।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভেস্তে গেল সীমান্তের মিলনমেলা। এতো প্রাচীন মেলায় ধাক্কা, কিন্তু কেন? ভারতের ভূমিকায় কতটা এফেক্ট পড়তে পারে ওপার বাংলায়? অশান্তি, কাঁটাতার টপকে কেন প্রাধান্য পেল না ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক? তাহলে কি ভারতের স্ট্যান্ড পয়েন্ট বদলে যাচ্ছে? অনুপ্রবেশ আর পাচারের ঘুণপোকা, কিভাবে ভারত বাংলাদেশ সম্পকর্কে কুরে কুরে খাচ্ছে। নির্বাচনের আগেই এত বড় ধাক্কাটা খেলো বাংলাদেশ? বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়! আর বাংলাদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ওপার বাংলার নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। ভারতের এই স্ট্যান্ড পয়েন্টে যথেষ্ট খুশি বাংলাদেশ। বিশেষ করে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে, যা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই একটা প্লাস পয়েন্ট।
এই সবকিছুর মাঝে হঠাৎ করে দু দেশের সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটল। অশান্তি এড়াতে বাতিল হয়ে গেল বহু প্রাচীন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের “মিলনমেলা”। আর এটা হলো কখন, টাইম টা খুব ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর। বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই ভালো সম্পর্ক। তাই ভোট বৈতরণী পার করতে ভারতকে দরকার বাংলাদেশের। ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশের নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে হয়ে আসা মিলনমেলা বাতিলের ঘটনা খুব স্বাভাবিকভাবেই দুটো দেশের সম্পর্ককে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই মিলনমেলা প্রতি বছর দুই পাড়ের মানুষকে এক করে দেয়। কাঁটাতারের পরোয়া না করেই আবেগ দেওয়া-নেওয়া চলে দুই বাংলার মধ্যে। কেউ টোটো-বোঝাই করে নানান রকমের খাবার, কেউ অটো ভ্যানরিকশায় পোশাক, কম্বল, বাসন নিয়ে এই মিলন মেলায় আসেন। অনেকে আবার বস্তা করেই নানান জিনিস নিয়ে হেঁটেই পৌঁছে যান মিলন মেলায়। গন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতার পর্যন্ত।
এবার গন্তব্যের তিন-চার কিলোমিটার আগেই বিএসএফ ও পুলিশ তাঁদের পথ আটকে বাড়ি ফিরিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে এবার চেনা ছবি চোখে পড়েনি। প্রাচীন রীতি মেনে গত কয়েক দশক ধরে চৈনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিমুলডাঙি, মকরহাট, সন্তরার প্রায় চার কিলোমিটার সীমান্তের কাঁটাতার বরাবর মিলনমেলার আয়োজন করে দুই দেশের মানুষ। এবার সেই মেলা হওয়ার কথা থাকলেও অবশেষে হয়নি কিন্তু কেন? আগে, মেলা চলাকালীন দুই দেশের মানুষ তাঁদের পরিচিত ও আত্মীয়দের একে অপরকে সীমান্তের কাঁটতারের উপর দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী ছুড়ে দিয়েছে। গত বছর ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাচারের অভিযোগে বিএসএফের সঙ্গে হেমতাবাদের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে গোলমালের ঘটনা ঘটে। বিএসএফ ও পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর অনুপ্রবেশ ও পাচারের আশঙ্কায় প্রাচীন ওই মিলনমেলা বাতিল করা হয়।
যথোপযুক্ত কারণ দেখিয়েছে বিএসএফ, বলছে মেলার নামে এ দেশ থেকে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ, বিভিন্ন মাদক, সোনা, রুপো মোবাইল ফোন, দামি বাসন-সহ বিভিন্ন সামগ্রী পাচারের আশঙ্কার খবর ছিল। তেমনই বাংলাদেশ থেকে মোবাইলের সিমকার্ড, ইলিশ মাছ, শাড়ি এ পারে পাচার হতে পারে বলেও খবর ছিল। তাই, এ বছর সীমান্তে মিলনমেলা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া, মেলায় ভিড়ের সুযোগে সীমান্তের কাঁটাতার কেটে বা টপকে এ দেশে অনুপ্রবেশ ও এদেশ থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারেরও আশঙ্কাও ছিল। তাই মেলা বাতিলের জন্য আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয়, সে জন্য পুলিশ বিএসএফকে সব রকম সহযোগিতা করেছে। এসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে দু’দেশের মানুষের মন খারাপ। মিলনমেলা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশের আত্মীয়দের উপহার দেওয়া দিতে পারেনি এপার বাংলার মানুষ।
কাঁটাতারের ওপারেও ছিল কড়াকড়ি। তাই বাংলাদেশিরাও এপারে আসতে পারেননি। রাধিকাপুর, করণদিঘি, ইটাহার, মালদা, শিলিগুড়ি, কলকাতা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে এদিন হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। ঐতিহ্যশালী ভারত-বাংলাদেশ মিলনমেলা এভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া, দুটো দেশের সম্পর্কে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
কারণ এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এটা যদি উদাহরণ হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তীতেও এটা বন্ধ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশ কানেকশনে একটা বড় ধাক্কা লাগতে পারে। তাছাড়া, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে এই দূরত্ব বাড়ার বিষয়টা ওই দেশের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। তবে, নিরাপত্তার স্বার্থে মেলার অনুমতি মেলেনি এবং সীমান্তের কাছাকাছি কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে বিএসএফ সূত্রে। তাই, দুদেশকে কাঁটাতার বা একবারের মিলনমেলা বাতিল যে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবেনা সেটাও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম