।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran-Israel conflict: ইসরায়েলের চলমান হুমকিতে মোক্ষম জবাব ইরানের। ইসরায়েলকে গাজায় হামলা থামাতেই হবে। তেহরান দিল চরম হুঁশিয়ারি। পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করে ফেলতে পারে দেশটা। তৈরি করতে পারে শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্র। চিন্তায় পড়ে গেল পশ্চিমা বিশ্ব। তাহলে কি ইরান-ইসরায়েলের শত্রুতার মাশুল গুনবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিমা দুনিয়ার পরাশক্তিগুলো? আশঙ্কাই তবে সত্যি হল। ইরান কি সত্যি সত্যি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চলেছে? ইরানের হঠাৎ এমন মত পরিবর্তন কেন? কাজে আসল না যুক্তরাষ্ট্রের ঝুড়ি ঝুড়ি নিষেধাজ্ঞা। কাউকেই তোয়াক্কা করছে না ইরান। একবার পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেললে, তেহেরানকে আর ঠেকানো যাবে না।
•ইসরায়েলের হুমকিতেই ইরানের মত পরিবর্তন!
এবার কি তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের দিন শেষ হয়ে এল? সরাসরি হুমকি দিল ইরান। এতদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্ব ভয় পাচ্ছিল, হয়ত ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে। আর তা নিয়ে কম বিতর্ক নেই। সেই সন্দেহে ইরানের উপর একের পর এক চাপানো হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এবার ঘুরে দাঁড়াতে চলেছে ইরান। সরাসরি সামনে এসে বলেই দিল, পারমাণবিক অস্ত্র তারা বানাতে পারে। ইরান যে পরমাণু নীতি মেনে চলছে, এবার সেই নীতির পরিবর্তনেরই হুঁশিয়ারি দিয়ে দিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ। ইসরায়েলের হুমকি বজায় থাকলে বিপদে পড়তে পারে গোটা বিশ্ব। এমনটাই বুঝিয়ে দিল ইরান। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি। বলেছেন, ইসরায়েলের হুমকি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে ইরান পারমাণবিক নীতি পরিবর্তন করে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে। আর এই ভয়টাই তো পাচ্ছিল গোটা পশ্চিমাবিশ্ব। যদিও কামাল খারাজি এও বলেছেন, ইরানের আপাতত পারমাণবিক বোমা তৈরির কোন পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ইরানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লে, তখন আর সামনে বিকল্প পথ থাকবে না। তেহরান তার সমরাস্ত্র নীতি পরিবর্তন করতে পারে। ইসরায়েলের দ্বারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা আক্রমণ হলে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে তেহরান। স্বাভাবিকভাবেই, তার এই মন্তব্যের পরে ইরান যে দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির দাবি করে আসছিল, সেখানে উঠতে শুরু করেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
•ইসলামী বিপ্লব ইরানের শক্তি!
যদি পুরনো ইতিহাসের দিকে তাকান, তাহলে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের ইতিহাসে আস্তে আস্তে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ইসলামী বিপ্লবের পরই কিন্তু টানা কয়েক দশক ইরানকে পড়তে হয়েছে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে। চারিদিকে নিষেধাজ্ঞা ঘিরে থাকা সত্ত্বেও দেশটার স্থল, আকাশ আর সমুদ্রসীমায় প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষার চাহিদার সবটুকুই অর্জন করতে পেরেছে। ইরান তার অর্জিত রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি ধরে রাখতে তৈরি করে রেভুল্যুশনারি গার্ড। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এই আয়াতুল্লাহু খামেনি। সেইসময় পারমাণবিক অস্ত্রের বিষয়ে বলেছিলেন, ধর্মীয় আদেশে ইরানে পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশ নিষিদ্ধ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি হারাম অর্থাৎ ইসলামের নিষিদ্ধ হলে মন্তব্য করেন। ২০২১ সালে ইরানের তৎকালীন গোয়েন্দা মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলো ধীরে ধীরে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা দেশের চাপে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানালেও বানাতে পারে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার তথ্য বলছে, ইরানে এখন প্রায় ৬০শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে। যার ৯০% শুধুমাত্র মজুদ হয়েছে অস্ত্র তৈরির জন্য। যদি এভাবেই ইরানের পারমাণবিক উপাদানের ভাঁড়ার বাড়তে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তার ভয়াবহতাও বাড়বে বলে আশঙ্কা কূটনৈতিক মহলের।
* ইরান কি সত্যি পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে?
ইরান কখনো গোটা বিশ্বের কাছে স্বীকার করেনি যে তারা পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে। কিংবা তাদের কাছে কোন পরমাণু অস্ত্র আছে কিনা সেই বিষয়েও কোন তথ্য নিশ্চিত করেনি। তারপরেও কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে ইরানকে নিয়ে উঠেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। তার মধ্যে সবথেকে বড় প্রশ্নটা হল, ইরান আদৌ পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে নাকি বানাচ্ছে না? তেহরান বহুদিন ধরে বলে এসেছে যে তার পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। যার উদ্দেশ্য পরমানু বিদ্যুৎ উৎপন্ন এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা। কিন্তু ইরানের এই কথায় কোন বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি পশ্চিমা বিশ্বের পরাশক্তি গুলো। যুক্তরাষ্ট্র নেতাদের বহুদিন ধরে দাবি, পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তেহেরান। তাই কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটার উপর। ইরানের দিকে একটাই অভিযোগ। ইরান নাকি রয়েছে পরমাণু অস্ত্র তৈরীর একদম দ্বারপ্রান্তে। যেকোনো মুহূর্তে তেহরান তৈরি করে ফেলতে পারে মারণাস্ত্র। তখন মধ্যপ্রাচ্যের এই ক্ষমতাশালী দেশের কাছে হ্রাস পেতে পারে পশ্চিমা পরাশক্তি গুলোর ক্ষমতা। এই আশঙ্কা বহুদিনের। আর সেই জায়গা থেকে তেহরানের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বহু আলাপ আলোচনার পর ২০১৫ সালে গিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটা চুক্তি। কার্যকর হয় ২০১৬ সালে।
যা পরিচিত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন নামে। তবে সব থেকে বেশি পরিচিত ইরান পরমাণু চুক্তি হিসেবে। যে চুক্তি হয়েছিল ইরান আর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া চীন যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্সের মধ্যে। সাথে ছিল জার্মানি। সেই সময় এই চুক্তির মাধ্যমে, ইরানের উপর এমন ভাবে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়, যাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ এবং মজুদ করার ক্ষেত্রে সীমিত হয়ে আসে ইরানের ক্ষমতা। চুক্তি অনুযায়ী, সেই সময় ইরান তাদের কিছু পরমাণু স্থাপনা কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আবার কিছু কিছু কেন্দ্র পরিবর্তন করতেও সম্মত হয়। এখানে আবার ইরানের জন্য একটা ভাল দিক ছিল। এই চুক্তির অধীনে ইরানের উপর আরোপিত যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল সেগুলি সেই সময় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আশা ছিল, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করবে না। তবে ইরান পশ্চিমা পরা শক্তিগুলোর দাবিকে প্রথম থেকেই নাকচ করে এসেছে। আর সেই সময় এই চুক্তিতে ইরানের সায় অন্যতম কারণ ছিল, বিপর্যস্ত অর্থনীতি। যেভাবে নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটা ভেঙে পড়ছিল, সেই সময় দাঁড়িয়ে তেহরানের জন্য এই চুক্তিটা ছিল ভীষণ দরকারি। কিন্তু সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। বারাক ওবামার আমলে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলেও, বছর দুই যেতে না যেতেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রীতিমত এক তরফা ভাবে এই চুক্তি থেকে সরে আসেন। ২০১৮ সালের এই ঘটনায় বেজায় ক্ষেপে যায় তেহেরান। যদিও ২০২০ সালে জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসার পর, পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের সঙ্গে আবার ওই চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
* তেল আবিবকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত তেহরান
যদি সামরিক শক্তির বিচার করেন, তাহলে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান। ২০২৩ সালে ইরানের অবস্থান ছিল ১৭তম। ২০২৪ সালে অর্থাৎ এক বছরে ইরান এগিয়ে এসেছে আরও তিন ধাপ। বর্তমানে বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক থেকে ১৪৫ টা দেশের মধ্যে বর্তমানে ইরানের অবস্থান ১৪ তম। এমনি থেকেই বর্তমানে ইরানের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল, ড্রোন থেকে শুরু করে নানানা আধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, যদি ইরানের হাতে পারমানবিক অস্ত্র সত্যি থাকে, তাহলে দেশটাকে আর ঠেকানো যাবে না। আর এই ভয়টাই পাচ্ছে পশ্চিমারা। ইরানে নাকি রয়েছে প্রায় ৭০ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম অর্থাৎ দেশটা প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে ফেলেছে। দুই দেশের মধ্যে এমন কূটনৈতিক বাক বিতন্ডার মাঝে, কয়েক বছর আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পশ্চিমারা চাইলেও কিন্তু ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে আটকাতে পারবেনা। তাই তেহরান সম্পর্কে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে যে সমস্ত কথাবার্তা হচ্ছে, তা মিথ্যে। আর এটা ভালো করেই জানে পশ্চিমা বিশ্ব। মূলত তারা ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র চায়না। দেখুন, সামরিক বিবেচনায় একটি দেশের মর্যাদা বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পারে পরমাণু বোমার ক্ষমতা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলো তখন সমীহ করে চলবে শক্তিশালী দেশগুলোকে। মধ্যপ্রাচ্যে মোটামুটি ভাবে, একমাত্র পরমাণু শক্তিধর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইসরায়েলকে। এবার তেল আবিবকে টেক্কা দিতে হয়তো নতুন পথে হাঁটছে তেহরান।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম