।। প্রথম কলকাতা ।।
Israel–Hamas war: হামাস হারলে ইসরায়েলের নেক্সট টার্গেট তুরস্ক। আশঙ্কা এরদোয়ানের। গাজা হামলা নিয়ে নাকি ইসরায়েলের নামে মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে। যে অভিযোগ এসেছে তা নাকি সবটা ঠিক নয়। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের(আইসিজে) কাঠগোড়ায় ইসরায়েলের বয়ান শুনে হতবাক বিশ্ব। গত সাত মাস ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলার যে ঝুড়িঝুড়ি অভিযোগ আসছিল, সেই অভিযোগ তাহলে কি সবটাই বানানো? আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের যুক্তি আদৌ ধোপে টিকবে তো? নাকি বড় কোন শাস্তি পেতে চলেছেন নেতানিয়াহু? আন্তর্জাতিক আদালতের ক্ষমতা কতটা? অভিযোগ সত্যি প্রমাণ হলে ইসরায়েলকে কী শান্তি দিতে পারে?
ভয়াবহ পর্যায়ে গাজায় জাতিগত নিধন!
গাজা নিয়ে চিন্তিত জাতিসংঘ, বারংবার তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বহু রাষ্ট্র থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গুলো বারংবার ইসরায়েলকে সতর্কবার্তা দিয়েছে, অবিলম্বে গাজায় বেসামরিক মানুষের উপর হামলা বন্ধ করার জন্য। কিন্তু হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝে যেন ফেঁসে গিয়েছে গাজার অসহায় মানুষগুলো। ফিলিস্তিনের গাজার রাফা এলাকায় যাতে সামরিক অভিযান বন্ধ হয় এবং সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে যাতে চাপে রাখা যায়, তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছিল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে। আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার অভিযোগ, গাজায় ইসরায়েলের জাতিগত নিধন পৌঁছে গিয়েছে ভয়াবহ পর্যায়ে। গাজায় ইসরায়েলের যে চলমান অভিযান চলছে, তাকে কেন্দ্র করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা চতুর্থ বারের মতো আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে জরুরী পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকা মামলা করেছিল। তবে হয়ত, এক্ষেত্রে ইসরায়েল কড়া শাস্তি পাবে না। নিজের পিঠ বাঁচাতে খাঁড়া করছে একের পর এক অন্যরকম যুক্তি। গাজায় নাকি ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে শুধুমাত্র নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসের আইসিজের কার্যালয়ে মামলার শুনানির আগে আত্মপক্ষ সমর্থনে ইসরায়েলের দেওয়া যুক্তি তৈরি করেছে বিস্তর বিতর্ক আর আশঙ্কা।
দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীর কথায়, শেষবার যখন তারা আদালতে এসেছিলেন, আশা করেছিলেন, হয়ত ফিলিস্তিনের ওই ভূখণ্ডে বাসিন্দাদের রক্ষায় জাতিগত নিধন বন্ধ হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এখনো ইসরায়েল জাতিগত নিধন চালিয়ে যাচ্ছে আর তা পৌঁছে গিয়েছে ভয়াবহ পর্যায়ে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক আইনজীবীর কথায়, রাফায় যাতে ইসরায়েলের অভিযান বন্ধ হয়, তাই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাদের দাবি, একটি জাতি গোষ্ঠী হিসেবে সমস্ত ফিলিস্তিনিকে হত্যার হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই সুরক্ষা দিতে হবে একটা আদেশের মাধ্যমে। আর সেই সুযোগ করে দিতে হবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে।
ইসরায়েল কি আদৌ শাস্তি পাবে?
দুদিনের শুনানি শেষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আদৌ কি সমস্যার কোন সুরাহা করতে পারবে? এটাই এখন একটা বড় প্রশ্ন। কারণটা শুনলে অবাক হবেন। আসলে কি বলুন তো, দুই দেশের বিবাদমান বিষয় যখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে পৌঁছায়, তখন একটা সমাধান রায় দিয়ে থাকে এই আদালত। শুধু তাই নয়, এই রায় মেনে চলার একটা আইনি ব্যাপারও রয়েছে। তবে হ্যাঁ, সেই রায় যে কোনো দেশকে মানতে হবে, এক্ষেত্রে আদালত জোর খাটাতে পারে না। যেমনটা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে। এর আগেও এই আদালত ইউক্রেনে রাশিয়াকে হামলা বন্ধের আদেশ দিয়েছিল। কিন্তু কই? রাশিয়া তা কি মেনেছে? নাকি এই আদালতের নির্দেশে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেছে? কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, হয়তো একই জিনিস রিপিট হতে চলেছে ইসরায়েলের ক্ষেত্রে। ইসরায়েল এই বিষয়টা কে একেবারেই ভারী বিষয় হিসেবে নিচ্ছে না। ইসরায়েলের লক্ষ্য এখন একটাই, হামাস নির্মূল করা।
কারণ এখনও পর্যন্ত ইসরায়েল কিন্তু রাফায়ে হামলা বন্ধ করেনি। এত বিতর্কিত কথা শুনছে, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ইসরায়েল কোণঠাসা হয়েছে, কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে পিছুপা হয়নি। চলতি বছর শুরুতেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানিতে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গাজায় বেসামরিক মানুষের রক্ষায় ইসরায়েল সবকিছু করছে। হামলা চালাচ্ছে শুধুমাত্র হামাসকে লক্ষ্য করে। কিন্তু জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য এমনটা বলছে না। কারণ গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছে, তার অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। সেই তালিকা আর বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে মহিলা আর শিশুরা। অপরদিকে ইসরায়েলের যুক্তি, হামাস গাজার বেসামরিক মানুষদের ব্যবহার করছে ঢাল হিসেবে। ইসরায়েলের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে যে জাতিগত নিধন মামলা করা হয়েছে, তা নাকি বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। অর্থাৎ বাস্তবে যা ঘটছে আর ইসরায়েলের নামে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে ইসরায়েলের দাবি করেছে, হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার্থে ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে তারা।
পাশাপাশি, ইসরায়েল দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আবেদন নাকচ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা। বিষয়টা শুধু এখানেই থেমে থাকেনি, ইসরায়েলের একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী আবার এই মামলাকে ঠাট্টা বলে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের জাতিগত নিধন সনদের সঙ্গে। অপরদিকে বিরোধীপক্ষের অভিযোগ, গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল লঙ্ঘন করেছে এই সনদ। ইসরায়েলের প্রতিনিধি গিলাড নোয়ামের কথায়, দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাজা যুদ্ধ নিয়ে চতুর্থ বারের মতো যে চিত্রের কথা বলছে, তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আর বাস্তবতার কোন মিল নেই। আপাতত ইসরায়েল স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই অভিযান হামাস নির্মূল করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ এই যে কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে হয়তো ইসরায়েলের কোন শাস্তি হবে, কিংবা ইসরায়েল গাজায় হামলা থামাতে তৎপর হবে, কিন্তু সে আশায় কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। উল্টে ইসরায়েল সবাইকে বুঝিয়ে দিল, হামাস নির্মূল না করা পর্যন্ত তারা থামবে না।
সম্প্রতি নেতানিয়াহু জোরালো ভাষায় বলেছেন, ৭ই অক্টোবর হওয়া ইসরায়েলে হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে, আর হামাসকে ধ্বংস করতে তেল আবিবের মিশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশই হল রাফা স্থল অভিযান। এতদিন ধরে যে বিভিন্ন দেশ আর মানবাধিকার সংস্থা বারবার বলে আসছিল, রাফায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক অভিযান ডেকে আনতে পারে একটা বড়সড় মানবিক বিপর্যয়। হয়তো এবার সেই আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। কারণ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাফায় অভিযান চলার পাশাপাশি সেখানে পাঠানো হবে আরও অতিরিক্ত সেনা।
হামাস হারলে ইসরায়েলের নেক্সট টার্গেট তুরস্ক!
ইসরায়েল যে এখনই থামছে না, তা বুঝে গিয়েছে তুরস্ক। তাই তুরস্কের জোরালো সাপোর্ট হামাসের দিকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের কথা, ইসরাইল যদি একবার হামাসকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে নেক্সট টার্গেট হবে তুরস্ক। ইসরায়েল তুরস্কে হামলা চালাবে বলে মনে করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজ দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে সতর্ক করে বলেছেন, ভাববেন না যে ইসরায়েল গাজায় থেমে থাকবে। যদি ইসরায়েলকে থামিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে আজ না হোক কাল ইসরায়েল নজর দেবে তুরস্কের দিকে। তুরস্ক থাকবে হামাসের পাশে। এর আগেও কিন্তু তিনি বলেছিলেন , গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে নাকি হামাসের এক হাজারের বেশি সদস্যকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তুরস্কের হাসপাতালে। গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই অবনতি হয়েছে আঙ্কারার আর তেল আবিবের সম্পর্ক। রীতিমত জোড়া তালি দিয়ে টিকে রয়েছে ইসরায়েল আর তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক। কিন্তু ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক স্টেপ নিয়ে নিয়েছে দেশটা। শুধু তাই নয়, সবশেষ ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেছেএরদোয়ান সরকার। আপাতত যা পরিস্থিতিই, তা কিন্তু ভালোর দিকে এগোচ্ছে না। যে কোন মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে একটা বড় ধরনের যুদ্ধ বাঁধা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম