৯৫০ সালে। ক্রমেই দুই দেশের মধ্যে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক সম্পর্ক। এমনকি ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল সামরিক সম্পর্কও। ১৯৫৭ সালে যখন ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সাভাক’ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এতে সহায়তা করেছিলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। কিন্তু এর নেপথ্যে ইরানে মনোবাসনা কী ছিল? কূটনৈতিক মহলের দাবি আসলে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরান সম্পর্ক ধরে রেখেছিল মূলত মার্কিন সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য। তবে ভিতরে যা চলছিল তাতেই সমস্যা শুরু হয়। ইরানের সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখলেও ইরানের ভেতরে আগে থেকেই ইসরায়েল বিরোধিতা ছিল। এবার ভালো করে বুঝুন ইরানের শাহ শাসন বিরোধী বামপন্থীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন ফাতাহ এবং এর নেতা ইয়াসির আরাফাতের যোগাযোগ ছিল। অন্যদিকে, আয়াতুল্লাহ খোমেনী এবং তার অনুসারীরাও ছিলেন ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে। এতসবের পরও বিশেষ আঁচ আসেনি সম্পর্কে। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ে।
তখন ক্ষমতায় আসা ইরানের বিপ্লবী সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নেয়ার ঘোষণা দেয়। এর পরই মারাত্মক স্টেপ ইরানের। তেহরানে ইসরায়েলের দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের দাবি ইরানি সরকারের ইসরায়েল নীতি পরিবর্তন হওয়ার কারণেই দুই দেশের সম্পর্কে বৈরিতা বাড়তে থাকে। এবার বোধহয় ছিল ইজরায়েলের পালা। তথ্য বলছে কার কিন্তু ণ ছিল আর বেশ কিছু। প্রথমত ইরানের দূরপাল্লার মিসাইল তৈরির চেষ্টা। দ্বিতীয়ত তেহেরানের পরমাণু প্রকল্প গ্রহণ। অশান্তি বাড়তে থাকলে ইরানের এই দুটি সামরিক প্রকল্পকে হুমকি হিসেবেই দেখেছে ইসরায়েল। ফলে তেল আভিভ ইরানের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিশেষত পরমাণু প্রকল্প ভেস্তে দিতে শুরু করে নানা অন্তর্ঘাত মূলক পদক্ষেপ। তেল আভিভ কোনওদিনও চায়নি ইরান নিউক্লিয়ার পাওয়ার হোক। ইরানের অভিযোগ একটা সময় ইজরায়েল এতটাও নীচে নেমে যায় যে ইরানের একের পর এক বিজ্ঞানীকে ইসরায়েল হত্যা করে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান তার প্রভাব বলয় বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়।
লেবাননে ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় গড়ে ওঠে হেজবুল্লাহ। মূলত মধ্যপ্রাচ্যে ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে একধরনের আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ঠিক এখানে বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি ইসরায়েল কিন্তু ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে আগ্রহী ছিল না তারা শেষ পর্যন্ত সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইরান সরকারের নীতির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হল সামরিকভাবে ইরানের চেয়ে শক্তিশালী আমেরিকা-ইউরোপের সমর্থন সত্ত্বেও ইসরায়েল কেন ইরানকে হুমকি মনে করে? আসলে ইরান ইসরায়েলের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় এর জনসংখ্যাও ইসরায়েলের দশ গুন বেশি। ফলে ইরানকে একটা যুদ্ধের মাধ্যমে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তবে আজ একটা শত্রুতা যে হাজার শত্রুর জন্ম দেয়। সেটাই কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছে ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব থেকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম