জেল থেকেই হুঙ্কার ছাড়ছেন ইমরান খান ( Imran Khan )। পাকিস্তানে এখন বড় ষড়যন্ত্রের গন্ধ। আচ্ছা, ইমরান ( Imran Khan ) কি তাঁর ক্ষমতা ফিরে পাবেন? তিনি কি পুনরায় পাকিস্তানের হাল ধরতে পারবেন? পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে শত্রুতা করে আদৌ কি জেতা যায়? পাকিস্তানে নাকি অরাজকতা ছড়ানোর প্ল্যানিং করছেন ইমরান, হঠাৎ এতবড় বিস্ফোরক অভিযোগই বা কেন? এবার ইমরানের মাস্টারস্ট্রোক। বসবেন অনশনে। জেলে বসেও দলকে সাহস যোগাচ্ছেন। এখনই হাল ছাড়ছেন না ইমরান।
প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন তো কি হয়েছে? ইমরান খানের ( Imran Khan ) পাওয়ার কিন্তু বিন্দুমাত্র কমেনি। তা তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন হুঙ্কার ছেড়ে। এবার কারাগারে থেকে নতুন হুমকি দিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহেরিক-ই-ইনসাফের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। তার মানে কি এটাই স্পষ্ট নয় যে, ইমরান খান কিন্তু তাঁর মনের আশা এখনো ছাড়েননি! তিনি পুনরায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন। বারংবার বলে এসেছেন, তাঁর সাথে অন্যায় হয়েছে। তাঁকে জোর করে কারাগারে বন্দি করা রয়েছে। আসলে কিছুটা যেন ভাগ্য খারাপ যাচ্ছে ইমরানের। তাই এবার হাঁটছেন একটু ঘুর পথে। হুমকি দিয়ে ইমরান জানিয়েছেন, ন্যায় বিচার যদি না পান তাহলে অনশনের পথ বেছে নেবেন।
কিন্তু কূটনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, পাক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া অতটাও সহজ হবে না। কারণ একাধিক মামলায় তিনি সাজা প্রাপ্ত হয়ে বন্দী রয়েছেন আদিয়ালা কারাগারে। ইমরানের বিস্ফোরক দাবি, দেশটার সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাকি সেই কারাগার নিয়ন্ত্রণ করছে। কারা প্রধানরা তাদের নির্দেশেই কাজ করে। তাই তাঁকে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঠিকঠাক করে দেখাও পর্যন্ত করতে দেয়া হয় না। এসব বলে ইমরান ঠিক কী প্রমাণ করতে চাইছেন? তাহলে কি তাঁর পিছনে চলছে কোনও বড় ষড়যন্ত্র? আর সেই ষড়যন্ত্রটা তিনি ফাঁস করতে চাইছেন। কিন্তু কীভাবে করবেন, কবে করবেন, পুনরায় আদৌ ক্ষমতায় আসবেন কিনা, তা কিন্তু বড় সংশয়ের জায়গা। একথা বলা বাহুল্য যে, শাহবাজ শরীফ কিন্তু দিনের পর দিন পাকিস্তানে তার জায়গাটা পাকা করে নিচ্ছেন। তিনিও ভালোভাবে বুঝে গিয়েছেন, যদি ইমরান খান নতুন করে নির্বাচনের ময়দানে নামেন কিংবা নামার সুযোগ পান সেক্ষেত্রে শাহবাজের গদি নড়ে যেতে পারে। আর তাই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে শাহবাজ শরীফ তলে তলে কোনো ফন্দি আঁটছেন না তো? এই প্রশ্নটা উঠছে একটাই কারণে। কারণ ইমরানের ( Imran Khan ) অভিযোগ, সম্প্রতি তার দলের নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সাক্ষাতের জন্য তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় তিন ঘন্টা। আর তার কারণে ইমরান বিশেষ করে দুষছেন সামরিক কর্মকর্তাদের। ইমরান কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের জনপ্রিয় একজন নেতা। তাই কখনোই চাইছেন না তাঁর দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব গুলো সবার সামনে বেরিয়ে আসুক। সেজন্য তিনি নেতাদের নির্দেশনাও দিতে চান। তা না হলে যে মূল লক্ষ্য থেকে তাদের মনোযোগটাই সরে যাবে। আসলে ইমরান বারংবার বোঝাতে চাইছেন, তিনি হাল ছাড়েননি। হাল ছাড়বেন না। কারাগারে থাকলেও তাঁর মনের জোর বিন্দুমাত্র কমেনি। উল্টে হুমকি দিচ্ছেন। বলেন, দেশের সমস্ত নাগরিকদের অধিকার সমান। তাই ন্যায় বিচার না পেলে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। তখন শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন অনশনকে।
অথচ দেখুন, একটা সময় ইমরানকরে অনেকেই পাকিস্তানের ভবিষ্যতের কান্ডারী বলে মনে করতেন। তাহলে কি সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকে ইমরান তাঁর আস্থাটা হারাতে চাইছেন না? দেখুন, ইমরান খান ( Imran Khan ) কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট পার করেছেন। তিনি যেমন জনপ্রিয় রাজনীতিক, তেমনই পাক নবীন প্রজন্মের কাছে তাঁর আবেদনও যথেষ্ট। তবে হ্যাঁ, তিনি তার দেশকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করতে পারেননি। জনগণের কাছে রাখঢাক যেমন করেননি, তেমন মিথ্যা আশাও দেখাননি। কিন্তু সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে তিনি প্রথম থেকেই ব্যাকফুটে ছিলেন। অথচ পাক ইতিহাসে এমন জনঘনিষ্ঠ নেতা কমই দেখা গিয়েছে। শুধু খেলার মাঠেই নয়, পাক রাজনীতির মাঠেও একের পর এক ছক্কা হাঁকালেও তাঁকে মাত দিয়ে দিয়েছে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোট। যদিও তার পিছনে অন্যতম কারণ, পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন।
অথচ কি আশ্চর্য ব্যাপার না, এই সেনাবাহিনী একটা সময় ইমরানকে ( Imran Khan ) ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল। এমনকি যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়, ইমরান সেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগও এনেছেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ভ্রমণে তাঁকে নিষেধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিনি শোনেননি। একই দিনে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন। তাই যুক্তরাষ্ট্র নাকি ইমরানকে ক্ষমতা থেক সরাতে চেয়েছে। যদিও এহেন অভিযোগের পক্ষে ইমরান কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারেননি। তবে কূটনৈতিক মহলের গুঞ্জন বলছে, এটা সম্ভবত পাকিস্তানিদের ভিতরে পুঞ্জিভূত যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন ইমরান। সে ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীকালে ইমরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কথা বলেন। আসলে মূল সমস্যা তো সেনাবাহিনী। যে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইমরান ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই সেনাবাহিনী ছুরি মেরেছে ইমরানকে। ইমরান যতই তাঁর কর্তৃত্ব আর স্বাধীনতা জাহির করার চেষ্টা করেছেন, ততই সেনাবাহিনী বুঝে গিয়েছে ইমরান আর তাদের হাতে পুতুল হয়ে থাকবে না। গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, গোয়েন্দা সংস্থা ভূমিকা সহ নিরাপত্তার নীতির মত বেশ কিছু বিষয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে ইমরানের মত পার্থক্য দেখা দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় আসল ভাঙ্গনের খেলা। অথচ বহু বছর ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিশ্বাস করত, তাদের দেশের জন্য একটা ত্রাতা খুঁজে পেয়েছেন। তারা আর সেই ত্রাতা ইমরান খান। আর সেই তিনি সেনাবাহিনীর চিরশত্রু হয়ে উঠেছেন। ইমরানের আক্রোশ থেকে বাঁচতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে সেনাবাহিনী। আসলে কি বলুন তো, সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষমতা হারানো অনেকটা যেন রীতির মতো। যদি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় তাহলে চলে আসবে দেশটার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরীফের কথাও। সেখানে ব্যতিক্রম নন ইমরানও। তাহলে কি এবার শাহবাজ শরীফের পালা? প্রশ্নটা থেকেই যায়।
আপাতত বর্তমানে পাকিস্তানের যা পরিস্থিতি, দেশটার মানুষ শুধুমাত্র চাইছে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সমৃদ্ধ এক নতুন পাকিস্তান। সেই স্বপ্ন আদৌ ইমরান ( Imran Khan ) পূরণ করতে পারবেন, নাকি শাহবাজ শরীফ সরকার যথেষ্ট? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, ইমরান খান মুক্ত হলে, আদৌ কি একটা বড় গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে ? নাকি তাঁকে বল প্রয়োগ করে চুপ করিয়ে দেওয়া হবে? পাকিস্তানের সামনে এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, স্থিতিশীল দেশ হিসেবে টিকে যাওয়া। যেখানে বারংবার চলে আসবে ইমরান খানের প্রসঙ্গ। হয়তো বা মানুষটা দেশটার প্রধানমন্ত্রী পদে নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁকে কেন্দ্র করে পাক রাজনীতির উত্তেজনা বিন্দুমাত্র কমিনি। যে কোনো মুহূর্তে পাকিস্তানের বিস্ফোরকের মতো বড় আন্দোলন হতে পারে।
যদিও আপাতত পিটিআইকে রীতিমত দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। ইমরানের ( Imran Khan ) দাবি, পিটিআই এর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিষয়ে নাকি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন প্রধান বিচারপতি। আদালতের বেঞ্চের যে মামলাগুলোর বিচার চলছে, ওই বেঞ্চের অন্য সদস্যরাও প্রধান বিচারপতির উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি চলছে। ইমরানের এত বড় অভিযোগে কিন্তু বসে নেই এই শাহবাজ শরীফের রাজনৈতিক দল। বরং শাহবাজের রাজনৈতিক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহর দাবি, ইমরান কারাগার থেকে পাকিস্তানে অরাজকতা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করছেন। আর সেই বিষয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণ রয়েছে। নৈরাজ্য ছড়ানোর অভিযোগ করে রানা দাবি করেন, ইমরানকে কারাগারের ভিতরে রাজনৈতিক সভা করতে নিষেধ করেছে আদালত। সোজা কথায়, শাহবাজ শরীফ সরকার ইমরানকে এখনো পর্যন্ত একটা শক্ত প্রতিপক্ষ বলেই মনে করছে। যদি একবার ইমরান জেল থেকে মুক্তি পান, তাহলে নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠতে পারে পাক রাজনীতি।