।। প্রথম কলকাতা ।।
Hezbollah-Turkey: হিজবুল্লাহকে সাহস দিচ্ছে তুরষ্ক! ইসরায়েলের কী পরিণতি ? হিজবুল্লাহকে সাপোর্ট করতে চায় কারা? এবার সরাসরি মাঠে নামল তুরষ্ক, সাহায্য করবে হিজবুল্লাহকে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের লেবাননের প্রতি যেন আলাদাই ভালোবাসা। মধ্যপ্রাচ্যে নিজের জায়গা পাকা করার এটাই তো সময়, সেই সুযোগ কেনই বা হাতছাড়া করবে তুরস্ক? যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি তোতলাচ্ছে। ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর সংঘাত এড়াতে পশ্চিমারা কি তাহলে গা বাঁচাতে চাইছে? ইসরায়েলের সাথে শত্রুতা করেই আরব বিশ্বে মাথাচাড়া দিচ্ছে তুরস্ক। মুসলিম বিশ্বকে দিল বড় বার্তা।
* লেবাননে তুরস্কের বড় সুযোগ, কড়া ভাষায় টার্গেট করছে পশ্চিমাদের
যেন পুরনো শত্রুতা মেটানোর সুযোগ খুঁজছিল তুরস্ক। আর সেই সুযোগ পেয়েও গেল। লেবানন আর ইসরায়েলের উত্তেজনা শুরু হতেই জোর গলায় তুরষ্ক ঘোষণা করল, দাঁড়াবে লেবাননের পাশে। অর্থাৎ পুরোদমে সাপোর্ট করবে হিজবুল্লাহকে। আর এভাবেই তো বাড়ছে হিজবুল্লাহর শক্তি। এই যে বিগত কয়েকদিন ধরে বারংবার বলা হচ্ছে, আপনারাও নিশ্চয়ই শুনেছেন, ইসরায়েলের সাথে হিজবুল্লাহর যুদ্ধের পরিণতি খুব একটা সুখকর হবে না। হয়ত এই আশঙ্কা থেকেই এবার হুমকি দিল তুরস্ক।
কারণ কূটনৈতিক মহলও বলছিল, এই দুই পক্ষের যুদ্ধে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দল ভাগাভাগিটা শুরু হয়ে যাবে। তখন আর হিজবুল্লাহ একা থাকবে না। আর তার বড় প্রমাণ দিল তুরস্ক। এবার হিজবুল্লাহকে নানান ভাবে অবশ্যই সাহায্য করবে। কেউ কি ভেবেছিল, হিজবুল্লাহ এত সাপোর্ট পাবে? লেবাননকে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের একটা পিছিয়ে পড়া দেশ বলতে পারেন। অর্থনৈতিক সংকট আর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে জর্জরিত দেশটা। কিন্তু এই দেশটা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে একটা সময় কম টানাপোড়েন ছিল না। এর আগেও তুরস্ক নানান স্বার্থে লেবাননের পাশে দাঁড়িয়েছে। আবার সেই ঘটনার রিপিট দেখতে চলেছেন লেবাননে।
এরদোয়ান শুধু হিজবুল্লাহকে বড় আশ্বাসই দিলেন না, বরং অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আবার পশ্চিমা বিশ্বের দিকে। তাঁর কথায়, এই যে এত যুদ্ধ বাঁধছে, মধ্যপ্রাচ্যে এত উত্তেজনা, ইসরায়েল আর লেবানন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে, সবটাই নাকি হচ্ছে পশ্চিমাদের উস্কানিতে। এরদোয়ানের এত বড় দোষারোপ করার পরই, ওদিকে আবার নড়ে চড়ে বসেছে পশ্চিমারা। এই বিষয়টা থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতে, ফলাও করে বলে দিয়েছে, তারা এই যুদ্ধ চায় না। আর তারা এই যুদ্ধের সাথে যুক্তও নয়। কোন দেশগুলো বলেছে জানেন? শুনলে একটু অবাক লাগতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির মতো দেশ। প্রশ্নটা তো এখানেই। তাহলে কি, পশ্চিমারা এত বড় সংকট থেকে এবার বাঁচতে চাইছে? তারাও ওই যুদ্ধের ঝুট ঝামেলা আর চাইছে না? তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন,, ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতি রুখতে তার দেশ লেবাননের পাশে অবশ্যই দাঁড়াবে। আর সেই কথা তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে বলেও দিয়েছেন। সোজা কথায়, এরদোয়ানও এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
* মধ্যপ্রাচ্যের হুমকি ইসরায়েল, ভয় পাচ্ছে তুরষ্ক!
দেখুন, লেবানন আর ইসরায়েলের সীমান্তের অবস্থা কিন্তু একদমই ভালো নয়। লক্ষ্য করে দেখবেন, সেই গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত এই জায়গা। দিনের পর দিন উত্তেজনার পারদ আরও বাড়ছে, বই কমছে না। বিশেষ করে, রাত হলেই সীমান্তে বাড়ে ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলা। নেতানিয়াহু তো সরাসরি সর্বাত্মক যুদ্ধের কথা বলেই দিয়েছেন। অপরদিকে ফুঁসছে হিজবুল্লাহ। তারাও ইসরায়েলের হুমকি বিন্দুমাত্র বরদাস্ত করবে না। পুরোদমে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। আশঙ্কাটা তো এখানেই।
দেখুন, যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া সম্ভাবনাটাই বেশি। কারণ, কয়েকদিন আগেই নেতানিয়াহু এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে শিগগিরই ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অভিযান শেষ করবে। তারপর তাদের টার্গেট, হিজবুল্লাহ। হামাসের মিত্র। যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলি বাহিনী এগোবে, লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এর আগেও গাজা সংকটের সময় তুরস্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিল। শুধু কথা নয়, কাজেও করে দেখিয়েছেন এরদোয়ান। তার কথায়, ইসরায়েল আগ্রাসন চালাচ্ছে আর সেটা দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের এই সংঘাত বাড়ানোর যে প্রচেষ্টা, তা অত্যন্ত বিপ্পজনক। তুরস্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবশ্যই স্টেপ নেবে। আর নিচ্ছেও। সহজ ভাবে বললে, ইসরায়েলের সাথে আরও একধাপ শত্রুতা বাড়িয়ে ফেলল তুরস্ক।
একথা ঠিক যে, তুরস্ক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেশটা কোথাও গিয়ে একটু ভয়ও পাচ্ছে। কেনই বা পাবে না, কারণও আছে যথেষ্ট। এই যুদ্ধে সরাসরি পশ্চিমাদের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। মুখে যতই বলুক না কেন, তারা নিরপেক্ষ থাকবে। যুদ্ধে জড়াবে না। কিন্তু একবার যুদ্ধ বেঁধে গেলে, তখন এসব অলিখিত কথার কি কোনও দাম থাকবে? তাই তো তুরস্ক তার বার্তায় বলে দিয়েছে, আঞ্চলিক আর বৈশ্বিক শান্তির জন্য নাকি বড় হুমকি ইসরায়েল। আর সেই ইসরায়েলকে সতর্ক করার ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর ইসলামী বিশ্বের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।
যুদ্ধ নিয়ে কিন্তু উদ্বেগে নেই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি তুরস্ক। বার্লিন আর ওয়াশিংটন বলেছে, যুদ্ধ যদি আরও প্রসারিত হয় তার ফল কি হবে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তবে কি বলুন তো, পশ্চিমাদের নিয়ে তুরস্কের মনে সংশয়ের শেষ নেই। পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে, সেটা দুঃখ জনক বলেও জানিয়েছেন এরদোয়ান। এখানেই ক্ষান্ত থাকেননি, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছেন, যাতে প্রত্যেক দেশ লেবাননের পাশে এসে দাঁড়ায়। মোটামুটি সবাই বুঝতে পারছে, ইসরায়েল আর লেবাননের মধ্যে আর একটা যুদ্ধ মানেই তা আঞ্চলিক যুদ্ধের আকার নেবে। আর কূটনৈতিক পথে এই উত্তেজনা কমানোটা বড্ড দরকার। তাই যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি সাবধান করছে ঠিকই, কিন্তু যদি যুদ্ধ বাঁধে, হয়ত সত্যি হবে এরদোয়ানের আশঙ্কাটাই।
খেয়াল করে দেখুন, হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলের সংঘাতে কোনও দেশ বা কোনও আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রকাশ্যে এসে বলছে না, যে তারা ইসরায়েলের পাশে থাকবে। কিন্তু হিজবুল্লাহর পাশে থাকার জন্য বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী থেকে শুরু করে বেশ কিছু দেশ আশ্বাস দিচ্ছে। খটকাটা তো এখানেই। তাহলে কি ইসরায়েলকে হারাতে অনেকেই মনে মনে শত্রুতা পুষে রেখেছিল? সুযোগ পেতেই, তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। যেখানে বড় মাধ্যম হিজবুল্লাহ। আপনার কী মনে হয়? আপনার মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
* মধ্যপ্রাচ্যে পাকা হচ্ছে তুরস্কের জায়গা, স্বপ্ন পূরণের পথে এরদোয়ান
আচ্ছা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কেন এত গুরুত্ব দেওয়া হয় তুরস্ককে? কেনই বা অন্যান্য দেশগুলোর সংকটের সময় তুরস্ক আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে চায়? এর পিছনেও কারণ তো নিশ্চয়ই রয়েছে। সেখানেও কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই পশ্চিমাদের সাথে শত্রুতার সম্পর্কটাই উঠে আসবে। এই এরদোয়ান সম্পর্কে কিছু কথা বলে রাখা ভালো। ইনি কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও এক পায়ে প্রস্তুত। এর আগেও তাই করেছেন। লেবানন ইস্যুরকে কেন্দ্র করেই ফাটল ধরেছিল ফ্রান্স আর তুরস্কের সম্পর্কে। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রান্সের নীতিকে অস্থিতিশীল বলে সমালোচনা করেছিলেন তিনি। কড়া ভাষায় ফ্রান্সকে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে লেবাননকে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে নাকি ফ্রান্স। আর গত বছরই তো এরদোয়ান হুমকি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে তিনি ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। আসলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের তিক্ত সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্ক বহুদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে। হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২৪ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের যোগদানের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ছিল তুরষ্ক। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন আর আইনের শাসনের প্রতি সম্মানের বিষয়ে, ব্লকের উদ্বেগের কারণে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে তার যোগদানের আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়। যার কারণে এমনি থেকেই ইউরোপের দেশগুলোর উপর বেশ ক্ষেপে আছেন এরদোয়ান। তাই যখনই মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঝামেলা হয়, সংঘাত বাঁধে, তখনই যেন তিনি ফোঁস করে ওঠেন।
আর যদি বলেন, মুসলিম বিশ্বের কাছে কিংবা আরব দুনিয়ায় তুরস্কের বলা কথা গুলোকে এত গুরুত্ব কেন দেয়া হচ্ছে? আসলে, এখন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ রাজনীতি যাচ্ছে একটা বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। বহু দেশ ইসরায়েলকে শত্রু বলে মনে করলেও, আরব বিশ্বের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান, ওমান, মরক্কোর মতো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলতে পারেন, এটা এক ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ইরান ভীতি থেকেই তারা এটা করছে। কিন্তু সমস্যাটা হল, এই আরবদের মধ্যে হঠাৎ তুরস্কের উত্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় মাথা ব্যথার কারণ। তুরস্ক আবার রয়েছে ইরানের পক্ষে। বলে রাখা ভালো, এই তুরস্কই কিন্তু প্রথম মুসলিম দেশ যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে দেখুন, ইসরায়েল আর তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এমনকি অর্থনৈতিক সম্পর্কও তলানিতে। বহু আরব রাষ্ট্র তুর্কিদের উত্থান খুব একটা ভালো চোখে দেখেনা। যার কারণে তুরস্ক নিজের জায়গা ধরে রাখতে, আরো বেশি করে সচেষ্ট। নিজের ক্ষমতা তো বাড়াচ্ছেই, উল্টে জড়িয়ে পড়ছে বিশ্ব রাজনীতিতে। ধীরে ধীরে আরব দেশে বাড়ছে তুরস্কের গ্রহণযোগ্যতা । আর এই পুরো কার্যক্রমের পিছনে সব থেকে বড় ভূমিকা রয়েছে এরদোয়ানের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম