।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারত-বাংলাদেশে ঢুকবে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত আফগান শরণার্থীরা। পাকিস্তান কেন ১৭ লক্ষ আফগান অভিবাসীকে বের করে দিল? বড় বিপদের আশঙ্কায় ইসলামাবাদ কাঠ হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানে কত দেশের রিফিউজিরা বাসা বেঁধে রয়েছে? ভারত ও বাংলাদেশ কি আফগান শরণার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেবে? কারণ পাকিস্তান এদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার প্রসেস অলরেডি শুরু করে দিয়েছে। কোন ধরণের চালাকি চায় না তাই সীমান্তে পাক সেনা এবং ফ্রন্টিয়ার কোর বাহিনীর বাড়তি মোতায়েন করেছে ইসলামাবাদ। ভারত ও বাংলাদেশে বর্তমানে ঠিক কত শরণার্থী আছে? রোহিঙ্গা ছাড়াও বাংলাদেশে আর কোন রিফিউজিরা রয়েছেন ভারতের শরণার্থী তালিকা লম্বাচওড়া তাই নতুন করে কি আফগানিস্তানকে আশ্বাস দেওয়া সম্ভব? এটা জানতে গেলে আগে জানতে হবে নিজেদের দেশ থেকে আফগানা পাকিস্তানে কেন পালালেন?
আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দু’দশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরে কয়েক লক্ষ আফগান নাগরিক প্রাণের ভয়ে পাকিস্তানে চলে আসেন। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এছাড়াও বালুচিস্তান প্রদেশে তারা বসবাস করতেন। এতবছর একটা দেশে থাকার পর হঠাৎ করে এমন কি হল তাদেরকে রীতিমত আল্টিমেটাম দিয়ে দেশ ছাড়া করছে পাকিস্তান সরকার। পাক সরকারের দাবি এই আফগান শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় তা সাড়ে ১৭ লক্ষের আশপাশে। এত শরণার্থী কি তাহলে ভাগ হয়ে যাবেন ভারত বাংলাদেশে? ২০২২র হিসাব বলছে ৪ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী ভারতে বাস করে। এদের মধ্যে ২,১৩৫৭৮ জনের নাম সরকারীভাবে রেজিস্টার্ড মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা, তিব্বতি শরণার্থী, বাংলাদেশ থেকে আসা চাকমা শরণার্থী একাত্তর সালে বাংলাদেশী শরণার্থী এবং ১৯৮০র এর দশকের শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের ভারতে বাস।
পাকিস্তানে আফগানরা ছাড়া আর কোনও দেশের মানুষই শরণার্থী পরিচয় নিয়ে থাকে না। এবার যে কারণে পাকিস্তান এদের দেশ ছাড়তে বলছে তা হল পাকিস্তানে সম্প্রতি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। হ্যাঁ পাকিস্তান নিজে এবার তিতিবিরক্ত টেররিজম নিয়ে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে আফগান শরণার্থীদের জন্য বিপুল অঙ্কের আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্য এবং ত্রাণ পেয়েছে ইসলামাবাদ এটা ভুলে গেলে চলবে না। ২০২১ সালের অগস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দু’দেশের বিরোধ শুরু হয়। তথ্য বলছে চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ২৭১টি হামলা হয়েছে। পাকিস্তানের নিষিদ্ধ তালেবানপন্থি দল টিটিপি’র বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তান পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এসব হামলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিবন্ধনবিহীন আফগান শরণার্থীদের।
আর এই অনিবন্ধিত শরণার্থীই রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি যাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। সেই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান। বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। এখানে বলে রাখি টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও সম্প্রতি বিভিন্ন সহিংস অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আফগান শরণার্থীরা। চলতি সেপ্টেম্বরে কেবল করাচি শহর থেকেই সহিংসতা ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকায় ৭০০ আফগানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যারা পাকিস্তান ছাড়ছেন তাদের গন্তব্য কিন্তু ভারত বা বাংলাদেশ নয় তারা সোজা নিজেদের দেশ আফগানিস্তানেই ফিরছেন। পাক-আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়া বালুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানের মানুষ ও যানবাহনের দীর্ঘ সারি। মঙ্গলবার ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়েছেন বলে পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি। এবার দেখার কবে আফগানদের নিজেদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম