।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran: মধ্যপ্রাচ্যের সবথেকে বড় মহাকাশ কেন্দ্র ইরানে! তেহেরানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এবার মহাকাশে ইসরায়েলের সাথে ইরানের জোর টক্কর। একের পর এক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ইসরায়েলকে মাত দিতে পারবে তো ইরান? ক্ষমতা কতটুকু? পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইরান যা করছে তা সত্যি অবিশ্বাস্য ব্যাপার। শত্রু রাষ্ট্রের নাকের ডগায় বসে, বড় ছক কষে ফেলেছে তেহরান। আকাশপথ, স্থলপথ কিংবা জলপথ বাদ দিয়ে এবার কি তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের লড়াই হবে মহাকাশে? কে জিতবে এই যুদ্ধে? তলে তলে ক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে তেহরান। এবার খুব কাছে স্যাটেলাইট যুদ্ধ।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ উত্তেজনার মাঝে কিন্তু থেমে নেই ইরানের বিজ্ঞান অগ্রগতির যাত্রা। দেশটা তার নিজের ক্ষমতা শুধু দেখাচ্ছেই না, বরং উত্তরোত্তর তা বাড়িয়ে চলেছে। তার সবথেকে বড় প্রমাণ, একের পর এক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ। বিগত কয়েক মাস ধরে হামাস-ইসরায়েলের সংঘাতই বলুন, আর ইরান ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কিন্তু ইরানের মহাকাশ কর্মসূচিতে বিন্দুমাত্র ছেদ পড়েনি। প্রকাশ্যে এল আর একটা বড় চাঞ্চল্যকর খবর। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মহাকাশ কেন্দ্র নাকি প্রায় নির্মাণ করে ফেলেছে ইরান। দেখুন ,আধুনিক যুদ্ধে জিততে গেলে স্থলপথ, জলপথ আর আকাশ পথের পাশাপাশি মহাকাশেও নজরদারির প্রয়োজন। আর সেই সহজ অঙ্কটা খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে তেহরান। তাই দেশটি তার প্রযুক্তি খাতে মোটা টাকা ব্যয় করছে। ইরানের বন্দরনগরী চাবাহারে তৈরি করা হচ্ছে, বিশাল বড় মহাকাশ কেন্দ্র। কেন্দ্রটির প্রায় ৫৬ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে চালু হবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেই তেহেরান এই কেন্দ্র থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করবে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করবে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের সঙ্গে। গোটা বিশ্বে ইরানের ক্ষমতা যেমন প্রদর্শিত হবে, তেমনি মহাকাশ কেন্দ্রটি দেশটার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। যদিও এটি ইরানের প্রথম মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র নয়। দেশটার প্রথম মহাকাশযান কেন্দ্র হল ইরান খোমেনি ন্যাশনাল স্পেস সেন্টার। চাবাহারে স্পেস সেন্টারটি মূলত নির্মাণ করা হচ্ছে বেসামরিক মহাকাশ গবেষণা কাজের জন্য। এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের মহাকাশযান উৎক্ষেপণ স্যাটেলাইট তথা উপগ্রহ উৎক্ষেপণ সহ বহু কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আপাতত ইরান পরিকল্পনা করে রেখেছে, এই কেন্দ্র থেকে ভূ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট পাঠাবে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করবে।
সোজা কথায়, হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধের পর থেকেই কিন্তু ইরান একের পর এক নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। নতুন করে অস্ত্র সম্ভার সামনে আনার পাশাপাশি চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনটে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে দেশটি। যার মধ্যে দুটি ন্যানো স্যাটেলাইট রয়েছে। এগুলির মাধ্যমে ন্যারোব্যান্ড কমিউনিকেশন এবং ভূতাত্বিক অবস্থান প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হবে বলে উল্লেখ করেছিল ইরান। আসলে ব্যালেস্টিক মিসাইল থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মাঝে একের পর এক সফলতার গণ্ডি পেরোচ্ছে ইরান। যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে কিন্তু একদিন ইরান সুপার পাওয়ার হয়ে উঠবে। তখন মানতে চাইবেনা পশ্চিমা বিশ্বের মোড়লগিরি। যদি চলতি বছরের কথা বলা হয়, রীতিমত কয়েকবার ইরানের পদক্ষেপ ভয় ধরিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বুকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই সোরাইয়া নামক একটি স্যাটেলাইট প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার দূরের কক্ষপথে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে ইরান।
এটি ইরানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানো স্যাটেলাইট। যেটি বহন করতে পারে প্রায় ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজন। আর দেশটার উদ্ভাবন করা সব থেকে বড় স্যাটেলাইট হলো মাহদা। যার মাধ্যমে সিমোর্গ রকেটের সাহায্যে মহাকাশের বহু কার্গো পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্ভুলতার পরীক্ষা করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সংঘাতের প্রসঙ্গ আসলেই বারংবার যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের নাম চলে আসে। ইরানকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এক গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা। আর এখানেই লুকিয়ে আসল কারণ। ধারণা করা হয়েছিল, ইরানের নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নাকি উদ্বেগ বাড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল সহ পশ্চিমাদের মাঝে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, স্যাটেলাইট পাঠানোর মাধ্যমে শক্তিশালী ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও জানান দিচ্ছে তেহরান। পাশাপাশি ইরানের নতুন স্যাটেলাইট ইতিমধ্যেই টেলিমেট্রি ডেটা পাঠানো শুরু করে দিয়েছে। দিনের পর দিন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ইরান। দেশটা নতুন করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করায় কিছুটা অবাক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্রগুলো। কারণ ইরান তার কয়েকদিন আগেই জানায়, দেশটা নাকি কোন মহাকাশ প্রোগ্রাম চালাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইরান তাদের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা আড়াল করতেই এমনটা বলেছিল। এটা তেহরানের একটা সুকৌশল।
আসলে ইরানের উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তো কম নেই। তাই সে সমস্ত উপেক্ষা করে ইরানকে মহাকাশ কর্মসূচি চালাতে হয়। গত বছরই এভাবেই কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে পশ্চিমা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল দেশটা। নিজেদের মহাকাশ কর্মসূচিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে সফলভাবে মহাকাশে পাঠিয়েছিল বায়োস্পেস ক্যাপসুল। মূলত মহাকাশে মানুষ বা জীবন্ত প্রাণী আনা নেওয়ার কাজে এই বায়োস্পেস ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়। ওজনে প্রায় পঞ্চাশ কিলোগ্রাম। ক্যাপসুল আর লঞ্চার দুটোই তৈরি করেছে ইরানের বিজ্ঞানীরা। পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান তার বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচিকে তরতর করে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। মহাকাশে মানুষ পাঠানোর জন্য নানান ভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটা। হয়তো আর মাত্র পাঁচ থেকে ছয় বছরের অপেক্ষা, তারপরে এই কাজে ইরান সফল হতে পারে। শুধু তাই নয়, তেহেরান নাকি খুব শীঘ্রই নতুন প্রজন্মের বায়োস্পেস ক্যাপসুল গুলোর সাব অরবিটাল পরীক্ষা চালাবে। ইরান পৌঁছে যাবে মহাকাশ বিষয়ক চূড়ান্ত লক্ষ্যের অনেক কাছাকাছি।
ইরান আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাউসার ও হুদহুদ নামক দুটো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণেরও পরিকল্পনা করেছে। কাউসার হল রিমোট স্যানসিং স্যাটেলাইট, আর হুদহুদ ন্যারোব্যান্ডের টেলিকমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। কাউসারে রয়েছে দুটি অত্যাধুনিক ক্যামেরা, যা পরিষ্কার ছবি পাঠাতে পারে। এটি কৃষি কাজ, মানচিত্র এবং সীমানা নির্ধারণের সহায়তা করবে। যদিও ইরান এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসরায়েলে নজরদারি চালাতে সক্ষম হবে কিনা তা জানা যায়নি।। তবে এ কথা ঠিক, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ইরানও আছে, যে দেশ স্যাটেলাইট তৈরি এবং উৎক্ষেপণ করতে পারে।
সোজা কথায়, মধ্যপ্রাচ্যে এখন জোর টক্কর। লড়াই বেঁধেছে মহাকাশেও। ইরানকে চাপে রাখতে ওদিকে কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে নেই ইসরায়েল। তেল আবিব গুপ্তচর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে চালাচ্ছে গবেষণা। কয়েক বছর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ মহাকাশে ‘ওফেক ১৬’ নামের একটি উপগ্রহ পাঠায়। জানায়, ঠিক এইরকম উন্নত ক্ষমতা সম্পন্ন ইলেকট্রিক অপটিক্যাল স্যাটেলাইট গুলো উৎক্ষেপণ অব্যাহত থাকবে। তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের পারমাণবিক কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহার করা হবে এই ‘ওফেক ১৬’ স্যাটেলাইট। ইসরায়েলি নিরাপত্তার জন্য গোয়েন্দা ক্ষমতা অত্যন্ত অপরিহার্য। আর সেক্ষেত্রে প্রতিটি স্থানে ইসরায়েল তার সক্ষমতা দেখিয়ে যাবে। আর সেই জায়গা থেকে হয়ত এবার মাঠে নেমে পড়েছে ইরান। ইসরায়েলের কাছে কিছুতেই হার মানবে না। যতই দেশটাকে রক্ষণশীল কট্টরপন্থী বলা হোক না কেন, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে নিজেদের কাজকে থামিয়ে রাখেনি। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতা বাড়াতে, নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে, আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তেহরান। আর তাই হয়ত পশ্চিমা দুনিয়া থেকে শুরু করে ইসরায়েল, তেহরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপাতে ব্যস্ত। যদিও ইরান এসমস্ত নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কাই করে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম