।। প্রথম কলকাতা ।।
Lotus Silk in india: সাধারণ সিল্কের থেকে প্রায় ১০ গুন বেশি দামি লোটাস সিল্ক (Lotus Silk)। হয়ত ভাবছেন লোটাস সিল্ক অর্থাৎ পদ্মফুল থেকে কিভাবে সিল্ক তৈরি হয়? এ তো একেবারে আশ্চর্যজনক ব্যাপার। কিন্তু এটাই করে দেখিয়েছেন ভারতের মণিপুরের (Manipur) এক যুবতী। গোটা বিশ্বজুড়ে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দেশে লোটাস সিল্ক পাবেন। সেই তালিকায় রয়েছে মায়ানমার, ভিয়েতনাম আর ভারত। ৬০ ইঞ্চি লম্বা একটি লোটাস সিল্কের পোশাকের দাম প্রায় ১৭ হাজার টাকা। কোন মেশিন নয়, সম্পূর্ণভাবে হাতে তৈরি এই সিল্কের গুণাগুণ জানলে চমকে যাবেন।
ভারতে প্রথম লোটাস সিল্ক
ভারতে প্রথম লোটাস সিল্ক যিনি তৈরি করেছেন তিনি হলেন বিজয়শান্তি তংব্রাম (Bijiyashanti Tongbram)। বয়স মাত্র ২৮ বছর। এই বয়সেই তার মাথায় এসেছে একটু অন্যরকম ভাবনা চিন্তা। যে চিন্তা ভাবনা দিয়ে তিনি নিজে স্থানীয় মেয়েদের জন্য কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ তৈরি করেছেন। পাশাপাশি গোটা বিশ্বজুড়ে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে তার খ্যাতি। বিজয়শান্তি বোটানিতে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। তিনি সবসময় চাইতেন মণিপুরের স্থানীয় ফল, ফুল এবং পাতা নিয়ে বিশেষ কাজ করতে। কিন্তু এই লোটাস সিল্কের আইডিয়া কোথা থেকে পেলেন? একদিন তার বাবার বন্ধু তাকে জানিয়েছিলেন লোটাস সিল্ক অত্যন্ত ভালো এবং সুন্দর। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর দাম প্রচুর। সর্বপ্রথম ১৯১০ সালে মায়ানমার লোটাস সিল্ক দিয়ে কাপড় তৈরি হয়েছিল। গোটা বিশ্বে মোট চারটি দেশ রয়েছে যেখানে লোটাস সিল্কের খোঁজ পাওয়া যায়।
তৈরির পদ্ধতি
লোটাস সিল্ক বানানো একেবারেই সহজ নয়। যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক মিটার সুতো পেতে প্রায় ৩২ হাজার পদ্ম ফুলের ডাঁটার প্রয়োজন। মূলত পদ্মের কান্ড থেকে সূক্ষ্ম পাতলা তন্তু বের করে সিল্কের মতো বৈশিষ্ট্যযুক্ত ফেব্রিকে বোনা হয়। তাই একে বলা হয় লোটাস সিল্ক। বিশেষ করে জুন থেকে নভেম্বর মাসে এই কাজ করা হয়ে থাকে। পদ্ম ফুলের ডাঁটা গুলি জল থেকে তুলে এনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার, না হলে সেগুলি নষ্ট হয়ে যাবে। তন্তু মজবুত করার জন্য প্রথমে ফুলের কান্ড গুলি কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর ধীরে ধীরে সেখান থেকে তন্তু বের করে একত্র করে বাঁশের উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। একটি কাপড় বানাতে সময় লাগে এক মাস কিংবা তার থেকেও বেশি। কারণ এটি কোন মেশিনে বোনা হয় না। ১০০% হাতে তৈরি। তাই বাজারে এর দাম প্রচুর। প্রায় ৬০ ইঞ্চি লম্বা এবং ১০ ইঞ্চি চওড়া একটি লোটাস সিল্কের পোশাকের দাম হতে পারে ১৭ হাজার টাকা। লোটাস সিল্ক বানানোর জন্য বিজয়শান্তির ঝুলিতে রয়েছে একাধিক অ্যাওয়ার্ড। তবে এ সব কিছুর থেকে ছাপিয়ে গিয়েছে তার প্রচেষ্টা। তিনি শুধু একা নন, বহু মহিলাকে এই কাজের মাধ্যমে স্বনির্ভর করেছেন। তিনি চান তার প্রোডাক্ট পুরো দুনিয়া জানুক, মেড ইন ইন্ডিয়া কিংবা মেড ইন মণিপুর রূপে।
বিজয়শান্তি যখন সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে তার গ্রামের চারিপাশে কথাটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তখন মাত্র ৭ জন মহিলা তার সাথে যোগ দেন। তিনি তাদেরকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে ফাইবার বের করতে হয় এবং বুনতে হয়। ধীরে ধীরে তিনি প্রায় ১৫ জন মহিলাকে এই কাজের প্রশিক্ষণ দেন। যাদের বয়স ২২ থেকে ৫০ বছর। ভারতের মণিপুরে কিছু অংশে লোটাস সিল্ক বেশ বিখ্যাত। বিজয়শান্তির বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে লোকটাক হ্রদ। যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবথেকে বড় মিষ্টি জলের হ্রদ। যেখানে ফুটে রয়েছে হাজার হাজার পদ্মফুল। বিজয়শান্তি সানজিং সানা থামবল (Sanajing Sana Thambal) নামে তার নিজস্ব উদ্যোগে একটি সংস্থা খোলেন। সেখানে পদ্মফুলের কান্ড সংগ্রহ করে মহিলাদের সিল্ক তৈরির পদ্ধতি শেখান।
লোটাস সিল্কের আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য
লোটাস সিল্কের কিছু আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সেলুলোসিক এবং জলরোধী ফাইবার। এটি আদ্রতা শোষণ করে দ্রুত শুকিয়ে যায়। এতে কোন রাসায়নিক বা বিষাক্ত পণ্য ব্যবহার করা হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় না কোন গ্যাস, পেট্রোল, বিদ্যুৎ বা অতিরিক্ত জল। এই সিল্ক বেশ মজবুত এবং আরামদায়ক। একটানা বহুদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম