।। প্রথম কলকাতা ।।
International Mother Language Day: আজ ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যেই ভাষার অধিকার চেয়ে করা লড়াই থেকে জন্ম হয়েছে একটি রাষ্ট্রের। যেই ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন ওপারের ভাইয়েরা। এই ভাষা বাঙালির গর্ব। সাল ১৯৫২, তখনও বাংলাদেশ (Bangladesh) পূর্ব পাকিস্তান। বাংলা ভাষার অধিকার চেয়ে গর্জে ওঠে মানুষ। উর্দুকে (Urdu) জাতীয় ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বাঙালি। প্রাণ হারান বহু ছাত্র ও সমাজকর্মীরা। প্রথমে এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day) হিসেবে পালন করা হয়। আজ গোটা বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালন করা হচ্ছে, কিন্তু এর শিকড় লুকিয়ে রয়েছে ওপার বাংলায়। আর এই দিনটিকে স্মরণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের মনের কথা ব্যক্ত করেছেন তারকারা। তাঁরা নিজেদের লেখায় বুঝিয়েছেন এই দিনটির গুরুত্ব তাঁদের কাছে কতখানি।
অমর একুশের শুভেচ্ছা জানিয়ে চঞ্চল চৌধুরী (Chanchal Chowdhury) মায়ের ছবি পোস্ট করেন। সেইসঙ্গে ক্যাপশনে লেখেন, ‘মা….মাতৃভাষা….মাতৃভূমি……। সবাইকে মহান একুশে’র শুভেচ্ছা….ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা……’। এদিন ভাষা দিবসে মায়ের ছবি শেয়ার করে অভিনেতা বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর কাছে মাতৃভাষা মায়ের সমান। ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই, আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই…’ সকলের মন আজ এই গানটাই গাইছে। নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার মত শান্তি আর কোনও ভাষাতেই পাওয়া সম্ভব নয়। এই কথা উঠে এসেছে বহু গানে। যদিও বাংলা ভাষাকে (Bengali Language) স্বীকৃতি দিতে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল বাবুর বক্তব্য, ‘আজ ৭১ বছর পর যদি বাঙালিদের নতুন করে বোঝাতে হয় বাংলা ভাষার গুরুত্ব কী? তাহলে সেটা আমাদের কাছে ব্যর্থতা’।
তাঁর কথায়, ‘নিজের মাতৃভাষায় যত সহজে লোককে নিজের কথা বোঝাতে পারছি, তা কি অন্য ভাষায় পারা যেত? সম্ভব কি ছিল? সে যতই আমি অন্য ভাষা বলতে জানিনা কেন’। তাঁর প্রশ্ন, রাশিয়া, চিন, জাপান, জার্মানি সহ আরও অনেক জায়গার মানুষরা ইংরেজিতে (English) কথা বলতে খুব কমই চান। প্রয়োজন না পড়লে তাঁরা ইংরেজির ব্যবহার করতে চান না। নিজের ভাষা নিয়ে সেসকল মানুষরা লজ্জা পান না। আমরা কেন পাব? অভিনেতা বলেছেন, ‘এর পেছনে দায়ী কিছু পরিবার, কিছু মানুষজনই। কিছু মা-বাবারা চান তাঁদের সন্তান বাংলার জায়গায় ইংরেজি বলুক ভালো করে। আর এটাই বর্তমান প্রজন্মের জন্য কাল হয়েছে’। ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অভিনেতা জানিয়েছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আজকালকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে কতটা আবেগ থাকবে, তা নির্ভর করছে তাঁদের পরিবারের ওপর। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা ভাষা দিবসকে স্মরণ করে বুবলী (Shobnom Bubly) লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা আন্দোলনের সকল বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি’।
অন্যদিকে ওপার বাংলার বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) এই দিনটি উপলক্ষে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। যেখানে এই দিনটি তিনি আগে কীভাবে পালন করেছেন তার কথা জানিয়েছেন। নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘কখনও একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস বলতাম না। দিনটা এলে কেমন ঈদ ঈদ লাগতো। সারাদিন সাদা শাড়ি পরে রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে,শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে, গান গেয়ে, কবিতা পড়ে সময় কেটে যেতো। ভাষার জন্য যুদ্ধ করা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। আমরা অসাধারণ সব কাজ করেছি’। তিনি কখনোই সোজাভাবে কিছু বলেননি। এবারও তাঁর লেখায় সেটাই প্রকাশ পেয়েছে। লেখেন, ‘হঠাৎ একদিন যদি শুনি একুশে ফেব্রয়ারিতে শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া নিষেধ, গান গাওয়া নিষেধ,বই বেরোনো নিষেধ —অবাক হবো না’।
তসলিমার বক্তব্য, ‘বাংলা ভাষার লেখকদের বই নিষিদ্ধ করা হলেও যাঁরা চুপ করে থাকে, বাংলা ভাষার লেখকদের অন্যায়ভাবে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলেও যাঁরা চুপ করে থাকে, বাংলা ভাষার লেখকদের কুপিয়ে মেরে ফেলা হলেও যাঁরা চুপ করে থাকে — তাঁরা আজ শব্দ করে গাইছে ‘ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এক কথায় এদিন তাঁর লেখায় প্রতিবাদ সত্তা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, আগে যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি তিনি পালন করেছেন, তা কখনও ভুলবেন না। এদিকে দুই বাংলাতেই বেশ পরিচিত অভিনেত্রী মিথিলা (Rafiath Rashid Mithila) জানিয়েছেন, ‘বাংলা শুধু আমার ভাষা নয়, বাংলা আমার পরিচয়’।
তাঁর কথায়, ‘১৯৫২-র ভাষা আন্দোলনের কথা আমরা ছেলেবেলায় বইতে পড়েছি। খুব ছোট থেকেই বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের এই দিনটি নিয়ে পড়তে হয়। তাই অল্প বয়স থেকেই এর গুরুত্ব, এর মাহাত্ম্য জেনে বড় হয়েছি’। ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’য় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি শিল্পী হিসেবে একটি ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছি। শিশুদের জন্য বাংলায় গল্পের বই লিখতে শুরু করেছি। আজকাল কথা বলতে গেলে ইংলিশটা কেমন মিশে যায়। যদিও সেটা শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে। অনেকেই ইংরেজি স্কুল-কলেজে পড়ে থাকে। যে কারণে অনেকেই ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে শুধু ইংরেজি কেন কোরিয়ান ব্যান্ড, করিয়ান ড্রামা ভীষণ পরিচিতি পাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। কিন্তু এসবের মাঝে নিজের মাতৃভাষাটাকেও সঠিক ভাবে জানতে হবে, বলতে হবে, শিখতে হবে, পড়তে হবে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাটাও থাকতে হবে’।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম