।। প্রথম কলকাতা ।।
Bollywood: প্রতি বছর হলিউডের চেয়েও অনেক বেশি টিকিট বিক্রি করে ভারতীয় ফিল্মি ইন্ডাস্ট্রি। তা সত্বেও আয়ের নিরিখে হলিউড কেন এগিয়ে? প্রতি বছর গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ছবিও তৈরি হয় আমাদের ভারতে। তাও উপার্জন এত কম! ভেবে দেখেছেন কখনও? আপনারা হয়ত ভাবছেন টিকিটের দাম কম বলেই ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আয় এত কম। কিন্ত সেটা ছাড়াও আরও একাধিক কারণ কিন্তু রয়েছে।
মাথায় রাখবেন ভারতীয় সিনেমা মানেই কিন্তু কেবল বলিউড নয়। বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়লাম ইত্যাদি সহ ২০টিরও বেশি ভাষায় সিনেমা তৈরি হয় ভারতে। রেকর্ড বলছে প্রতি বছর অন্তত ১৫০০ থেকে ২০০০ সিনেমা তৈরি হয় কেবল ভারতেই। সংখ্যাটা ভাবতে পারছেন? এই সংখ্যার ধারেকাছেও নেই হলিউড। টিকিট বিক্রির নিরিখেও ভারতই কিন্তু সেরা। অথচ তা সত্বেও আয়ের দিক থেকে ভারত কেন পিছিয়ে?
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্ট বলছে, কেবল মাত্র ২০২৩ সালেই ৯৪৩ মিলিয়নেরও বেশি সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়েছে ভারতে। যেখানে হলিউডের দৌঁড় ছিল ঐ ৯২২ মিলিয়নের কাছাকাছি। ইকোনমিক টাইমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির টোটাল কালেকশন ছিল ১২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। যেখানে কেবল হলিউডের একার আয় ছিল ৩৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাহলেই বুঝুন পার্থক্যটা।
এখন প্রশ্ন আসবে টিকিট বেশি বিক্রি করেও আয় কম কেন? প্রথমেই উত্তর হবে টিকিটের দাম। আমাদের ভারতে একটা টিকিটের অ্যাভারেজ দাম বড়জোর ১৫০ থেকে ২০০। সেখানে usa তে একটা টিকিটের দাম প্রায় ১২ ডলার। ভারতীয় টাকায় তা হয় এক হাজার তিন টাকা। অর্থাৎ প্রায় পাঁচগুণ বা তার বেশি। এটাকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছে ফিল্ম অ্যানালিস্টরা। তবে এছাড়াও আরও একটা কারণ হল ভাষা এবং বিশ্বব্যাপী ছবির প্রদর্শন। একটা হলিউড সিনেমা বিশ্বের যে কোনও সহজেই হল পেয়ে যায়। সেখানে একটা ভারতীয় ছবিকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয় এর জন্য। ছবিতে টেকনোলজির ব্যবহারেও ভারত এখনও অনেকটা পিছিয়ে। যে কারণে প্যান ইউনিভার্সের দর্শকদের কাছে ভারতীয় ছবির গ্রহণযোগ্যতা এখনও অতটাও নেই। সাই ফাই মুভির ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। যেখানে হলিউড এবং কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রি আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এছাড়াও যদি আমরা স্ক্রিনিং-র কথা বলি, সেখানেও কিন্তু ভারত অনেকটাই পিছিয়ে। যেখানে চিনেই কমবেশি ৪০ হাজারেরও বেশি স্ক্রিন, সেখানে ভারতে রয়েছে মেরেকেটে ১০ হাজার।
যদিও বাকি ক্ষেত্রে কাজ হচ্ছে তবে টিকিটের দামের ব্যবধান মেটানো সহজ নয়। আমাদের দেশে একটা টিকিটের দাম যদি ১০০০ টাকা হয় তাহলে কি সেটা সাধারণ মানুষ কিনতে পারবেন? উহঃ, সম্ভব নয়। আসলে সাধারণ মানুষের রোজগারের কথা মাথায় রেখেই টিকিটের দাম নির্ধারণ করা হয়। যাতে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রতিটা মানুষ সিনেমা হলে যেতে পারেন। কলেজ পড়ুয়া প্রেমিক-প্রেমিকা হোক কী খেটে খাওয়া দিনমজুর। কেউই যাতে বিনোদন থেকে বঞ্চিত না হন সেই কারণেই এই ব্যবস্থা। আর তাই সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করেও ভারতের আয় হলিউড বা চাইনিজ ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে অনেকটাই কম। ভারতে ওটিটির কারণেও ব্যবসা কিছুটা মার খেয়েছে।
তবে এতকিছুর পরেও ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু সত্যিই ইউনিক। আমাদের গর্ব। এখানে অ্যাকশন, ড্রামা, কমেডি, ইমোশন কি নেই? ভারতের সিনেমায় টান আছে। এখানে যেমন ‘লাপাতা লেডিজ’ ‘দঙ্গল’ তৈরি হয়, তেমনই আবার ‘পাঠান’, ‘আর আর আর’এর মত ছবিও তৈরি হয়। আর আর আর তো অস্কার অবধি জিতে নিয়ে এসেছে। আমাদের ভারতের মত ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও বৈচিত্র্যময়।
VFX নিয়েও এখন কাজ হচ্ছে। রণবীরের ব্রহ্মাস্ত্র মুভিতে যথেষ্ট ভালো ভিএফএক্স ব্যবহার করেছেন নির্মাতারা। এছাড়াও ভারতের ক্ষেত্রে একটা অ্যাডভান্টেজ কিন্তু এর দর্শক। আমাদের দেশের দর্শকদের সিংহভাগ কিন্তু ভারতীয় সিনেমা দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। তাই আশার আলো তো রয়েইছে। কে বলতে পারে, হয়ত কোনও একদিন হলিউডকেও ছাপিয়ে যাবে আমাদের ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম