।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran: যুক্তরাষ্ট্রের মুখে ঝামা ঘঁষে এবার কি সুপারপাওয়ার হয়ে উঠছে ইরান? সব বাঁধা কাটিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটা? প্রাকৃতিক সম্পদই এই দেশটার জন্য বড় আশীর্বাদ। কিন্তু তারপরেও কেন জার্মানি, জাপান, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সারিতেও দাঁড়াতে পারল না ইরান? লিথিয়াম খনির উপর ভর করেই কি জ্বলে উঠবে দেশটা? ইরানের অর্থনৈতিক ভীত মজবুত হচ্ছে, ভাবনা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা ইরান। পৃথিবীপৃষ্ঠে ব্যবহারযোগ্য ধাতব পদার্থের ৫% রয়েছে ইরানে। কি নেই? প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত, জ্বালানি তেল। এমনকি ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকেও দেশটা ভালো পজিশনে রয়েছে। একটা দেশের সফল অর্থনীতির জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই আছে ইরানে। সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার হতেই পারতো ইরান। দাঁড়াতে পারত জার্মানি, জাপান এমনকি চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে একই সারিতে। পেতে পারতো সাফল্য। তারপরেও দেশটা এসব থেকে বহুদূরে। কিন্তু কেন?
১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের আগে ইরানের উন্নয়ন কিন্তু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু তারপর ইরান প্রতিবেশী ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাটিয়েছে কয়েকটা বছর। দেশটির প্রায় সব শিল্পের রাষ্ট্রিকরণ হয়েছে। সরকারের আদর্শের সঙ্গে একমত নয় এমন ইরানিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সমাজ কল্যাণমূলক সংগঠন বুনিয়াদে জমা করা হয়েছে। যে বুনিয়াদ পরে পরিণত হয়েছে দুর্নীতির আখরায়। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে এসে দেশটিতে কিছু করার সাহস দেখায়নি। তাই সেখানে শিল্পের বিকাশ তেমন অর্থে হতে পারেনি। আর বর্তমানে ইরান থেকে যা রপ্তানি হয় তার অধিকাংশটাই জ্বালানির সঙ্গে সম্পর্কিত, আর কয়েক শতাংশ ফল, বাদাম আর কার্পেটের মতো পণ্য। যা দেশটির অর্থনীতিতে তেমন শক্তি জোগায় না। অথচ সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার বা সৌদি আরবের মত অন্য তেল উত্তোলক দেশগুলো শুধু জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নিজেদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা না তৈরি করে অন্য খাতেও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর ইরান? বুনিয়াদের এর সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা লাভবান হয়ে চলেছে দুর্নীতি করেই।
সরকার বুনিয়াদের মাধ্যমে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করতে গিয়ে। দেশকে বিদেশি নিষেধাজ্ঞার মুখে ফেলেছে। বিভিন্ন কারণে ইরানের বাণিজ্য আর অর্থ প্রবাহে বাধা তৈরি করে রাখা আছে। যুক্তরাষ্ট্র আর তার মিত্র দেশগুলো ইরানকে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত করে রেখেছে। অর্থনীতির গলা চেপে ধরে আছে। নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার দিক থেকে দেশটি বিশ্বে দ্বিতীয়। আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এত বাঁধা কাটিয়েও দেশটা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আসলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই নতুন হাওয়া লেগেছে। কিছুদিন আগেই পাওয়া লিথিয়ামের খনি, ইরানকে কিছুটা হলেও এক্সট্রা অক্সিজেন যোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষণিটি থেকে প্রায় ৮৬ লক্ষ টন এর মত লিথিয়াম পাওয়া যাবে। ইরান সরকারের এই দাবি সত্য প্রমাণিত হলে দেশটার উপর যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি কিছুটা হলেও কমবে। চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম লিথিয়ামের খনির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে ইরান।
হ্যাঁ সেই লিথিয়াম উত্তোলনে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে, কিন্তু এই লিথিয়াম ইরানের ব্যাটারী শিল্পের জন্য বড় আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। যদিও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাটারি তৈরি করে রপ্তানিতে বাধার মুখে পড়ার মতো চান্স রয়েছে ইরানের। কিন্তু এরপরেও ইরান অস্ত্রের বড় সরবরাহকারী হয়ে উঠছে, রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক রাখছে, সৌদির সাথে সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত হয়েছে। তাহলে এবার কি ইরান হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্যের সেরা শক্তি? হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার? উত্তর দেবে সময়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম