।। প্রথম কলকাতা ।।
Round Up 2022: আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তার পরেই পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে স্বাগত জানাবে সবাই। দেখতে দেখতে চলে গেল ২০২২-ও। এই একটা বছরে অনেকে যেমন অনেক কিছু পেয়েছে, তেমনি আবার নিজের সবথেকে প্রিয় জিনিসটা হারিয়ে অনেকেই শূন্য হয়ে গিয়েছে। তবে এই বছর মানুষ হারিয়েছে এমন অনেক কিছুই, যা কখনও পূর্ণ করা যাবে না। বছরের শুরু থেকেই একের পর এক দুঃসংবাদ পেয়েছে গোটা দেশবাসী। চলতি বছর করোনার (Corona) দাপট খানিটা কমলেও, একের পর এক আঘাত পেয়েছে দেশবাসী। চলার পথে যে সকল শিল্পীরা হাত ছেড়ে দিয়েছেন, রইল তাঁদের কথা-
শাঁওলি মিত্র (Shaoli Mitra)
১৬ জানুয়ারি, ২০২২-
নাটক দেখতে যাঁরা পছন্দ করেন বা থিয়েটারের সঙ্গে যাঁরা জুড়ে রয়েছেন, তাঁদের জন্য এই ব্যক্তিত্বের চলে যাওয়া অনেক বড় ক্ষতি। শীতের দুপুরে ৭৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শম্ভু-তৃপ্তি মিত্রের কন্যা। তিনি জানিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর দাহকার্যের পর যেন মৃত্যুর খবর জানানো হয় সবাইকে। পাশাপাশি শেষ ইচ্ছাপত্রে তিনি বলে গিয়েছিলেন, ফুলের ভারে তাঁর দেহ যেন সেজে না ওঠে। আর সেই অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। একেবারে সাদামাটাভাবে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর শেষকৃত্যে হাজির হয়েছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ অর্পিতা ঘোষ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এই প্রতিভাবান শিল্পীর। তাঁকে হারিয়ে মুখের ভাষা হারিয়েছিল থিয়েটার জগত। বাংলা থিয়েটারের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন শাঁওলি মিত্র।
বিরজু মহারাজ (Birju Maharaj)
১৬ জানুয়ারি, ২০২২-
চোখের ইশারায় নাচের সমস্ত মুদ্রা বুঝিয়ে দিতে পারতেন এই ব্যক্তিত্ব। তাঁর এমনই প্রতিভা যে, শুধু মুখের অঙ্গভঙ্গি দিয়ে গোটা নাচ করে দিতে পারতেন। রবিশঙ্কর তাঁর নাচ দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি তো লয়ের পুতুল’। সেই মহারাজ চলতি বছরে সকলকে কাঁদিয়ে পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। নাচ, তবলা কণ্ঠসঙ্গীতে সমানভাবে পারদর্শী ছিলেন বিরজু মহারাজ। কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই প্রতিভাবান শিল্পী। তাঁদের পরিবারে সাত পুরুষ ধরে কত্থক নাচের চর্চা চলে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একাধিক ধারার সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি বহু ছবিতে কোরিওগ্রাফারের কাজও করেছেন তিনি। কলকাতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বহুদিনের। ১৯৫২-তে এই শহরেই জীবনে প্রথম মঞ্চে পারফর্ম করেছিলেন বিরজু মহারাজ।
নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath)
১৮ জানুয়ারি ২০২২-
অনেকের ছেলেবেলার গোটাটা জুড়ে ছিলেন শুধু তিনি। তাঁর কারণে পড়াশুনা লাটে উঠেছে অনেক কচিকাঁচার। ছোটদের পড়ার ফাঁকের মনোরঞ্জন ছিলেন এই ব্যক্তি। হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে থেকে শুরু করে বাঁটুল দি গ্রেট সবই তাঁর সৃষ্টি। বাংলা কমিক দুনিয়ার এই প্রবাদপ্রতিম স্রষ্ঠার চলে যাওয়া অনেককেই কাঁদিয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। একটানা ২৫ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বার্ধক্য জনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন এই প্রবীন শিল্পী। অবশেষে ১৮ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কাজী আনোয়ার হোসেন (Qazi Anwar Hussain)
১৯ জানুয়ারি, ২০২২-
বাংলাদেশি লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং জনপ্রিয় ‘মাসুদ রানা’ ধারাবাহিকের স্রষ্ঠা ছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে ষাটের দশকের মাঝখানে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রের সৃষ্টি করেন তিনি। ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নামটি ব্যবহার করতেন। ২০২১-এর অক্টোবরে তাঁর প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়। এর পর একাধিকবার ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলাদেশি এই লেখক।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay)
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২-
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মানুষ হারিয়েছে এমন এক ব্যক্তিত্বকে, যার কোনও রিপ্লেসমেন্ট হয় না বা ভাবা যায় না। সুরের রানি ছিলেন তিনি। এ বছর একসঙ্গে সুরের দুনিয়ার অনেক শিল্পীকেই হারিয়েছে মানুষ। আর তার মধ্যে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হলেন একজন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। আজও তাঁর গান শোনা গেলে খানিক থমকে যায় মানুষ। আধুনিক বাংলা গানের শ্রেষ্ঠ কন্ঠ-শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই চলে গিয়েছিলেন আগে। এ বছর নিভে গিয়েছে সন্ধ্যা-প্রদীপও। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন গায়িকা। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। যেদিন ভর্তি হয়েছিলেন, তার দু’দিন আগেই কেন্দ্রের পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এদিকে চিকিৎসার পরও তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। তাঁর গলায় গাওয়া গানগুলি মানুষের মনের মনিকোঠায় রয়ে গিয়েছে আজও। সুরের দুনিয়ায় তিনি চিরকালের সম্রাজ্ঞী। তাঁর গান গোটা দেশবাসী মনে রাখবে সারা জীবন।
অভিষেক চট্টোপাধ্যায় (Abhishek Chatterjee)
২৪ মার্চ, ২০২২-
বাংলা চলচ্চিত্র দুনিয়ার একজন জনপ্রিয় অভিনেতা তিনি। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র নন্দন দাশগুপ্তর ‘অপরাধী’ হলেও, প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘পথভোলা’। একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। বলতে গেলে অভিনয় ছিল তাঁর প্রাণ। লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশনের মধ্যেই বাঁচতেন তিনি। তাই শ্যুট করতে করতেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৫৭ বছর বয়সে সকলকে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছেন অভিনেতা। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে টলিউডে।
তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)
৪ জুলাই, ২০২২-
বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন প্রবীণ এই চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯৫৯ সালে প্রথম ফিল্ম পরিচালনায় আসেন উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবি নিয়ে। তবে ছবিটির পরিচালনায় আসলে ছিল ‘যাত্রিক’ নামের একটি গোষ্ঠী। যার সদস্য ছিলেন তরুণ মজুমদার। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই ‘যাত্রিক’-এর সঙ্গে কাজ করেছেন তরুণ বাবু। তার পর আলাদাভাবে কাজ শুরু করেন। তাঁর পরিচালিত ‘পলাতক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘সংসার সীমান্তে’ ছবিগুলি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর চলে যাওয়া চলচ্চিত্র জগতের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।
নির্মলা মিশ্র (Nirmala Mishra)
৩১ জুলাই, ২০২২-
চলতি বছর সঙ্গীত জগত হারিয়েছে একের পর এক কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পীকে। বলতে গেলে, এবছর প্রবীণ সঙ্গীত শিল্পীদের হারিয়ে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে সঙ্গীত জগত। ৮১ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনাবাসান ঘটে শিল্পীর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি চেতলার বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন নির্মলা মিশ্র। মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের যুগে বাংলা গানের এক আলাদা ঘরানা এনেছিলেন তিনি। ‘চাঁদকে নিভিয়ে রাখো’, ‘এমন একটা ঝিনুক খুঁজে’, ‘তোমার আকাশ দু’টি চোখে’, ‘ও আমার মন পাখি’, ‘আকাশে নেই তারার দীপ’- এর মত জনপ্রিয় বাংলা গানগুলি তাঁর কন্ঠে শোনা গিয়েছে।
পিনাকী চৌধুরী (Pinaki Chaudhuri)
২৪ অক্টোবর, ২০২২-
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালককে বিনোদন জগত হারিয়েছে দীপাবলীর রোশনাইয়ের মাঝেই। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। হৃদরোগের জেরে প্রয়াত পরিচালক। আগে লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ফাইন আর্টসের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। তাই তবলা বাজানো শিখতে শুরু করেছিলেন। ওস্তাদ কেরমাতুল্লাহ খানের শিষ্য ছিলেন পিনাকী চৌধুরী। তাঁর প্রথম ছবি ‘চেনা অচেনা’ মুক্তি পায় ১৯৮৩-তে। যেখানে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তনুজা এবং অমল পালেকর। রুপোলি পর্দায় তাঁর অবদান অসামান্য। তাই দু’বার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)
২০ নভেম্বর, ২০২২-
তাঁর চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে পারেনা কেউই। মাঝেমধ্যেই তাঁকে নিয়ে লেখা হয়ে থাকে সংবাদমাধ্যমে। অগণিত মানুষ তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুণে ছিল। তাঁর লড়াইটা কখনোই ভোলার নয়। ঠিক যেভাবে কিছু চরিত্রের মৃত্যু হয় না, ঠিক সেভাবেই সারা জীবন সকলের ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন তিনি। দীর্ঘ ২০ দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। সবার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ছুটির দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অভিনেত্রী। পর পর দু’বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেরে উঠেছিলেন। কাজে ফিরছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু ফের হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐন্দ্রিলা। মাত্র ২৪ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন অভিনেত্রী।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম