।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে গুজব, বাংলাদেশের ব্যাংকে নাকি তারল্যে ধ্বস নেমেছে? তারল্য কমা মানেই বিপর্যয়ের মুখে অর্থনীতি, ব্যাংকে গেলে পাওয়া যাবে না টাকা। খালি হাতে ফিরতে হবে মানুষকে। বাংলাদেশের ব্যাংকে আদৌ কি তারল্য সংকট রয়েছে? কতটা নিরাপদে আছে বাংলাদেশের মানুষ? এই তারল্য কি, যা এক লহময় বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনৈতিক গতিবিধি!
তারল্য কী?
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তারল্য সংকট নিয়ে রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছে। কোন দেশের ব্যাংকে যথেষ্ট পরিমাণে তারল্য থাকা মানেই সেই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত রয়েছে। অপরদিকে তারল্যে যদি ঘাটতি পড়ে তাহলে ওলটপালট হয়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের জীবন। মূলত ব্যাংকে থাকা নগদ টাকার পরিমাণকে বলা হয় তারল্য। বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম হল টাকা। ব্যাংকে থাকা নগদ টাকার প্রবাহ যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মহা সংকটে পড়তে পারে দেশ। ব্যাংকে এই নগদ টাকা আসে অনেক ভাবে। সাধারণ মানুষের জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মুদ্রা ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকে টাকার প্রবাহ তৈরি হয়। ব্যাংক আবার সেই টাকা সরবরাহ করে গ্রাহকদের কাছে। ব্যাংকে তারল্য খরচ হয় বিভিন্নভাবে। গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে তাদের জমানো অর্থ তুলে নেয়। এছাড়াও ব্যাংক পরিচালনার কাজে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক সেই টাকা কাজে লাগায়। এই গোটা সিস্টেমটা পুরোটা বিশাল চেনের মত। যদি এদিক থেকে ওদিক হয়ে একটু ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, তাহলে আর্থিক সংকট দেখা দেবে। সমস্যা খুব বড় আকার নিলে ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকরা টাকা পাবেন না। নিজেদের জমা টাকা তুলতে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হতে পারে। অপরদিকে ব্যাংকও গ্রাহকদের ঋণ দিতে ব্যর্থ হবে।
তারল্য চাপে থাকার কারণ
বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকে নাকি তারল্য বেশ চাপে রয়েছে। চলতি বছরে মূল্যস্ফীতি বেশি থাকায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কমছে সঞ্চয়। মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার পরিবর্তে টাকা তুলছেন। পাশাপাশি বাজারে দেখা দিয়েছে ডলারের সংকট। বিপুল পরিমাণে নগদ টাকা দিয়ে ব্যাংককে ডলার কিনতে হচ্ছে।
বাড়ছে কল মানি রেটের হার
যখনই কোন ব্যাংকে নগদ টাকার পরিমাণ কমতে থাকে তখন সেই ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংকের কাছে নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে ঋণ নেয়। এই নির্দিষ্ট সুদের হারকে বলা হয় কল মানি রেট। বাংলাদেশে ২০২১ এর জুন মাসে কল মানি রেট ছিল ২.২৫ শতাংশ। ২০২২ সালের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪.৭৩ শতাংশে। নভেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৫.৮০ শতাংশে অর্থাৎ বাংলাদেশে কলমানি রেট বেড়েই চলেছে।
তারল্যের হিসেব
২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশের ব্যাংকে তারল্যের পরিমাণ ২ লক্ষ ৩১ হাজার কোটি টাকা। ঠিক তার এক বছর পর, ২০২২ এর জুন মাসে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকায়। ২০২২ এর অক্টোবরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার কোটি টাকায়। অপরদিকে ব্যাংকের টাকা জমা রাখার হার কমছে। সেপ্টেম্বর ২০২১ এর সেপ্টেম্বরে যে হার ছিল ১১.২৫ শতাংশ, ২০২২ এর সেপ্টেম্বরের সেই হার কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৭৫ শতাংশে। পাশাপাশি বাড়ছে ঋণ গ্রহণের হার। বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরের ২০২১ এর সেপ্টেম্বর ঋণ নেওয়ার হার ছিল ১০.২০ শতাংশ, ২০২২ এর সেপ্টেম্বরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬.৪১ শতাংশ।
চিন্তার কিছু নেই, নিরাপদে আছে বাংলাদেশ
চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো পর্যন্ত তারল্য সংকট দেখা দেয়নি। বাংলাদেশে অর্থনীতি কিছুটা হলেও সংকটে রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল চিন্তিত। যদি অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে এখনই রুখে না দেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোন সংকট নেই। উপরন্তু বর্তমানে প্রায় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আসলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবরে মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। যেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এই বিভ্রান্তিকর খবর একেবারেই সত্য নয়, জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর যদিও বা ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় কোন রকম অসুবিধা হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘ রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট’ নীতি চালু রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে এলসি ওপেনিং নিয়ে গুজব রটে কমার্শিয়াল এলসি ওপেনিং নাকি বন্ধ রয়েছে। এই খবরেরও কোন সত্যতা নেই। কারণ নভেম্বর মাসের ১০ দিনে এলসি ওপেন হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের জেরে গোটা বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। তাই পরিস্থিতি সামান্য একটু নাজুক রয়েছে। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, নতুন বছরের জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাহিদা আর সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। তাই আশা করাই যায়, বাংলাদেশে ব্যাংকের তারল্যে কোনো রকম সংকট দেখা দেয়নি এবং আগামী দিনে বাংলাদেশের কোন ব্যাংক বন্ধ হবে না। সব ব্যাংকেই জনগণের টাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ আছে। এমনটাই দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণ কোন মানুষ যাতে টাকা তুলতে এসে ব্যাংক থেকে খালি হাতে ফিরে না যান, সেদিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম