।। প্রথম কলকাতা ।।
Supriya Choudhury: বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। বিনোদন জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের কাজ দিয়ে দর্শকদের মন জিতেছেন। তাঁর আসল নাম কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পরিচিতি পেয়েছেন সুপ্রিয়া দেবী নামে। ১৯৩৩-এর ৮ জানুয়ারি বার্মায় জন্ম হওয়া কৃষ্ণা, আজ হাজারো মানুষের মনের মনিকোঠায় বিরাজ করেন।
বাবা গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মায় বসবাসকারী অনেকে ভারতে চলে আসে। সেই সময় ভারতে আসেন সুপ্রিয়া দেবীর পরিবারও। শেষে দক্ষিণ কলকাতায় বসবাস শুরু করেছিলেন তাঁরা। ১৯৫৪-তে বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবীর বিয়ে হয়। তাঁদের কন্যার নাম সোমা। তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়েছে উত্তম কুমারের সঙ্গে। জন্ম আর বড় হওয়া বার্মাতে, তাই ছোট থেকেই ডাকাবুকো ছিলেন অভিনেত্রী। ১৯৪৮-এ তাঁদের পরিবার কলকাতায় আসে। গুরু মুরুথাপ্পান এবং পরবর্তীতে গুরু প্রহ্লাদ দাসের কাছে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১৯৫২-তে নির্মল দে পরিচালিত এবং উত্তম কুমার অভিনীত ‘বসু পরিবার’ চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। তবে তার আগে মাত্র ৭ বছরে দু’টি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
পরে ‘প্রার্থনা’, ‘শ্যামলী’, ‘সোনার হরিণ’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে দর্শকদের কাছে। উত্তম কুমারের সঙ্গে বেশিরভাগ ছবিতেই দেখা দিয়েছে সুপ্রিয়া দেবীকে। ‘কোমল গান্ধার’, ‘স্বরলিপি’র মতো চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় ছাপ ফেলেছে দর্শকদের মধ্যে। ১৯৭৩-এ ‘সন্ন্যাসী রাজা’য় দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে এটা আফসোসের জায়গা যে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’র ‘নীতা’ কিংবা ‘কোমল গান্ধার’-এর প্রতিবাদী নাট্যাভিনেত্রী অনুসূয়ার জন্য কোনও স্বীকৃতি পাননি তিনি। তাঁর জনপ্রিয় একটি সংলাপ আজও বাঙালি মনে রেখেছে, ‘দাদা আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম’। এই কটি শব্দতেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির সমস্ত ভাবাবেগ প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁর অভিনয় জীবনের এই দুটি চরিত্র বাংলা সিনেমায় আইকনিক হয়ে গিয়েছে।
আর বেশিরভাগ চরিত্রে তিনি হয় গ্ল্যামারস নায়িকা, নয়তো সাধারণ মেয়ের ভূমিকায় ধরা দিয়েছেন। তবে সহ অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বাঙালিয়ানা আর সৌন্দর্যতার কাছে একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ‘দেবদাস’ ছবিতে পারোর পরিবর্তে চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করেও, তিনি প্রমাণ করেছেন তাঁর অভিনয় প্রতিভা। সেভাবে কমেডি করতে না পারলেও, হাই সোসাইটির মহিলার চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য ছিলেন। ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘অয়নান্ত’, ‘সুরের পিয়াসী’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘বিষকন্যা ‘ছবিগুলিতে তাঁর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে। তবে অনেকবার শোনা গিয়েছে, সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেন তাঁকে কাজ করার জন্য ডাকেননি, বলে আক্ষেপ ছিল। তবে অভিনয় দুনিয়ায় জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক সমালোচনাও হয়েছে তাঁকে নিয়ে।
‘থার্ড ওম্যান’, ‘রক্ষিতা’, ‘উত্তমসঙ্গিনী’র মতো বাড়তি কিছু শব্দ মাঝেমধ্যেই তাঁর সঙ্গে বিশেষণ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। তবে সমস্ত লাঞ্ছনা-বঞ্চনার মাঝেও ‘বেণু দি’ ডাকের দরুন সম্মানও পেয়েছেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির মহানায়কের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে বহু কথা চর্চিত আছে। কিন্তু সেসব ছাড়া নিজের যোগ্যতায় নিজের মাটি ধরে রেখেছিলেন। অনেকের বক্তব্য, যে সময়টুকু তিনি উত্তম আবেগে ভাসিয়েছেন, সেটি নিজেকে দিলে আরও ভালো ছবি তাঁর কাছ থেকে উপহার পেতেন দর্শকরা। ক্লাসিক্যাল নৃত্যের তালিম নিয়েছিলেন, তাঁর ন্যাচারাল অ্যাক্টিং করার ক্ষমতা ছিল। বাংলা সিনেমায় এক নতুন ধারা এনেছেন তিনি। ২০১৮-র ২৬ জানুয়ারি এই অভাবনীয় প্রতিভাকে হারিয়েছে বাঙালি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম