।। প্রথম কলকাতা ।।
India-Israel relations: ইসরায়েলে ঘুরপথে অস্ত্র পাঠাচ্ছে ভারত! বড় অভিযোগ। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ আটকে দিল স্পেন। দেশটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র নয়, শান্তি চায়। তাহলে ভারত এমনটা কেন করল? যুদ্ধের মাঝে সত্যি কি ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল? নাকি সবটাই ধোঁয়াশা? ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধের প্রথম দিকে বহু দেশ মাঝে নাক গলাতে চায়নি। কিন্তু যখনই গাজার বেসামরিক মানুষের উপর হামলা হতে শুরু করেছে, তখনই কথা বলতে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রীতিমত ফুঁসছে তারা। শুধু তাই নয়, যে দেশগুলো ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করত, সেই দেশগুলোও তেল আবিবের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। যেমনটা প্রথমদিকে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। আর এসব ডামাডোলের মাঝে ঘটে গেল বড় বিতর্কিত ঘটনা। জড়িয়ে পড়ল ভারত।
তুমুল সমালোচনার মুখে ভারত, স্পেনের সাথে বন্ধুত্বে চিড়?
সম্প্রতি ইসরায়েলগামী একটি জাহাজ আটকে দিয়েছে স্পেন। আর তারপরেই শুরু হয়েছে ভারতের নামে তুমুল সমালোচনা। ইসরায়েল আর হামাসের দ্বন্দ্বের প্রথম থেকেই ভারত রয়েছে নিরপেক্ষ অবস্থানে। শুধু তাই নয়, গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলা বন্ধের আহবানও জানিয়েছিল নয়া দিল্লি। আর সেই ভারতের বিরুদ্ধেই এখন উঠেছে মারাত্মক অভিযোগ। বহু গণমাধ্যমে লেখা হচ্ছে বড় বড় হেডলাইন। অভিযোগ, ভারত নাকি ঘুর পথে ইসরায়েলকে পাঠাচ্ছে জাহাজ বোঝাই অস্ত্র। ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যেমন ভালো, অপরদিকে স্পেনের সঙ্গেও ভারতের সুসম্পর্ক। ভারতের বিরুদ্ধে এই যে অভিযোগ উঠছে, এটা কতটা সত্যি? নাকি পুরোটাই শুধু শুধু বদনাম?
প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল, যেখানে ইসরায়েলগামী জাহাজ আটকাল স্পেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে, বহুদিন আগেই কঠোর অবস্থান নিয়েছিল স্পেন। আর সেই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র বহনকারী জাহাজ ফিরিয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই দেশটি। শুধু তাই নয়, স্প্যানিশ সরকার ঘোষণা করেছে, ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র বহনকারী আর কোন জাহাজকেই স্পেনের বন্দরে ভিড়তে দেবে না। প্রসঙ্গত বলে রাখি, কয়েক মাস আগে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়েছিল ইউরোপের চার দেশ। যেখানে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চলেছে স্পেন। ভারতের সঙ্গে স্পেনের সম্পর্কও অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারত থেকে ইসরায়েলকে গামী জাহাজ নোঙর করার অনুমতি পেল না স্প্যানিশ বন্দরে। স্পেনের সরকার যুক্তি দিয়েছে, ২১শে মে কারতাজেনা বন্দরে নোঙর করার অনুমতি চেয়েছিল মারিয়ান ড্যানিকা নামক ওই জাহাজটা। জাহাজটি নাকি ডেনমার্কের। যেটি রওনা হয়েছিল চেন্নাই থেকে। যাওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে। জাহাজটিতে ছিল প্রায় ২৬.৮ অর্থাৎ প্রায় ২৭ টনের কাছে বিস্ফোরক। কিন্তু জাহাজটি ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক।
এক্ষেত্রে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়াল আলবারেস বলেন, এই প্রথমবার স্পেন কোন জাহাজ আটকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলের কোনো অস্ত্রবোঝাই জাহাজকে স্পেনের বন্দরে নোঙর করার অনুমতি দেয়া হবে না। কারণ স্পেনের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী, ইসরায়েলের যাওয়া কোন অস্ত্র বোঝাই জাহাজ স্পেনে থামতে পারবে না। কারণ মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র নয়, স্পেন শান্তি চায়। স্পেনের কাছে পৌঁছে জাহাজটিরর নাবিকদের পরিকল্পনা ছিল, ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন স্পেনীয় উপকূলে জাহাজটি নোঙর করবে। তারপর স্পেনে কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে নতুন করে জ্বালানি ভরে আবার রওনা দেবে। আর সেখানেই আপত্তি তোলে স্পেন। জাহাজটিকে স্পেনে থামতে দেয়নি। যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু স্পেন ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করার করে দিয়েছে। ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধের মাঝে স্পেনের অবস্থান ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। স্পেন দাবি জানিয়েছে, তারা পশ্চিম এশিয়া শান্তি পক্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল আর হামাসকে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে পাল্টে গিয়েছে বিশ্ব ভূ রাজনীতি। যে ইউরোপের দেশগুলো একসময় ইসরায়েলকে সাপোর্ট করতো, আজ তারাই রীতিমত ঘুরে গিয়ে সাপোর্ট করছে হামাসকে।
সত্যি কি ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল ভারত? চলছে তদন্ত
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় বেশ টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে। যদিও এই গোটা বিষয়ে মুখ খুলেছে ভারত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখপাত্র রণধির জয়সওয়াল। স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্পেনে যে জাহাজ আটকে দেওয়া হয়েছে তার সমস্ত রিপোর্ট ভারত পেয়েছে। এই পুরো বিষয়টা নিয়ে তদন্তও চলছে। যদিও পরবর্তীকালে এই সম্পর্কিত কোন বিস্তারিত তথ্য জানায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুরু হয়ে যায় লেখালেখি। বড় বড় হেডলাইন ছাপা হয় প্রশ্নসূচক আর আশঙ্কা মূলক কিছু কথা। তাহলে কি, ভারত সত্যি ইসরায়েলের অস্ত্র পাঠাতে চাইছে? বারংবার গাজায় শান্তি ফেরানোর কথা বললেও ইসরায়েলের বিস্ফোরক পাঠানোর অর্থটাই বাকি? এক্ষেত্রে কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ভারত ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধকে কেন্দ্র করে কিংবা গাজায় হামলার চালানোর জন্য হয়তো ওই অস্ত্র বোঝাই জাহাজ পাঠাচ্ছিল না। কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহুদিনের। কূটনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। যদি ইরানের কথা বলেন, সেক্ষেত্রেও পাল্লা যথেষ্ট ভারী। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে, পররাষ্ট্রনীতির অধীনে কেউ কাউকে অস্ত্র দেয়, কেউ শস্য দেয়, কেউ বা কাঁচামাল কিংবা তেল দেয়। এই ভাবেই বজায় থাকে বাণিজ্যিক আদান-প্রদান। হয়তো ইসরায়েলে তারই কোন অংশ হিসেবে ভারত অস্ত্র পাঠাচ্ছিল। আর আদৌ ভারত ওই অস্ত্র ইসরায়েলের উদ্দেশ্যেই পাঠাচ্ছিল কিনা, তা এখনো কিন্তু স্পষ্ট নয়। কারণ এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা ইসরায়েলের তরফ থেকে প্রকাশ্যে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যে ব্যালেন্সের নীতিতে ভারত, ইসরায়েল বন্ধু মাত্র
ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন ইস্যুতে অতীতেও বারংবার ভারত নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকেছে। শুধু তাই নয় ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বজায় রেখেছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত। ভারতের কাছে পশ্চিম এশিয়ায় অন্যান্য দেশগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বহুদিনের। অপরিশোধিত তেল কেনার জন্য এই অঞ্চলের গুলোর উপর ভারত বিশেষভাবে নির্ভরশীল। ইসরায়েলের সাথে সুসম্পর্ক থাকলেও, ভারত কখনোই পররাষ্ট্র নীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলেনি। আরো জানলে অবাক হবেন, যখন প্রথম দিকে ফিলিস্তিন ভেঙে ইসরায়েল নতুন রাষ্ট্র গঠনের কথা উঠেছিল, অর্থাৎ সেই ১৯৪৮ সাল নাগাদ রাষ্ট্রপুঞ্জের সেই সিদ্ধান্তে সায় ছিল না সদ্য স্বাধীন ভারত সরকারের। পরবর্তীকালে, ১৯৫০ সালে ভারত ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯২ সাল থেকে। তেল আবিবে দূতাবাস খোলে ভারত। একইভাবে নয়া দিল্লিতেও দূতাবাস খোলে ইসরায়েল। সময়ের সাথে সাথে আরও দৃঢ় হয়েছে ভারত আর ইসরায়েলের সম্পর্ক। বাণিজ্যিক লেনদেনের পাশাপাশি দুই দেশ একে অপরকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিবছর বাণিজ্যিক লেনদেন হয় প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা। ইসরাইলের অস্ত্রের বড় ক্রেতা কিন্তু ভারত। প্রতিবছর ভারতের যত পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করা হয় তার একটা বড় অংশ আসে ইসরায়েল থেকে। পাশাপাশি রাশিয়া থেকেও ভারত প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনে থাকে। তবে যখনই ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে কোন সংঘাতে জড়িয়েছে, তখনই কিন্তু ভারত সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন করতে এগিয়ে আসেনি। কারণ পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে কোন পক্ষ নেওয়া ভারতের রীতি নয়। ভারত চলে স্বতন্ত্র নীতিতে।
তবে স্পেনের এই কর্মকান্ডে ভারতের একটাই বক্তব্য, ভূমধ্যসাগরে কোন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়নি। ভারত সবসময়ের জন্য ইসরায়েল থেকে বেশি পরিমাণে অস্ত্র কেনে। হয়তো সেই সূত্রেই, ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্রের উপাদান যাচ্ছিল ইসরায়েলে। এমনটা মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। তবে এটা কতটা সত্যি, এটা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। আবার কোন কোন সমালোচকের অভিযোগ, ভারত গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতে চাইছে ইসরায়েলে। তাই হয়তো সহজ পথে না গিয়ে ঘুরপথে ইসরায়েলে জাহাজ পাঠাচ্ছে । সমালোচকদের দাবি, লোহিত সাগরীয় অঞ্চল দিয়েই সমুদ্রপথে ইসরায়েলে যাওয়া যেত। কিন্তু চেন্নাই থেকে রওনা দিয়ে জাহাজটি সেই পথ ধরেনি। হঠাৎ কেনই বা ঘুরপথে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইসরায়েলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল? সেটাও নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম