।। প্রথম কলকাতা ।।
Beauty of India: প্রকৃতি এতটাই অদ্ভুত আর শক্তিশালী যার কিনারা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কল্পনা কিংবা স্বপ্নের স্বর্গ রয়েছে এই পৃথিবীতেই। ভারতের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে পা রাখলে মনে হবে যেন আপনি স্বর্গে প্রবেশ করেছেন। এই সৌন্দর্যকে ইচ্ছা করলে আপনি ছুঁতে পারেন। শুধু চাই একটু ফুসরত, আর ছুটে চলে যাওয়ার ইচ্ছা।
চন্দ্রতাল হ্রদ
সৌন্দর্যে স্নান করতে চান তাহলে চলে যান চন্দ্রতাল লেকে। চারিদিকে পাহাড়বেষ্টিত হিমালয়ের মাঝে শান্ত স্বচ্ছ নীল জলের হ্রদ দেখলে মনটা শান্ত হয়ে যাবে। এখানে চাইলে আপনি ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিংও করতে পারেন। যতদূর চোখ যাবে দিগন্ত জুড়ে শুধুমাত্র নীল আকাশ চোখে পড়বে, সেখানেই ভেসে বেড়াচ্ছে কল্পনার রঙে মোড়া দুধ সাদা মেঘের ভেলা। দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি সারি পাহাড়। তাদের চূড়ায় রয়েছে বরফের স্নিগ্ধ হাতছানি। পাহাড়ের মাঝে হ্রদের সবুজ নীল জল দেখলে মনে হবে যেন কেউ ইচ্ছে করে জলে পান্নার সবুজ আর নীল প্রবালের রঙ ঢেলে দিয়েছে। সুন্দরী চন্দ্রতাল হ্রদ থেকে বয়ে গিয়েছে চন্দ্রভাগা নদী। এই হ্রদ লাহুল আর স্পিতির সবথেকে সুন্দর হ্রদ গুলির মধ্যে একটি। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এর সৌন্দর্যের টানে এখানে ছুটে আসেন। নীল জলে সাদা পাহাড়ের ছায়া দেখতে মন্দ লাগে না। শোনা যায় এই হ্রদের পাশের পথেই একসময় চীন থেকে রেশম পথ দিয়ে ব্যবসায়ীরা এসে বিশ্রাম নিতেন। হিমাচল প্রদেশের এই হ্রদের কাছে রাস্তা অনেকটা লাদাখের মতো। ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর। রুক্ষ এবড়ো খেবড়ো পথের হঠাৎ করে গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে পাহাড়ি ঝোড়া। মানালি থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার পথ গেলেই পেয়ে যাবেন এই স্বর্গের স্বাদ। নীল সবুজের চন্দ্রতাল হ্রদকে দেখে মনে হবে যেন সৌন্দর্য হিমালয়ের গভীর ঘন প্রাকৃতিক আদিমতায় ডুব দিয়েছে। চোখ খুলে প্রিয়জনদের কাছ থেকে সারপ্রাইজ গিফট পেলে যেমন অনুভূতি হয়, এই লেকের ধারে দাঁড়ালে মনে হবে অপ্রত্যাশিত সৌন্দর্য ঈশ্বর যেন আপনার সামনে সাজিয়ে রেখেছে। সাদা বরফের টোপর পরা বর বেশে পাহাড় গুলো যেন আপনাকে চমকে দেওয়ার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়েছিল।
কেরালার ব্যাক ওয়াটার
ইতালির ভেনিস শহরের এক টুকরো দৃশ্যপট রয়েছে কেরালায়। কেরালার এই জায়গাকে বলা হয় প্রাচ্যের ভেনিস। দুই পাড়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে সবুজ গাছ আর মাঝে ব্যাক ওয়াটারে ভাসমান হাউজপত্রে চেপে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে বেরিয়ে পড়লে মনে হবে প্রকৃতি যেন আপনাকে বারংবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কেরলের ব্যাক ওয়াটার অঞ্চলগুলি শুধু ভারতের নয় বিশ্বের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতি বছর নৌকা রেস অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়রা মাছ ধরা, চাষের জন্য কিংবা পরিবহনে ব্যাক ওয়াটার ব্যবহার করে থাকেন।
মাঝে মাঝে চোখে পড়বে একদল কচুরিপানা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ভেসে চলেছে। হয়তো মনে হবে এত কচুরি পানা হয়তো কোথাও দেখেননি। এই কচুরিপানা ঠিক কোথা থেকে আসছে বা কোথায় যাচ্ছে এদের খবর কেউ রাখেনা। তবে এরাই হলো কেরালার ব্যাক ওয়াটারের প্রাণ ভোমরা। রোমান্টিক পরিবেশের মাঝে মনে হবে প্রকৃতি যেন ছন্দে চলার পাঠ শেখাচ্ছে। চারিদিকে জেগে থাকা স্বপ্নের মত গ্রাম গুলোকে ঘিরে রেখেছে অজানা কোন নেশা। জলের উপরে ভেসে বেড়াচ্ছে অসংখ্য গন্ডোলা, হাউসবোট কিংবা ক্যানপি। এই ব্যাক ওয়াটারের সরাসরি যোগ রয়েছে সমুদ্রের সঙ্গে । এখানে প্রতিদিন সারিসারি হাউসবোটের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। যেন তারা দিবারাত্রি কাব্য রচনা করে চলেছে। এই জলের মধ্যেই রয়েছে অলস মায়া। মাঝে মাঝে চোখে পড়বে একদল পাতিহাঁস, আবার কখনো বাবা পানকৌড়ির দল।
আগত্তি দ্বীপ
লাক্ষাদ্বীপের প্রবেশ দ্বার আগত্তি দ্বীপে গেলে পাবেন অনাবিল আনন্দের স্বাদ। আগত্তি পর্যন্ত ফ্লাইটে করে ওখান থেকে বোটে করে যেতে পারেন কাডমাত, বাঙ্গারাম আর থিনাকারা দ্বীপে । আগত্তি দ্বীপ সৈকত অনেকের কাছে টপলেস সমুদ্র সৈকত নামেও জনপ্রিয়। এই দ্বীপ ঘিরে রেখেছে অজস্র নারকেল আর পাম গাছ। চোখ জুড়িয়ে যাবে সাদা বালির রাশি আর প্রবাল প্রাচীর দেখে। এই দ্বীপটি রয়েছে কোচি থেকে প্রায় ৪৫৯ কিলোমিটার দূরে। আপনি যদি স্ক্যুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, কায়্যাকিং, ক্যানোয়িং, ইয়াচটিং প্রভৃতির রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে চান বেশ সস্তায় হয়ে যাবে। শহরের উন্মত্ততা থেকে বহু দূরে এই দ্বীপপুঞ্জে পাবেন অনাবিল অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ। মাঝে মাঝে সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়ছে তীব্র জলের তরঙ্গ, কানে আসতে পারে শঙ্খচিলের আর্তনাদ। এই দ্বীপ বহু মানুষের কাছে আবার হানিমুন ডেস্টিনেশন। একদিকে ফিরোজা নীলাভ জল, অপরদিকে সমুদ্র সৈকত। জলকেলি করার জন্য দারুন জায়গা।
লবণের মরুভূমি
শীতের মোরসুমে যদি পুরোদমে উৎসবের আনন্দে গা ভাসাতে চান তাহলে একটু ঘুরে আসুন গুজরাটের কচ্ছের রণ থেকে। এখানকার রান উৎসব বেশ জনপ্রিয়, যা দেখলে আপনার বারবার মনে হবে ভাগ্যিসে এসেছিলাম না হলে এ জীবনে অনেক কিছু মিস করতাম। রণ আসলে নুন দিয়ে ঢাকা বিশাল মরুপ্রান্তর। যেদিকে তাকাবেন শুধু সাদা আর সাদা। সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়ের সময় কচ্ছের রণের অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এমনকি পূর্ণিমার রাতে যদি রণে যান তাহলে আপনি হয়তো ভুলে যাবেন যে বাস্তবের মাটিতে রয়েছেন। মনে হবে যেন এক টুকরো স্বর্গ এসে ধরা দিয়েছে আপনার কাছে। চাঁদের আলোয় বিশাল সাদা প্রান্তর ঝকঝক করে। আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে কিন্তু কোন গাছ নেই। তাও যেন রয়েছে এক অদ্ভুত মায়া। ভূজের কেন্দ্র থেকে ঢোড়ডো গ্রাম পর্যন্ত টানা ৮৩ কিলোমিটার পথের দুই দিকে ধূ ধূ করছে মাইলের পর মাইল সাদা মাঠ। যেখানে এই কাঁটা গাছের ঝোপ ছাড়া আর কিচ্ছু চোখে পড়বে না। মাঝে মাঝে বহু দূরে চোখে পড়তে পারে গরু, মোষ কিংবা ছাগলের দল। কচ্ছের রণের মত সুন্দর জায়গা ভূ ভারতে দুটো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের আলোয় এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে মোক্ষম সময় হল শীতকাল। সাদা লবণের এই মরুভূমিতে শীতের সময় জলবায়ু থাকে অত্যন্ত মনোরম। যদি রণ উৎসবে শামিল হন তাহলে উপরি পাওনা হিসেবে পাবেন গুজরাটের নৃত্য, খাদ্য, সংগীত এবং সংস্কৃতির ছোঁয়া। এখানে প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা দেখার মতো।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম