।। প্রথম কলকাতা ।।
Khirpai: মন্দিরের বয়স বেশ নবীন, পুজোর আয়োজনে কোন জাঁকজমক নেই। তবুও পশ্চিম মেদিনীপুরের এই মন্দির সবার নজর কাড়ে। এখানেই রয়েছেন বড় মা। বড় মাকে দর্শনের পাশাপাশি আপনি নিজেই পুজো দিতে পারেন। এমনকি মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারেন। পুজোর জন্য কোন পুরোহিত ডাকার দরকার নেই। বড় মার সামনে দাঁড়িয়ে আশীর্বাদও চাইতে পারেন। আপনাকে কেউ বাধা দেবে না। এই বড় মায়ের আরাধনার জন্য কোন দিনক্ষণ মানা হয় না। সারা বছর যে কোন সময় আপনি মায়ের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারবেন। শুধুমাত্র অমাবস্যার দিন আপনি পুজোর অনুমতি পাবেন না। এই বড়মা অত্যন্ত জাগ্রত। এতটাই জাগ্রত যে মনে করা হয় এই বড় মায়ের কাছে যদি কেউ কিছু চায় তাহলে তার সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়। এই বড় মায়ের মন্দির রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) ক্ষীরপাইয়ে (Khirpai)।
টিনের ছাউনির মন্দিরটি বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি কারখানা। ভিতরে প্রবেশ করলে সারা দিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি দূর হবে। মনে হবে যেন আপনার সমস্ত কষ্ট সার্থক হয়েছে। মন্দিরের ভিতরে বিরাজমান পবিত্র আবহাওয়া। এই শান্ত আবহাওয়ায় কানে আসবে ওঙ্কার ধ্বনি। মুহূর্তে মনের মধ্যে নেমে আসবে এক অদ্ভুত শান্তি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে দেখতে হবে মায়ের মূর্তিকে, হিন্দু শাস্ত্রে যেভাবে দেবী কালীর বর্ণনা করা রয়েছে সেই বর্ণনা সঙ্গে এই বড় মায়ের রূপের মিল পাবেন না। দশমহাবিদ্যার সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে দেবীর এই রূপ। কিছুটা দেবী কালিকা আর দেবী ছিন্নমস্তার সঙ্গে মিল পাবেন। তবে কালীমূর্তির এই ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে অনেকেই প্রথমে একটু ভয় পান। বিরাট শিবের বুকে এক পা দিয়ে অন্য পা মাটিতে রেখে মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। রক্তাক্ত ঠোঁট, গায়ের রং কালো মিশমিশে, দন্ত বিকশিত, উদগত চোখ।
ক্ষীরপাইয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শুদ্ধদেব রায় বছর ২০ আগে মায়ের এই মন্দির আর প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মায়ের প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। মাথা উঁচু করে মায়ের মুখের দিকে আপনাকে দেখতে হবে। বড় মার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে অনেকেই প্রথমে একটু ভয় পেয়ে যান। বড় মায়ের এই প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ কংক্রিট দিয়ে। চতুর্ভুজা বড় মায়ের দক্ষিণ দিকের উপরের হস্তে রয়েছে ধরিত্রী আর নীচের হস্তে রয়েছে সাদা পায়রা। মায়ের বাম দিকের উপরের হস্তে রয়েছে একটি খড়গ আর নিজের হস্তে নর মুন্ড। এক কথায় মায়ের রূপ অনবদ্য। মায়ের এই রূপের মধ্যে রয়েছে বিশেষ বার্তা। মা অসুর দমন করে, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন সাদা পায়রার মাধ্যমে। বড় মায়ের পায়ের দিকে হলুদ বোর্ডের উপর অদ্ভুত কিছু লেখা রয়েছে, যা পড়লে চমকে যাবেন।
স্পষ্ট লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা রয়েছে মায়ের মন্দিরে কোন টাকা পয়সা দেবেন না অর্থাৎ এখানে ব্যবসায়িক কোনো কাজকর্ম চলে না। আরেকটি লেখা আপনাকে আশ্চর্য করবে সেটি হল “বড়মা কে পরীক্ষা করুন, মা আছেন কিনা”। মা যে কত জাগ্রত তা বোঝাতেই স্থানীয়রা হয়ত এই কথা লিখেছেন। আরেকটি জায়গায় লেখা রয়েছে “বড় মা কে বলো, যে কোন সমস্যার সমাধান বড় মাই করতে পারে” । আপনি এখানে নিজের হাতে মায়ের পুজো দিতে পারবেন। আপনাকে কেউ বারণ করবে না। কোন পুরোহিতের প্রয়োজন নেই । কোন ফুলের প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে বন ফুল দিয়ে মাকে পুজো করতে পারেন। নিজের হাতেই মায়ের থেকে পাবেন প্রসাদ। মন্দিরের বাইরে একটি জায়গায় ধূপের সারি রাখা আছে, আর নিচে একটি বক্স আছে। সেখানে আপনি দশ টাকা দিয়ে ধূপের প্যাকেট সংগ্রহ করতে পারেন।
রোজ দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এই কারখানার আকৃতি বিশিষ্ট টিনের ছাউনি দেওয়া মন্দিরে বড় মায়ের দর্শন পেতে ছুটে আসেন। যে যার সাধ আর সাধ্য মতো মায়ের পুজো করে ফিরে যান। এখানে কোন প্রণামির বাক্স নেই। কারণ এই মন্দিরে প্রণামি দেওয়া মানা। এখানে নিত্য পুজো ভক্তরা করলেও প্রতি অমাবস্যায় কিন্তু যাবতীয় রীতি মেনে মায়ের পুজো করা হয়। এখানে পুজোর ভোগ এবং প্রসাদের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বড় মায়ের সামনে বলি নিষিদ্ধ। বড় মায়ের কাছে ভোগ নিবেদন করা হয় সাত্ত্বিক ভাবে। কালী পুজোর সময় গেলে দেখতে পাবেন, সকাল থেকে প্রচুর মানুষ রীতিমতো লম্বা লাইন দিয়ে বড় মায়ের খিচুড়ি ভোগ নিতে ব্যস্ত। অথচ পুজোর আয়োজনে কোন জাঁকজমকের ছোঁয়া পাবেন না। প্রতি অমাবস্যা ছাড়াও কালীপুজোর তিনদিন আপনি পুজো করার অনুমতি পাবেন না। বড় মায়ের মন্দিরের সামনেই রয়েছে ছোট মায়ের মন্দির। যেখানে মা কালীর পরিচিত রূপের চেনা ছবি দেখতে পাবেন। সামনে রয়েছে বলির ব্যবস্থা। এখানে মূলত তামসিক পদ্ধতিতে আরাধনা করা। বছরের শুরুতে বড় মায়ের আশীর্বাদ পেতে যেতেই পারেন ঘাটালের ক্ষীরপাইয়ে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাই শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে শ্মশানে রয়েছে এই মন্দির। ক্ষীরপাই শহর থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা টোটো নিয়ে যেতে পারেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম